বঙ্গবাজারে ভয়াবহ আগুন!

Spread the love

শরিফুল হাসান

‘২০১৯ সালের ২ এপ্রিল এই ভবনটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে ব্যানার টানিয়েছিলাম। ১০ বার নোটিশ দিয়েছি, করণীয় যা যা করেছি। তারপরও ব্যবসা চলছিল।’ -ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন।

জানি সর্বস্ব হারানো ব্যবসায়ীদের কষ্টের সীমানা নেই। হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। মানবিক দিক বিবেচনা করে তাদের পাশে সবার দাঁড়ানো দরকার। তবে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালকের কথাগুলোও কিন্তু বাস্তবতা। তবে শুধু নোটিশ দিয়েই কী দায়িত্ব শেষ? আরো কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয় না কেন?

দেখেন শুনতে খারাপ লাগলেও পুরান ঢাকার বারবার আগুন লাগে কারণ এখানকার ব্যবসায়ীরা কেমিকেল সরাবেন না। তারা সচেতন নন। যে কোনভাবে তারা ঝুঁকিপূর্ণভাবে ব্যবসা চালিয়ে যেতে চান। নিমতলী বলেন, চুড়িহাট্টা কিংবা বঙ্গবাজার। বারবার একই ঘটনা ঘটে। তারপরেও কোন বোধ ফেরে না। বরং আগুন লাগলে ফায়ার সার্ভিসকে দায়ী করে। সেখানে হামলা চালায়।

ওদিকে আরেকদল লোক আগুনের মধ্যেও লুটপাট করে। একবার ভাবুন, পুলিশ ও ফায়ারম্যানদের আগুন নিভানো কাজের পাশাপাশি কিছু সময় পর পর মাইকে ঘোষনা দিতে হচ্ছে যে, আল্লাহ’র দোহায় লাগে আপনারা কাপড় চুরি কইরেন না।

এই অবস্থার পরিবর্তন দরকার। আমি মনে করি পুরান ঢাকার অগ্নিনিরাপত্তা ঠিক করতে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া উচিত। শুধু পুরান ঢাকা কেন, পুরো ঢাকাতেই দুরাবস্থা। জীবনের স্বার্থে এই নগরের স্বার্থে প্রত্যেকটা ভবন অগ্নিনিরাপদ থাকা দরকার। প্রত্যেকটা এলাকায় আগুন লাগলে পানি দেওয়ার ব্যবস্থা কী হবে সেটি ঠিক করা দরকার। নয়তো ফায়ার সার্ভিসের সদর দপ্তরের উল্টো দিকে হলেও আগুন নেভানো কঠিন হয়ে পড়বে।

আরেকটা কথা, সম্পদের চেয়ে মানুষের জীবনের দাম বেশি। এই পুরান ঢাকায় শত শত মানুষ মরেছে আগুনে পুড়ে। এই যে দেখেন আগুনে সব দোকান পুড়েছে কিন্তু এই ঘটনা যদি দিনের বেলায় হতো অনেক মানুষ মারা যেতে পারতো। তখন কাপড়ের চেযে জীবনের শোক বড় হয়ে উঠতো। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া সেটি হয়নি।

ব্যবসায়ী ও সরকারের কাছে অনুরোধ, ভবিষ্যতের কথা ভাবুন যাতে আর এমন আগুন না লাগে। বঙ্গবাজারে যেন ফের টিনের দোকান গড়ে না উঠে। রাষ্ট্র প্রয়োজনে সেখানে অবকাঠামো করে দিক, সব ব্যবসায়ীকে স্বল্পমূল্যে দোকান দিক।

আর শুধু বঙ্গবাজার নয় পুরো ঢাকা ভয়াবহ ঝুঁকিপূর্ণ। একটা প্রায় মৃত নগরীতে আমরা বেঁচে আছি। কথায় কথায় আমরা উন্নয়নের বুলি আওড়াই, এই নগরীর জন্য হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নেই কিন্তু প্রায় মৃত এই শহরটার কোন সমস্যার টেকসই সমাধান হয় না। কবি ইমতিয়াজ বলেছেন, এই পৃথিবী হয়তো অন্য কোনো গ্রহের দোজখ। আমি খুব করে চাই ঢাকা শহর যেন সেই নরকের রাজধানী না হয়!

Leave a Reply

Your email address will not be published.