পৃ‌থিবীর সব‌চে‌য়ে বড় টে‌লিকম কোম্পা‌নি!

Spread the love

শরিফুল হাসান

একটা গল্প বলি। পৃ‌থিবীর সব‌চে‌য়ে বড় টে‌লিকম কোম্পা‌নি ইউরোপ থেকে দ‌ক্ষিণ এশিয়া‌তে ব্যবসা সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত নি‌য়েছে। সব প্রস্তু‌তি নি‌য়ে প্রথ‌মে তারা গে‌ছে পা‌কিস্তা‌নে। সেখানকার টে‌লিকম মন্ত্রীকে তা‌দের ব্যবসার প‌রিকল্পনার কথা জা‌নি‌য়ে বল‌লো, ব‌লো মন্ত্রী কীভা‌বে তু‌মি আমাদের সাহায্য কর‌তে পার‌বে? আর আমরা কীভাবে তোমাকে খুশি করতে পারি? নতুন ব্যবসার প্রস্তাব শু‌নে ওই মন্ত্রী বল‌লেন, ‌২০ কো‌টি রুপী ঘুষ দি‌তে হ‌বে। এরপর তু‌মি যা ইচ্ছে ক‌রো। তোমা‌কে পাকিস্তানে স্বাগত।

ওই মন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের খুশি করে পাকিস্তানে ব্যবসা খু‌লে ওই কোম্পা‌নি এবার গেলো শ্রীলঙ্কা ও নেপালে। একই কায়দায় ব্যবসা শুরু করে তারা এলো বাংলা‌দেশে। বরাব‌রের ম‌তোই বাংলা‌দে‌শের টেলিকমমন্ত্রী সচিবসহ কয়েকজনকে তা‌দের ব্যবসার কথা বল‌লো। বাংলা‌দে‌শের মন্ত্রী বল‌লেন, ৩০ কো‌টি টাকা ঘুষ দাও আমাদের। রেললাইনের অপটিক ফাইবারহহ তোমা‌দের যা যা লা‌গে নাও। পরে আরও কিছু টাকা পেয়ে তারা রাষ্ট্রীয় মোবাইল কোম্পা‌নি‌কে পঙ্গু করে রাখে। খু‌শিম‌নে বাংলা‌দে‌শে ব্যবসা খু‌লে ওই কোম্পা‌নি এবার গেল ভার‌তে।

ভারতের টে‌লিকম মন্ত্রী সব শু‌নে তাদের বল‌লেন তোমা‌দের স্বাগত। দে‌খো এই এই বিষয়গু‌লোতে আমাদের রা‌ষ্ট্রের ও জনগ‌নের স্বার্থ আছে। আর এই এই বিষয়গু‌লো‌তে প্রত্যেকটা রা‌জ্য‌র আলাদা স্বার্থ। এগুলোতে আমরা কোন ছাড় দি‌তে পার‌বো না। ভার‌তের এসব স্বার্থ মে‌নে ব্যবসা কর‌তো চাইলে আসো। আমাকে ৫০ কো‌টি ঘুষ দাও। ব্যবসা শুরু করো। ত‌বে মনে রেখো, ভারতের স্বার্থ ক্ষুন্ন হ‌লে তোমা‌কে থাকতে দে‌বো না আমরা।

আশা ক‌রি গ‌ল্পের মর্মার্থ সবাই বুঝ‌তে পে‌রে‌ছেন। সা‌র্কের নানা দে‌শের ছাত্র‌দের এক আড্ডায় এক যুগ আগে নেপালে বসে গল্পটা শু‌নে‌ছিলাম। একাধিকবার আমি এটি লিখেছি। তবে টেলিটকের বেহাল দশা কিংবা বড় ধরনের দুর্নীতি অনিয়মের খবর দেখলে আমার নতুন করে এই গল্পটা মনে পড়ে।

‌দ‌ক্ষিণ এশিয়ার অন্য দে‌শের সা‌থে ভারতের প্র‌তিষ্ঠানগু‌লো দেখখেন আর মেলা‌ন। সেখানেও অনিয়ম দুর্নীতি আছে কিন্তু দেশের স্বার্থে সবার আগে। সেখানকার প্রতিষ্ঠানগুলো ভীষণ শক্তিশালী। ভারতের আমলাতন্ত্র, আদালত, নির্বাচন কমিশন সবকিছু দেখুন। এতো সংকটের মধ্যেও দেশের স্বার্থ তাদের কাছে আগে।

এই যে নানা জাত, নানা ভাষার প‌রেও ভারত টি‌কে আছে তার একটা বড় কারণ সবার আগে দেশ‌প্রেম। যার যে মতই থাকুক রা‌ষ্ট্রের প্র‌য়োজ‌নে দে‌শের জন্য সবাই সেখা‌নে ঐক্যবদ্ধ। আর আমাদের দেশ‌প্রেম ও একতার যেন বড্ড অভাব। ফলে দুর্নীতি পদে পদে। টাকা পাচার আর ব্যাংক লুট স্বাভাবিক ঘটনা। গড়ে ওঠে কানাডায় বেগমপাড়া।রাজনীতিবিদরা সেখানে বেশি টাকা পাচার করে নাকি আমলারা তা নিয়ে এখানে বিতর্ক হয়।

শুনে অবাক লাগে,গত এক দশকে ধনী আর কোটিপতির সংখ্যা বৃদ্ধির হারে শীর্ষে বাংলাদেশ। সুইস ব্যাংকসমূহে বাংলাদেশি নাগরিকদের ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়েছে। ওদিকে মালয়েশিয়ায় ‘মাই সেকেন্ড হোম’ কর্মসূচিতে বাংলাদেশিরা এগিয়ে। দুবাই,অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগ করে নাগরিকত্ব নেওয়ার সুযোগ নিচ্ছেন অসংখ্য বাংলাদেশি। এরা তো কেউ দরিদ্র কৃষক বা সাধারণ মানুষ নন। সবাই ক্ষমতাশালী বা শিক্ষিত জনগোষ্ঠী।

জানি না এই যে সর্বগ্রাসী দুর্নীতি অনিয়ম লুটপাট এর শেষ কোথায়? জানি না এই সংকটের সমাধান কী। অনেকবার লিখেছি, ১৭ কোটি মানুষের এই দেশে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, বিচারপতি, স‌চিব, ডিজি, ডিসি, এসপি, জেলা জজ, ইউএনও, ওসি এমন মাত্র ১৭০০ মানুষ সৎ হলে গোটা দেশ বদলে যাবে। প্রায় বন্ধ হয়ে যাবে অনিয়ম দুর্নীতি। জানি না কবে আমাদের বোধ জাগবে। কবে সুশাসন প্রতিষ্ঠা হবে। তবু লিখে যাই, তবু আশা করে যাই।

Leave a Reply

Your email address will not be published.