শরিফুল হাসান
জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হারানোর দিন আজ! ১৯৭১ সালে এই জাতি যখন বিজয়ের খুব কাছে সেই সময় পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগিতায় রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনী এই দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের ধরে ধরে হত্যা করে। হত্যা মানে নৃশংসতম ও বর্বরোচিত এক হত্যাযজ্ঞ। বাঙালি শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, চিকিৎসক, বিজ্ঞানী, আইনজীবী, শিল্পী, দার্শনিক ও রাজনৈতিক চিন্তাবিদগণকে চোখ বেঁধে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে ভয়াবহভাবে নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়।
স্বাধীনতার পর ঢাকার মিরপুর, রায়েরবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে গণকবরে তাদের মৃতদেহ পাওয়া যায়। ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পর নিকট আত্মীয়রা মিরপুর ও রাজারবাগ বধ্যভূমিতে স্বজনের মৃতদেহ সনাক্ত করেন।মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে একটি গণকবর অনেকের দেহে আঘাতের চিহ্ন, চোখ, হাত-পা বাঁধা, কারো কারো শরীরে একাধিক গুলি, অনেককে হত্যা করা হয়েছিল ধারালো অস্ত্র দিয়ে জবাই করে।
১৯৭১ সালের ২৭ ডিসেম্বর দৈনিক আজাদের একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের হত্যার পরিকল্পনাটি পূর্বেই করা হয় আর এতে সহায়তা করে জামায়াতে ইসলামী ও এর ছাত্র সংগঠন ছাত্রসংঘ।
এ হত্যাকাণ্ডে সবচেয়ে সক্রিয় ছিলেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আসলাম, ক্যাপ্টেন তারেক, কর্ণেল তাজ, কর্ণেল তাহের, ভিসি প্রফেসর ডঃ সৈয়দ সাজ্জাদ হোসইন, ডঃ মোহর আলী, আল বদরের এবিএম খালেক মজুমদার, আশরাফুজ্জামান ও চৌধুরী মাইনুদ্দিননরা। পুরো হত্যাকাণ্ডের নেতৃত্ব দেন মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী।
প্রাদেশিক সরকারের উপদেষ্টা এই মেজর জেনারেল আলবদর ও আলশামসের কেন্দ্রীয় অধিনায়কদের সঙ্গে বসে চূড়ান্ত তালিকা করেন। এরপর ১৯৭১ সালের ১০ থেকে ১৪ ডিসেম্বরের মধ্যে রাজাকার, আল বদর, আল শামস বাহিনীর সদস্যরা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করে তাদের হত্যা করে। এই রাজাকারেরা আজও নানাভাবে সক্রিয় এই দেশে।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় আসার পরপরই বুদ্ধিজীবী নিধন তদন্ত কমিশনের প্রাথমিক রিপোর্টে বলা হয়, রাও ফরমান আলী এদেশের সব বুদ্ধিজীবীদের গভর্নর হাউজে নিমন্ত্রণ করে নিয়ে হত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন।
বুদ্ধিজীবী তদন্ত কমিটির প্রধান জহির রায়হান বলেছিলেন, ‘এরা নির্ভুলভাবে বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদেরকে বাছাই করে আঘাত হেনেছে’। আফসোস ১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি জহির রায়হানকেও হত্যা করা হয়।
সাংবাদিকতার কারণে নানা সময়ে এই বুদ্ধিজীবীর সন্তানদের সাথে কথা বলে, তাদের লড়াই আর বুকের ভেতরের কষ্ট দেখে আরও কষ্ট লাগতো। আফসোস বুদ্ধিজীবী হত্যাকারী ও তাদের সহযোগীদের অধিকাংশের বিচার হয়নি।
ফলে ইনিয়ে বিনিয়ে তাঁরা রাজনীতি করে। এই দেশের সব মানুষের বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের উচিত আমাদের মুক্তিযুদ্ধ আর বুদ্ধিজীবী হত্যার সব ইতিহাস জানা। আজ ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের সকালে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণ করছি। যতোদিন এই বাংলাদেশ থাকবে আপনারাও থাকবেন আমাদের হৃদয়ে।