প্রতিবন্ধী বলে তাঁকে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দিচ্ছে না বিজেএসসি

Spread the love

‘আমি কি তবে হেরে যাব?’

শরিফুল হাসান

সুদীপ দাস
সুদীপ দাস

জন্ম থেকেই এক চোখে দেখেন না। আরেকটি চোখও ধীরে ধীরে নষ্ট হয়েছে। কিন্তু দমেননি তিনি। মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক পাস করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে স্নাতক করেছেন। এবার সহকারী জজ নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য আবেদনও করেছেন। কিন্তু প্রতিবন্ধী বলে তাঁকে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দিচ্ছে না বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন (বিজেএসসি)।
সুদীপ দাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘জীবনের এতটা পথ লড়াই করে আমি কি তবে হেরে যাব? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সবাই যখন প্রতিবন্ধীদের সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার কথা বলছেন, এই রাষ্ট্রে একজন প্রতিবন্ধী যদি বিসিএস ক্যাডার হতে পারেন, তাহলে আমি কেন সহকারী জজ হতে পারব না?’ সুদীপের বাবা প্রদীপ চন্দ্র দাস রেলওয়ের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। মা মিরা দাস সরকারি একটি স্কুলের শিক্ষক। তিন ভাইবোনের মধ্যে সুদীপ দ্বিতীয়। সুদীপের বড় বোন একটি বেসরকারি সংস্থার উপব্যবস্থাপক পদে আছেন। তিনি বলেন, জন্মের পর থেকেই সুদীপের একটি চোখ ছিল পুরোপুরি দৃষ্টিহীন। আরেকটি চোখ দিয়ে সামান্য দেখতে পারত। কিন্তু পড়াশোনার প্রতি ছিল তার তীব্র আগ্রহ। ক্ষীণদৃষ্টি হওয়ার কারণে ১০০ ওয়াটের টেবিল ল্যাম্প চোখের সামনে নিয়ে লেখাপড়া করত। বাল্বের প্রচণ্ড তাপে মাথা গরম হয়ে যেত। মাথায় খুব যন্ত্রণা করত। তবু লেখাপড়া থামায়নি।

২০০৭ সালে এসএসসি এবং ২০০৯ সালে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন সুদীপ। ২০১৫ সালে সেখান থেকে স্নাতক পাস করেন। সুদীপ বলেন, ‘যেহেতু ক্ষীণদৃষ্টি, তাই চোখের সামনে বই নিয়ে পড়তে হতো। চলাফেরার সময় কেউ না কেউ সঙ্গে থাকত। সহপাঠী ও শিক্ষকদের সহযোগিতায় স্কুলের গণ্ডি পার হই। বাকি চোখটাও নষ্ট হয়ে গেছে। এরপর আর নিজে কখনো বই পড়তে পারিনি। অন্যরা আমাকে পড়ে শোনাত আর আমি মুখস্থ করতাম। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনে পড়ার সময় বন্ধুরা আমাকে পড়ে পড়ে মোবাইলে রেকর্ড করে দিত। আমি শুনে শুনে পড়তাম। সরকারি চাকরিতে যেহেতু প্রতিবন্ধী কোটা আছে এবং তাঁরা বিসিএস ক্যাডারও হচ্ছেন ভেবে আমি সহকারী জজের নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিলাম।’

১৪৩টি পদের জন্য এ বছরের ১ মার্চ ১১তম বিজেএসসি পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। কাল শুক্রবার এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। সুদীপ জানান, প্রবেশপত্র সংগ্রহ করে একজন শ্রুতলেখকের অনুমতির জন্য ২৪ এপ্রিল বিজেএসসিতে গেলে তাঁকে বলা হয়, প্রতিবন্ধীদের পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ নেই। বিষয়টি জানতে গতকাল বুধবার জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক শেখ আশফাকুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কমিশনের সচিবের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। সচিব পরেশ চন্দ্র শর্মা কমিশনের মুখপাত্র মোহাম্মদ আল মামুনের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। এই তিন কর্মকর্তাই বলেন, আইন অনুযায়ী তাঁরা বিষয়টি দেখবেন।

২০০৭ সালের জুডিশিয়াল সার্ভিস প্রবেশ পদে নিয়োগবিষয়ক আদেশের ১০ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, প্রাথমিক বাছাই, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার পর কৃতকার্যদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা হবে। সেখানে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা যদি কাউকে শারীরিক বৈকল্য বলে প্রতিবেদন দেন, তবে তিনি নিয়োগের যোগ্য হবেন না।

গতকাল যোগাযোগ করা হলে সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক গাজী মো নুরুল কবির প্রথম আলোকে বলেন, ‘জাতিসংঘের সনদ অনুযায়ী প্রতিবন্ধী বলে কাউকে কোনো ধরনের বৈষম্য করা যাবে না। আর শ্রুতলেখক পাওয়া একজনের অধিকার।’

Leave a Reply

Your email address will not be published.