১৬ জেলায় ৩৫ জনের প্রাণহানি !

Spread the love

শরিফুল হাসান

আবহাওয়া দপ্তরকে জবাব দিতেই হবে। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের কারণে আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত দেশের ১৬ জেলায় ৩৫ জনের প্রাণহানি হয়েছে। তাদের জন্য শোক। তবে ওপরওয়ালাকে ধন্যবাদ আরো ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে তিনি আমাদের রক্ষা করেছেন।

তবে এই ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাসে আবহাওয়া অধিদপ্তররের দক্ষতা ও গণমাধ্যমের প্রতিবেদন নিয়ে আলোচনা জরুরী। বিষয়টা সামনে এনেছেন স্বাধীন আবহাওয়াবিদ কানাডা প্রবাসী বাংলাদেশি মোস্তফা কামাল পলাশ। তিনি দেশের আবহাওয়াবিদদের সঙ্গে এ নিয়ে প্রকাশ্যে আলোচনার দাবি জানিয়েছেন। আমিও একই দাবি জানাচ্ছি।

Mostofa Kamal Palash নামের এই মানুষটার সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত পরিচয় নেই। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক এই পিএইচডি গবেষককে নিজেকে স্বাধীন আবহাওয়াবিদ বলেন। ঝড় বৃষ্টি বিষয়ক নানা বিষয় জানার জন্য ফেসবুকে আমি নিয়মিত তাঁর লেখা পড়ি।

বছর দুয়েক আগে আম্পান ঝড়ের সময় পূর্ভাভাস নিয়ে তাঁর একটা লেখার কথা বেশ মনে আছে। সেই লেখার শুরুটা ছিলো এমন, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় যত ঘণ্টা আগে পূর্বাভাস দেওয়া যাবে, মানুষ তত বেশি প্রস্তুতি নিতে পারবে।

পূর্বাভাস যদি সাগর থেকে জেলেদের ফেরার বা ফসল বাঁচানোর সময় না দেয়, তাহলে অনেক মৃত্যু ও ক্ষয়ক্ষতি অনেক হয়। এই যে সিত্রাংয়ে ৩৫ জন মারা গেলেন তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আটজনই মারা গেছেন সন্দ্বীপ চ্যানেলে বালু তোলার ড্রেজার ডুবে। আমার মনে হয় পূর্বাভাস আরো আগে পেলে কী এই আটজন মানুষ বাঁচতে পারতো?আলোচনাটা জরুরী কারণ আমার নিজের পর্যবেক্ষণে মনে হয়েছে আমাদের আবহাওয়া অধিদপ্তর যথাসময়ে এই ঝড়ের বিষয়ে সতর্কতা তৈরি ও প্রচারে আরো দায়িত্বশীল হতে পারতো।

একইভাবে রাষ্ট্রীয় ও বেসরকারি গণমাধ্যমে সিত্রাংয়ের বিষয়টা জোর আলোচনায় এসেছে গত ২-৩ দিন। অথচ মোস্তফা কামাল পলাশ ৮ অক্টোবর থেকে গত দুই সপ্তাহ ধরে অব্যাহতভাবে ঝড়ের বিষয় পর্যবেক্ষণ দিয়ে যাচ্ছেন এবং তাঁর প্রায় সব কথাই পুরোপুরি সঠিক হয়েছে। আমি নিজে তাঁর লেখাগুলো শেয়ার করেছি।

তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা। আমার শুধু প্রশ্ন একটাই, একজন ব্যক্তি যদি স্যাটেলাইট আর নানা সূত্র ধরে সব সঠিকভাবে বলতে পারেন আমাদের আবহাওয়া অধিদপ্তর কেন পারবে না? সবচেয়ে বিস্ময়কার ব্যাপারটা হলো আবহাওয়া অধিদপ্তরের সূত্র দিয়ে এই দেশের অনেক গণমাধ্যম লিখেছে সিত্রাং মঙ্গলবার সকাল থেকে সন্ধ্যার মধ্যে যে কোন সময়ে বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে। অথচ বাস্তবতা আমরা সবাই জানি। গতকাল রাতেই এই ঝড় শেষ। মোস্তফা কামাল পলাশ তাঁর নিজের ফেসবুকে লিখেছেন, আবহাওয়া-বিদদের মনগড়া পূর্বাভাস দেওয়া বা বলার স্বাধীনতা থাকা উচিত না।

বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তর ঘূর্ণিঝড়ের উপকূলে আঘাতের সময় ও দিনের যে কথা বলেছেন বিশেষজ্ঞদের করার পূর্বাভাসের সঙ্গে তা মেলে না। বাংলাদেশের গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের এ নিয়ে প্রশ্ন করা উচিত। মোস্তফা কামাল পলাশ লিখেছেন, আবহাওয়া-বিদরা ভুল করে না; পূর্বাভাস ভুল হয় না এমন না।

তবে একজন আবহাওয়া গবেষক ও অ্যামেচার অবহাওয়াবিদ হিসাবে দায়িত্ব নিয়ে বলতে চাই, ঘূর্ণিঝড় চিত্রাং স্থল ভাগে আঘাত করার কমপক্ষে ৭২ ঘণ্টা আগেই বিশ্বের সকল আবহাওয়া পূর্বাভাস নির্দেশ করেছে যে ঝড়ের অগ্রভাগ সোমবার সকাল ৯ টার পর থেকে বিকেল ৬ টার মধ্যেই উপকূলীয় এলাকায় আঘাত করা শুরু করবে।

ঝড়ের কেন্দ্র বিকেল ৬ টা থেকে রাত ১২ টার মধ্যে উপকূলীয় এলাকার উপর দিয়ে অতিক্রম করবে। ফেছনের অংশ সোমবার দিবাগত রাত ১২ টা থেকে ভোর ৬ টার মধ্যে উপকূলীয় এলাকার উপর দিয়ে অতিক্রম করবে। বিশ্বের একটা আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেলও নির্দেশ করে নাই যে ঘূর্ণিঝড় চিত্রাং মঙ্গলবার সকাল থেকে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হানবে।

তাহলে কীসের ভিত্তিতে বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তর সেই কথা বললো? গণমাধ্যম্য কেন সেই ভুল প্রচার করলো। দেশের জনগনের স্বার্থে মোস্তফা কামাল পলাশ এ নিয়ে বাংলাদেশ টেলিভিশনে সরাসরি বিতর্ক অংশগ্রহণের জন্য আবহাওয়া অধিদপ্তরকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। আমি মনে করি এই বিতর্ক ও আলোচনা খুব জরুরী। আমাদের রাষ্ট্রীয় সব প্রতিষ্ঠানের এমন বেহাল দশা কেন?

আর কতোদিন এমন কথা শুনবো, “সারাদেশের কোথাও কোথাও আজ দমকা হাওয়া থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত, ঝড়ো হাওয়া, আংশিক রোদ বয়ে যেতে পারে”। এখন তো সুনির্দিষ্ট তথ্যের যুগ।না কারো সমালোচনা করতে নয়, এই যে এত কথা লিখি শুধুমাত্র এই দেশ আর মানুষের মঙ্গলের জন্য।

আচ্ছা একজন ব্যক্তি যদি প্রযুক্তি ব্যবহার করে সব সঠিকভাবে বলতে পারে আমাদের আবহাওয়া দপ্তর কেন পারবে না? প্রয়োজনে তাদের দক্ষতা বাড়ানো হোক। তারা তাদের সীমাবদ্ধতা ও সম্ভাবনাগুলো বুঝুক। আমাদের মনে রাখতে হবে এমন ঝড় বাংলাদেশ বারবার আসবে। কাজেই আমাদের সঠিক সময়ে সঠিক তথ্য জানতে হবে জানাতে হবে। আশা করছি আমাদের নীতি নির্ধারকেরা ভাববেন। কারণ ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় যত ঘণ্টা আগে সঠিক পূর্বাভাস দেওয়া যাবে, মানুষ তত বেশি প্রস্তুতি নিতে পারবে। ততো বেশি প্রাণ বাঁচবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.