শরিফুল হাসান
বিদেশগামী শ্রমিকদের জন্য কম্পিউটার ম্যাগনেটিক চিপ কার্ড বা স্মার্ট কার্ড চালু হচ্ছে। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এটি চালু হলে জাল ভিসা ও প্রতারণা কমে যাবে।বিএমইটির মহাপরিচালক খোরশেদ আলম চৌধুরী প্রথম আলোকে জানান, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহায়তায় এই চিপ কার্ড তৈরি করা হয়েছে। এতে বিদেশগামী শ্রমিকদের বিস্তারতি জীবনবৃত্তান্ত, কোন দেশে যাচ্ছে, কী ধরনের ভিসায় যাচ্ছে, দেশ ও বিদেশের কোন কোম্পানির মাধ্যমে যাচ্ছে, কী ধরনের কাজে যাচ্ছে, কতো টাকা বেতন, কত দিনের জন্য থাকবেন—সব তথ্য থাকবে। বিমানবন্দরে এই কার্ড দিয়েই সব তথ্য জানা যাবে। এর ফলে জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে শ্রমিকেরা আর প্রতারিত হবেন না।খোরশেদ আলম চৌধুরী বলেন, এই স্মার্ট কার্ড বিমানবন্দরের কম্পিউটারে দিলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে একজন কর্মীর বোর্ডিং কার্ড বের হয়ে আসবে। এর ফলে জাল কিংবা গলাকাটা পাসপোর্টে বিদেশে যাওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যাবে। বিদেশে গিয়ে কোনো কারণে ওই কর্মীর পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে তাঁর দেশে ফেরার পথে যেসব সমস্যার সৃষ্টি হয়, তা থেকেও কর্মীরা রেহাই পাবেন। একই সঙ্গে প্রবাসে বাংলাদেশিদের জন্য সংশ্লিষ্ট দেশে অবস্থানরত বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোর সেবাও নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।তবে জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন বায়রার সভাপতি গোলাম মোস্তফা প্রথম আলোকে বলেন, ‘গ্রাম থেকে অনেক শ্রমিক আসেন। তাঁদের পক্ষে কঠিন ফরম পূরণ করে স্মার্ট কার্ড করা কঠিন। তাই আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি যে এখনই স্মার্ট কার্ড বাধ্যতামূলক না করে তা দুই মাসের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হোক এবং পরে স্থায়ীভাবে চালু করা হোক। আর ঢাকার বাইরে ব্যুরোর অফিসগুলো থেকেও এটি চালু করা হোক।’একটি সূত্র জানিয়েছে, বায়রা চায় না যে স্মার্ট কার্ড চালু হোক। কারণ, এটি চালু হলে শ্রমিকদের সঙ্গে প্রতারণা করা যাবে না। একজনের পাসপোর্টে আরেকজনকে পাঠানো যাবে না। তাই আজ বৃহস্পতিবার তারা বিএমইটিতে বিক্ষোভ করবে। তবে বায়রার সভাপতি বলেন, ‘আমরা স্মার্ট কার্ডের বিরোধী নই। আমরা চাই বিষয়টি নিয়ে যেন কোনো জটিলতার সৃষ্টি না হয়। অনেক শ্রমিক এরই মধ্যে অভিযোগ করেছেন যে বিষয়টি নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে। অনেক জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানকেও ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।’প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, এই কার্ড চালু হলে একজন শ্রমিককে জাল ভিসা ও প্রতারণার শিকার হয়ে বিদেশে গিয়ে চোখের জল ফেলতে হবে না। দেশে বসেই চাকরির ধরন সম্পর্কে তিনি নিশ্চিত হতে পারবেন। বিদেশে নিয়োগকর্তা চুক্তিপত্রের ব্যতিক্রম করলে সে দেশে আইনের আশ্রয় নিতে পারবেন শ্রমিকেরা। এর ফলে একজনের পাসপোর্ট নকল করে অন্যজন যেতে পারবেন না। গলাকাটা পাসপোর্ট, পাচার রোধসহ শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। কাজেই সার্বিকভাবে এটি শ্রমিকদের উপকারেই আসবে।