ব্যবহৃত হচ্ছে চোরাচালান ও মানব পাচারসহ নানা অপরাধে

Spread the love

মিয়ানমারে বাংলাদেশের মোবাইল নেটওয়ার্ক

শরিফুল হাসান

মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী বিভিন্ন এলাকায় বাংলাদেশের চারটি বেসরকারি মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানির নেটওয়ার্ক পাওয়া যাচ্ছে। এই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে ইয়াবা চোরাচালান ও মানব পাচারকারীরা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রাখছে।
কক্সবাজার ও টেকনাফের স্থানীয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিজিবির কর্মকর্তারা বলছেন, জেলার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবিষয়ক বৈঠকে অনেকবার বিষয়টি তোলা হয়েছে। সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) কাছে চিঠিও দেওয়া হয়েছে।
বিজিবি ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মিয়ানমারে ৬০ থেকে ৭০ হাজার বাংলাদেশি মুঠোফোন নম্বর ব্যবহৃত হচ্ছে। দেশটির মেরুলা সীমান্ত থেকে বলি বাজার পর্যন্ত ১০ কিলোমিটারের মধ্যে নেটওয়ার্ক পাওয়া যায়। এ ছাড়া বিকাশের মাধ্যমেও সেখানে লেনদেন করা যায়।
বিজিবির দুজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ, মিয়ানমার থেকে ইয়াবা বাংলাদেশে আনা কিংবা সাগরে পাচারের জন্য লোক আনা-নেওয়া—সব ক্ষেত্রেই দুই দেশের অপরাধী চক্র বাংলাদেশের মুঠোফোন ব্যবহার করছে। এ ছাড়া সার, ডিজেল, ওষুধ, সিমেন্ট, চাল পাচারকারীরাও এসব মুঠোফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করে থাকে। মিয়ানমারে সীমান্তরক্ষী বর্ডার গার্ড পুলিশও (বিজিপি) বাংলাদেশি মুঠোফোন নম্বর ব্যবহার করছে। ফলে বিজিবি যখন চোরাচালান বা পাচারবিরোধী কোনো অভিযান চালাতে যায় তা অনেক সময় বাংলাদেশ থেকে ফাঁস হয়ে যায়।
টেকনাফ ৪২ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. আবু জার আল জাহিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘মিয়ানমার সীমান্তে পতাকা বৈঠক করতে গিয়ে আমরা দেখেছি বাংলাদেশের মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক সেখানে আছে। এটি আমাদের সীমান্ত নিরাপত্তার জন্য হুমকি। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে আমরা বিটিআরসিকে চিঠি দিয়েছি।’
টেকনাফের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ মোজাহিদ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্থানীয় প্রশাসন ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও এ ব্যাপারে একাধিকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশি মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলোর এমনভাবে নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা উচিত যাতে করে সে দেশ থেকে নেটওয়ার্ক না পাওয়া যায়।’
স্থানীয় প্রশাসনের অভিযোগ, বারবার বিটিআরসিকে বলা হলেও তারা মিয়ানমার সীমান্তে বাংলাদেশের মোবাইল ফোন নেটওয়ার্কের ব্যবহার বন্ধ করতে পারেনি। বরং একবার বিটিআরসির পক্ষ থেকে বলা হয়, নতুন করে টাওয়ার বসাতে হলে বিজিবির সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে। কিন্তু কারিগরি বিষয় দেখা বিজিবির কাজ নয়। সেই দক্ষতাও তাদের নেই। ফলে বিষয়টি ঝুলে যায়। তবে সম্প্রতি মানব পাচার নিয়ে সারা দেশে আলোচনা ওঠার পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও সীমান্তে নেটওয়ার্কের ব্যাপ্তি কমানোর অনুরোধ জানিয়েছে। এ ছাড়া স্থানীয় প্রশাসনও আবার অনুরোধ জানায়। এরপর ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে বিটিআরসিকে।
বিটিআরসির সচিব ও মুখপাত্র মো. সরওয়ার আলম বলেন, ‘মন্ত্রণালয় থেকে এ ব্যাপারে নির্দেশনা পাওয়া গেছে। এরপর সব মোবাইল ফোন অপারেটর, বিজিবি ও গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে আমরা বৈঠকও করেছি। মোবাইল অপারেটরদের বাংলাদেশমুখী করে এমনভাবে নেটওয়ার্ক স্থাপন করতে বলা হয়েছে যাতে করে সীমান্তের ওপারে সেটি না যায়। এ ব্যাপারে সমন্বিত একটি কমিটি করা হয়েছে, যারা বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করবে।’
জানতে চাইলে বাংলাদেশে মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন অ্যামটবের মহাসচিব টি আই এম নুরুল কবির প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকারের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আমাদের আলোচনা চলছে। আশা করছি, গ্রহণযোগ্য সমাধানে পৌঁছাতে পারব।’

Leave a Reply

Your email address will not be published.