মার্চের পর অবৈধ শ্রমিকদের বিরুদ্ধে অভিযান

Spread the love

৮ হাজার বাংলাদেশি ফেরত পাঠাচ্ছে ওমান

শরিফুল হাসান

অবৈধ হয়ে পড়া এক লাখ বিদেশি শ্রমিককে নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে ওমান। এই শ্রমিকেরা যেন আর কাজ না পান, সে জন্য সরকার সব কোম্পানিকে সতর্ক করে দিয়েছে। ওমানের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, আগামী ৩১ মার্চের মধ্যে অবৈধ সব শ্রমিককে নিজ নিজ দেশে ফিরতে হবে। এসব বিদেশি শ্রমিকের মধ্যে বাংলাদেশি রয়েছেন ২০ হাজারের মতো। তবে ওমানের বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা বলেছেন, বাংলাদেশি অবৈধ শ্রমিকের সংখ্যা আট হাজারের বেশি হবে না। দুবাই থেকে অবৈধভাবে ওমানে প্রবেশ এবং একশ্রেণীর জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের প্রতারণার কারণেই তাঁরা অবৈধ হয়ে পড়েছেন।খালিজ টাইমস, ওমানের জাতীয় দৈনিক মাকতুবসহ কয়েকটি পত্রিকার খবর অনুযায়ী, ২০০৯ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে যেসব শ্রমিকের কাজের অনুমতিপত্র নবায়ন করা হয়নি, তাঁদের সবাইকে নিজ দেশে ফিরতে হবে। ফেব্রুয়ারি ও মার্চ—এই দুই মাস তাঁদের জন্য সাধারণ ক্ষমা থাকবে। মার্চের পর অবৈধ শ্রমিকদের গ্রেপ্তার শুরু হবে।ওমানের জনশক্তিবিষয়ক মন্ত্রী শেখ আবদাল্লাহ আল বাকরি ২৬ জানুয়ারি এক বিবৃতিতে বলেন, জেল-জরিমানা থেকে বাঁচতে চাইলে অবৈধ সব শ্রমিককে মার্চের মধ্যে ওমান ছাড়তে হবে। জেল-জরিমানা এড়াতে অবৈধ শ্রমিকদের নিজ নিজ দেশের দূতাবাসে নাম নিবন্ধন করাতে হবে।দৈনিক মাকতুব-এর এক প্রতিবেদনে কূটনীতিকদের উদ্ধৃত করে বলা হয়, ওমানে সবচেয়ে বেশি অবৈধ শ্রমিক ভারতের। এ পর্যন্ত ১৭ হাজার ভারতীয় ও ২৩ হাজার পাকিস্তানি অবৈধ হিসেবে নাম নিবন্ধন করেছেন। বাংলাদেশি অবৈধ শ্রমিকেরাও ৩০ জানুয়ারি থেকে নাম নিবন্ধন শুরু করেছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, সাধারণ ক্ষমায় অবৈধ শ্রমিকেরা বৈধ হওয়ার সুযোগ পাবেন না। কারণ যাঁরা অবৈধভাবে ওমানে ঢুকেছেন, তাঁদের কোনো কাগজপত্র নেই।এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওমানের বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম কাউন্সিলর এস এম ফেরদৌস টেলিফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ওমান সরকার জনশক্তিবিষয়ক একটি আইন পরিবর্তন করেছে। আগে অবৈধ শ্রমিকেরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতে পারতেন, ধরা পড়লে শ্রমিকেরাই কেবল শাস্তি পেতেন। কিন্তু এবার সরকার বলেছে, অবৈধ শ্রমিককে যে কোম্পানি কাজ দেবে, সেই কোম্পানিকেও শাস্তি দেওয়া হবে। একজন অবৈধ শ্রমিককে কাজ দিলে কোম্পানিকে বাংলাদেশি দুই লাখ টাকার সমপরিমাণ অর্থ জরিমানা করা হবে। তাই যাঁরা অবৈধ হয়ে পড়েছেন, তাঁদের দেশে ফিরতেই হবে।শ্রম কাউন্সিলর আরও জানান, বাংলাদেশের কিছু জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান সহজ-সরল কিছু লোককে অবৈধভাবে ওমানে পাঠিয়েছে। এ ছাড়া দুবাইয়ে অবৈধ হয়ে পড়া অনেক বাংলাদেশি শ্রমিক ভালো কাজ পাওয়ার আশায় পালিয়ে এখানে এসেছেন, অথচ হয়েছে উল্টো। তিনি জানান, ওমানের বাংলাদেশ সোশ্যাল ক্লাব ও দূতাবাস যৌথভাবে অবৈধ বাংলাদেশিদের তালিকা করছে। এ পর্যন্ত চার হাজার বাংলাদেশি নাম নিবন্ধন করেছেন। সাধারণ ক্ষমা অনুযায়ী, পুরো ফেব্রুয়ারি মাসেই অবৈধ শ্রমিকেরা নাম নিবন্ধন করতে পারবেন। এরপর তাঁদের দেশে ফিরতে হবে। এই ঘোষণায় শ্রমিকদের হয়রানি ও ভোগান্তি কমবে।অবৈধ বাংলাদেশি শ্রমিকদের সংখ্যা কত জানতে চাইলে এস এম ফেরদৌস বলেন, ২০০৯ সালেও অবৈধ শ্রমিকদের একটি তালিকা করা হয়েছিল। সে সময় এই সংখ্যা ছিল তিন হাজার। এবার সাত-আট হাজার হতে পারে।ওমানের জনসংখ্যা ৩০ লাখ। এর মধ্যে এক-তৃতীয়াংশই অর্থাত্ ১০ লাখ অভিবাসী শ্রমিক। বাংলাদেশের জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) হিসাব অনুযায়ী, ওমানে কর্মরত বাংলাদেশির সংখ্যা তিন লাখ ৬০ হাজার। এর মধ্যে ২০০৯ সালে সেখানে গেছেন ৪১ হাজার ৭০৪ জন বাংলাদেশি কর্মী।

Leave a Reply

Your email address will not be published.