রাজধানীর ১৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমি বেদখল

Spread the love

শরিফুল হাসান

রাজধানীর কাপ্তানবাজারের খোদাবক্স সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি এখন অতীত। স্কুলটি বন্ধ করে দিয়ে ছাগলের হাট আর পশু জবাইখানা বানানো হয়েছে। স্কুলের সরকারি জমিও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দখলে চলে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।রাজধানীর অন্তত ১৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শতকোটি টাকার সরকারি জমি এখন বেদখলে। বিদ্যালয়ের জমিতে ভবন, দোকান, ঘর এমনকি বস্তি পর্যন্ত তুলে ভাড়া দেওয়া হয়েছে।আবার কয়েকটি স্থানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনও দখল হয়ে গেছে। স্থানীয় মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সমিতি ও সংগঠন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন দখলে রেখেছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সাময়িক অনুমতি নিয়ে ভবনে এসে তারা আর দখল ছাড়ছে না।পুরান ঢাকার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে আবার ভিন্ন চিত্র দেখা যায়। বিয়ে বা সামাজিক অনুষ্ঠানের জন্য স্কুল প্রাঙ্গণ ও ভবন ভাড়া দেওয়া হচ্ছে।জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ইন্দু ভূষণ দেব প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকারি কয়েকটি বিদ্যালয়ের জমি দখলমুক্ত করার জন্য জেলা প্রশাসককে জানিয়েছি। একটি বিদ্যালয়ের জমি উদ্ধারও করা হয়েছে। বাকি জমিগুলো উদ্ধারের জন্য আমরা তৎপর আছি।’ বেদখলে থাকা জমির দাম শতকোটি টাকারও বেশি বলে জানান তিনি।জমি দখল হয়ে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব এম এম নিয়াজউদ্দিন বলেন, যেসব বিদ্যালয়ের জমি দখল হয়ে গেছে, সেগুলো উদ্ধারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে কয়েকটির জমি উদ্ধারও হয়েছে। স্কুলগুলোতে সীমানাপ্রাচীর দেওয়ার উদ্যোগও নেওয়া হচ্ছে।ঢাকায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ২৯৫টি। প্রথম আলোর পক্ষ থেকে এক মাস ধরে রাজধানীর সরকারি স্কুলগুলো ঘুরে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এ সময় অন্তত ১৫টি স্কুলের জমি ও ভবন দখলের তথ্য মিলেছে। বাকি স্কুলগুলোর অবকাঠামো মোটামুটি ভালো, এখানে দক্ষ শিক্ষকও রয়েছেন। কিন্তু উচ্চ, মধ্যবিত্ত ও শিক্ষিত পরিবারের লোকজন তাঁদের সন্তানদের এসব স্কুলে পাঠান না। ফলে এগুলো অবহেলিত থেকে যাচ্ছে। এ রকম পরিস্থিতিতে সরকার সম্প্রতি সারা দেশের আরও ২৬ হাজার ১৯৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করেছে।এম এ আলীম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়: ১৯৫২ সালে প্রতিষ্ঠিত ওয়ারীর এই স্কুলের ১১ শতাংশ জমির মধ্যে ৫ শতাংশই দখল হয়ে গেছে। দখল করা জমিতে উঠেছে পাঁচতলা একটি ভবন।স্কুলের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আবুল খায়ের প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী কিছু লোক ওই জমি দখল করে বিক্রি করে দেয়। এই জমি নিয়ে আমরা মামলা করেছি। আমি একা ১৩ বছর মামলা লড়েছি। স্থানীয় কমিশনারসহ সবাই দখলদারদের পক্ষে ছিলেন। একসময় স্কুল জমির স্বত্ব ফিরে পায়। কিন্তু জমি আর দখলে নেওয়া যায়নি। এখন সেখানে দোকানসহ পাঁচতলা ভবন উঠে গেছে। এটি অনাচার ছাড়া আর কিছুই নয়।’ব্রাহ্মণচিরণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়: ডেমরার ব্রাহ্মণচিরণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মোট জমির পরিমাণ ৩৯ শতাংশ। বিদ্যালয়ের মূল ভবন বাদে ৩১ শতাংশ জায়গাই বেদখলে। সরেজমিনে দেখা গেছে, দখল করা জায়গায় টিনের ঘর তুলে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। সেখানে স্থায়ী ভবন নির্মাণের প্রক্রিয়াও চলছে।বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা জানান, ২০০৮ সালে এই দখল-প্রক্রিয়া শুরু হলে প্রধান শিক্ষক আদালতের আশ্রয় নেন। আদালত এখানে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ দেন। কিন্তু এ বছরের ১০ আগস্ট দখলদার দেলোয়ার হোসেন ও সাজু স্থায়ীভাবে জমি দখলের উদ্দেশ্যে সেখানে নির্মাণকাজ শুরু করেন।ডেমরা থানা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জিন্নত আলী বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, স্কুলটি দখল করার জন্য দখলদারেরা নানাভাবে চেষ্টা করছে। তারা প্রধান শিক্ষককে ভয় দেখাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের মারধর পর্যন্ত করছে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।শাহীন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়: মোহাম্মদপুরের টাউন হল-সংলগ্ন ৩৬ শতাংশ জায়গার ওপর ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এই স্কুল। ১৯৭৩ সালে সরকারীকরণ হয় এটি। এই স্কুলের ৩৬ শতাংশ জায়গার মধ্যে ৩১ শতাংশই দখল হয়ে গেছে। সেখানে এখন ভবন তৈরি করে বসবাস করছে আটকে পড়া পাকিস্তানিরা।সরেজমিনে দেখা গেছে, স্কুলটির প্রবেশপথে একটি বড় ডাস্টবিন। স্কুলের রাস্তায় বসেছে বাজার। এখান দিয়ে কারও হাঁটার উপায় নেই। স্কুলের প্রবেশপথ দিয়েই বাইরের লোকজন যাওয়া-আসা করছে। স্কুলটির ৬ শতাংশ জায়গাজুড়ে চারতলা ভবন। বাকি ৩১ শতাংশ জায়গা দখল করে সেখানে অনেক বস্তি ও ভবন তোলা হয়েছে। স্কুল ভবনের দুই হাত দূরত্বেই এসব ভবন।স্কুলের একজন শিক্ষক জানান, এসব ভবনে সব সময় লোকজন বসে থাকে। তাদের যন্ত্রণায় নারী শিক্ষকেরা ক্লাস পর্যন্ত নিতে পারেন না। মোহাম্মদপুর থানা শিক্ষা কর্মকর্তা শাহানা আহমেদ বলেন, ‘স্কুলের লেখাপড়ার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে দখল করা জমি পুনরুদ্ধার করা দরকার। আমরা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাসহ জেলা প্রশাসনকে বিষয়টি অনেকবার জানিয়েছি। লাভ হয়নি।’কামরাঙ্গীরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়: এই স্কুলের শিক্ষার্থী এক হাজারের বেশি। স্কুলের ৪২ শতাংশ জমির মধ্যে সাড়ে ১০ শতাংশ বেদখলে। সেখানে ভবন নির্মাণ চলছে। আরও ১৮ শতাংশ জমি দখলের চেষ্টা চলছে। প্রধান শিক্ষক আবদুল মান্নান জানান, স্থানীয় প্রভাবশালী শহিদুল্লাহ ও তাঁর লোকজন স্কুলের জমিতে ভবন তৈরি করছে।স্থানীয় লোকজন জানান, শহিদুল্লাহর পূর্বপুরুষেরা স্কুলের জন্য ওই জায়গা দেন। ১৯৭৩ সালে স্কুলটি সরকারীকরণ হয়। কিন্তু দীর্ঘদিন পর ২০০৩ সালে এসে অন্যায়ভাবে ওই জমি দখলের চেষ্টা করেন শহিদুল্লাহ ও তাঁর পরিবারের লোকজন। এ নিয়ে মামলাও হয়েছে। শহিদুল্লাহর দাবি, তিনি আইনিভাবেই জমি ফেরত পেয়েছেন। জমি দখলমুক্ত করতে জেলা প্রশাসককে জানানো হলেও কাজ হয়নি।গেন্ডারিয়া মহিলা সমিতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়: ১৯৫০ সালে প্রতিষ্ঠিত এই স্কুলের মোট জমি ৩৭ দশমিক ৭৬ শতাংশ। কিন্তু স্কুলের দখলে আছে মাত্র ১২ শতাংশ। বাকি ২৫ শতাংশই ‘সীমান্ত খেলাঘর আসর’ নামের একটি সংগঠনের দখলে। আর স্কুলের সামনে ছয়টি দোকান ও জমি দখল করে রেখেছে গেন্ডারিয়া মহিলা সমিতি।প্রধান শিক্ষক রিয়াজ রহমান বলেন, স্কুলে শিক্ষার্থী এক হাজার ৩২৭ জন। অথচ একটি পাকা ও একটি টিনের ছাউনি ঘরে শ্রেণীকক্ষ মাত্র আটটি। এখানে গাদাগাদি করে সবাইকে বসতে হয়।শেরেবাংলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়: ১৯৭৩ সালে জাতীয়করণ হওয়া ১৯৬ শতাংশ জায়গার ওপর প্রতিষ্ঠিত এই স্কুলের ৩৩ শতাংশ জায়গা দখল হয়ে গেছে। সেখানে বস্তি বানিয়ে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। জাহাঙ্গীর নামের এক ব্যক্তি তাঁর পূর্বপুরুষের জমি দাবি করে ওই জায়গা দখল করে রেখেছেন।প্রধান শিক্ষক আম্রপলী বসাক বলেন, ‘জাহাঙ্গীরের কাছে কোনো কাগজপত্র না থাকলেও বারবার মামলা করেন। আদালতের রায়ও তাঁর বিপক্ষে গেছে। তবু তিনি স্কুলের দখল ছাড়েননি।’কাজীফরি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়: মিরপুরের এই স্কুলের নামে এক একর ৮৫ শতাংশ জমি থাকলেও বিদ্যালয় ভবনের কয়েক শতাংশ জমি বাদে পুরোটাই বেদখলে। ফলে মাত্র পাঁচটি শ্রেণীকক্ষ নিয়ে কোনোমতে চলছে স্কুলটি।বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেম জানান, স্থানীয় জমশের আলী, মর্তুজা, কালা মিয়া এবং তাঁদের ভাইয়েরা এই জমি দখল করে রেখেছেন। বারবার বলার পরও তাঁরা দখল ছাড়েননি।সামাজিক শিক্ষাকেন্দ্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়: ১৯৬২ সালে বেইলি রোডে প্রতিষ্ঠিত এই স্কুলের অবস্থা একেবারেই করুণ। স্কুলের চার কাঠা জায়গা বেদখলে। আধা পাকা বিদ্যালয় ভবনের ছাদে ত্রিপল দিয়ে বৃষ্টি ঠেকানো হয়েছে। দখলের কারণে এ স্কুলের শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে এখন ৫০-এ ঠেকেছে। গাইড হাউস এই জায়গা দখল করেছে বলে অভিযোগ করেছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।প্রধান শিক্ষক রওশন আরা বেগম বলেন, ‘আমরা কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার জানানোর পরও দখলমুক্ত করা যাচ্ছে না। আমরা নিজেরা স্কুলে ঢুকতে পারি না। নানাভাবে আমাদের ভয় দেখানো হয়।’ গাইড হাউস অ্যাসোসিয়েশনের কমিশনার ফুলরানী সরকার বলেন, ‘আমরা স্কুলের জায়গা দখল করিনি। এই জায়গা আমাদের। আমাদেরই একটি প্রকল্প ছিল ওই স্কুল। পরে সেটি জাতীয়করণ করা হয়। কাজেই যে অভিযোগ করা হচ্ছে, তা মিথ্যা।’বাংলাবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়: পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী এই স্কুল ১৯৭০ সালে প্যারিদাস লেনের একটি বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ১৯৭৩ সালে ওই বাড়িসহ বিদ্যালয়ের জমি সরকারীকরণ হয়। কিন্তু এখন বাড়ির মালিক চলে যেতে বলছেন।সরেজমিনে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠাকালীন পুরোনো জরাজীর্ণ ভবনেই ক্লাস চলছে। বিদ্যুৎ চলে গেলে নেমে আসে অন্ধকার। স্কুলে কোনো টয়লেট নেই।প্রধান শিক্ষক আবদুল ওয়াদুদ বলেন, পুরোনো এই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের ছাদ ধসে ২০১০ সালে শিক্ষকসহ তিনজন আহত হন। এর পর থেকে শিক্ষার্থীর সংখ্যা দিন দিন কমে আসছে। বাড়িটি সংস্কার করতে ৭০ হাজার টাকা অনুমোদন করেছে সরকার। কিন্তু জমিদাতা নির্মাণকাজ করতে দিচ্ছেন না, উল্টো স্কুলটি এখান থেকে সরিয়ে নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। বিষয়টি থানা শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে।নাজিরাবাজার সরকারি প্রাথমিক বালিকা বিদ্যালয়: ১৯৪১ সালে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ হয় ১৯৭৩ সালে। কিন্তু এখন এই স্কুলের কোনো নামফলক নেই। সেখানে বড় করে ঝুলছে ‘নাজিরাবাজার উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়’ এর নাম। কেবল নামফলকই নয়, স্কুলের ১০ শতাংশ জায়গার প্রায় পুরোটাই দখল করে নিয়েছে বেসরকারি এই স্কুল।প্রধান শিক্ষক আবু সাঈদ বলেন, ‘বালিকা বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নানাভাবে আমাদের হুমকি দিচ্ছে। তারা আমাদের স্কুল ছেড়ে চলে যেতে বলছে।’ জানতে চাইলে বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফরিদউদ্দিন বলেন, ‘মূল মালিকই আমাদের এই জায়গা দিয়েছেন।’ শ্রেণীকক্ষ অনুষ্ঠানের জন্য ভাড়া দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি স্কুলে ছয়জন শিক্ষক ও দুজন কর্মচারী নিয়োগ দিয়েছি। তাঁদের বেতনের টাকা তুলতে মাঝেমধ্যে অনুষ্ঠান করতে হয়।’এফ কে এম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়: পুরান ঢাকার বংশালের ঐতিহ্যবাহী এই স্কুল ১৯৭৩ সালে জাতীয়করণ হয়। এই স্কুলের চারতলা ভবনের তিনটি তলাই দখল করে রেখেছে বংশাল বালিকা উচ্চবিদ্যালয়।এলাকাবাসীর ভাষ্য, দখল করলেও বেসরকারি ওই বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পাঠদানে আগ্রহ কম। তারা জায়গাটি কমিউনিটি সেন্টার হিসেবে ভাড়া দিচ্ছে। এসব কারণে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।প্রধান শিক্ষক কাজী লায়লা আক্তার বলেন, ‘স্কুলের নিচতলায় আমাদের ক্লাস। সেখানেই অফিস। ফলে ছেলেমেয়েদের ক্লাস করতে অনেক কষ্ট হয়। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বারবার বিষয়টি জানিয়েছি।’সুরিটোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়: ১৯২৭ সালে প্রতিষ্ঠিত পুরান ঢাকার সুরিটোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বর্তমানে শিক্ষক ১৫ জন। আর শিক্ষার্থী প্রায় ৯০০। কিন্তু স্থায়ী শ্রেণীকক্ষ মাত্র দুটি। এর কারণ, স্কুলের দুটি ভবনের মধ্যে একটি দখল করে নিয়েছে ‘রমনা রেলওয়ে’ নামের একটি বেসরকারি স্কুল।সুরিটোলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুর রহমান বলেন, ‘১৯৮৯ সলের ১৯ আগস্ট রমনা স্কুল অস্থায়ীভাবে এখানে আসে। কিছুদিনের মধ্যেই তাদের চলে যাওয়ার কথা। কিন্তু ২৩ বছরেও তারা আর যায়নি। দুপুর ১২টায় তাদের ক্লাস শুরু হয়। ফলে ১২টার আগেই আমাদের একটি ভবন ছেড়ে দিতে হয়। এরপর মাত্র দুটি শ্রেণীকক্ষ নিয়ে আমাদের স্কুল চালাতে হয়। আমরা খুব সংকটে আছি।’কাচকৃঢ়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়: ১৯৩৬ সালে প্রতিষ্ঠিত গুলশানের কাচকৃঢ়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জায়গা দখল করেছে কাচকৃঢ়া ডিগ্রি কলেজ কর্তৃপক্ষ। তিনটি ভবনের মধ্যে দুটিই তাদের দখলে। এসব ভবন থেকে স্কুলের নামও তারা মুছে ফেলেছে।বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বেগম রোকেয়া বলেন, ‘১৯৯২ সালে এখানে ডিগ্রি কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। আমরা বারবার প্রতিবাদ করার পরও তারা আমাদের ভবন থেকে সরছে না। ফলে স্কুলের ৭০০ শিক্ষার্থী শ্রেণীকক্ষ সংকটে পড়েছে। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছি।’জানতে চাইলে ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ জালালউদ্দিন বলেন, ‘১৯৯২ সালে কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এখানে হাইস্কুল, কলেজ, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সবকিছুরই জায়গা আছে। মিলেমিশেই চলতে হবে আমাদের।’ স্কুলের সাইনবোর্ড মুছে ফেলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কোনো দিনই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাইনবোর্ড ছিল না। মুছব কী?’হাজী ইউসুফ আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়: মিরপুরের এই বিদ্যালয়ের মাঠে ইট, বালু, সুরকিসহ নির্মাণসামগ্রী রাখে এলাকার লোকজন। শিক্ষকেরা জানান, এলাকার ওয়ার্ড কমিশনার এবং থানায় বলেও তাঁরা প্রতিকার পাননি।

Leave a Reply

Your email address will not be published.