পুলিশের এসআই পদে নিয়োগ

Spread the love

মেধা কোটায় শীর্ষে গোপালগঞ্জ!

শরিফুল হাসান

পুলিশের এসআই পদে নিয়োগ
পুলিশের এসআই পদে নিয়োগ

নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার ১৬ মাস পর পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) পদের জন্য এক হাজার ৫২০ জনকে নিয়োগের জন্য নির্বাচন করে ফল প্রকাশ করা হয়েছে। প্রকাশিত ফলে মেধা কোটায় সবচেয়ে বেশি স্থান পেয়েছেন গোপালগঞ্জ জেলা থেকে। আবার মেধা, জেলা ও অন্যান্য কোটা মিলে সবচেয়ে বেশি নির্বাচিত হয়েছেন ঢাকা জেলা থেকে।
সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি) বলছে, তাদের পরামর্শ উপেক্ষা করে আইনবহির্ভূতভাবে এই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ফলে ভবিষ্যতে যেকোনো সময় এই নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। আর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, খুব শিগগিরই এসআই নিয়োগের বিধিমালা সংশোধন করা হবে।
এই জটিলতার কারণ হলো পুলিশের এসআই পদটি আগে তৃতীয় শ্রেণীর ছিল। তখন পুলিশ বিভাগ এই পদে নিয়োগ দিত। গত বছর সরকার পদটিকে দ্বিতীয় শ্রেণীতে উন্নীত করে। নিয়ম অনুযায়ী, রাষ্ট্রের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তা নিয়োগের এখতিয়ায় পিএসসির। পদটিকে দ্বিতীয় শ্রেণীতে উন্নীত করার আগে এই নিয়োগ-প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল।
পদ উন্নীত করার পর এই নিয়োগ নিয়ে শুরু হয় অনিশ্চয়তা। এর মধ্যে পুলিশের এই নিয়োগ-প্রক্রিয়ার মধ্যেই এ বছরের ১২ জুন হাইকোর্টে রিট করেন পুলিশের দুজন উপপরিদশর্ক। তাঁরা আদালতকে বলেন, যেহেতু পরিদর্শক পদটি প্রথম শ্রেণীর এবং উপপরিদর্শক পদটি দ্বিতীয় শ্রেণীর করা হয়েছে সে কারণেই এই দুটি পদের পদোন্নতি পিএসসির মাধ্যমে হওয়া উচিত। শুনানির পর বিচারপতি নাঈমা হায়দার ও জাফর আহমেদ তাঁদের পক্ষে আদেশ দেন।
এরপর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে পরামর্শ চায় পিএসসির কাছে। পিএসসির পক্ষ থেকে বলা হয়, ১৯৭৯ সালের প্রবিধিমালায় জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) সহকারী পরিচালকসহ বেশ কিছু কর্মকর্তা পদে নিয়োগের জন্য মন্ত্রণালয়কে ক্ষমতা দেওয়া আছে। তাই বিধিমালা সংশোধন করে পুলিশের এসআই পদটিকেও সেখানে অন্তর্ভুক্ত করে এই নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে।
কিন্তু এই পরিবর্তনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে যে সময়ের দরকার তা দিতে দৃশ্যত সম্মত নয় পুলিশ প্রশাসন। তাই সরকারের শেষ মুহূর্তে গত মঙ্গলবার রাতে এসআই নিয়োগ পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়।
নিয়ম অনুযায়ী, নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ব্যক্তিরা পুলিশ একাডেমিতে এক বছর মেয়াদি মৌলিক প্রশিক্ষণ নেবেন। প্রশিক্ষণ শেষে শিক্ষানবিশ এসআই হিসেবে নিয়োগ পাবেন তাঁরা।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (পুলিশ) নাজিমউদ্দিন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুলিশের এসআই নিয়োগ বিধিমালা শিগগিরই সংশোধন করা হবে। ইতিমধ্যে জনপ্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এটি তৈরিও করেছে।’ নিয়োগ বিধি সংশোধনের আগেই এ ফল প্রকাশ বৈধ কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি না এর ফলে কোনো আইন লঙ্ঘন হয়েছে।’

 প্রবিধিমালা সংশোধন না করে কীভাবে এই নিয়োগ-প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হচ্ছে—জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত পিএসসির সদস্য মুহম্মদ লিয়াকত আলী খান কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

তবে সরকারি কর্মকমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে কেউ চ্যালেঞ্জ করলে এই নিয়োগ নিয়ে জটিলতা তৈরি হতে পারে।

মেধা তালিকার শীর্ষে গোপালগঞ্জ: দ্বিতীয় শ্রেণীর নিয়োগে ৪৫ ভাগ মেধা কোটা, ৩০ ভাগ মুক্তিযোদ্ধা কোটা, ১০ ভাগ জেলা কোটা, ১০ ভাগ নারী কোটা এবং পাঁচ ভাগ আদিবাসী কোটায় নিয়োগ দেওয়া হয়।

প্রকাশিত ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, মেধা কোটায় স্থান পাওয়াদের মধ্যে প্রথম গোপালগঞ্জ জেলা। দ্বিতীয় টাঙ্গাইল ও তৃতীয় নেত্রকোনা।

ফলাফলে দেখা যায়, গোপালগঞ্জ থেকে ৪২ জন, ঢাকা জেলা থেকে মেধা তালিকায় স্থান পেয়েছেন ২৬ জন, খুলনা জেলা থেকে ১২ জন ও চট্টগ্রাম থেকে ১০ জন, বগুড়া থেকে আটজন মেধা কোটায় নির্বাচিত হয়েছেন। তবে মেধা ও জেলা কোটা মিলে সবচেয়ে বেশি ৯২ জন নির্বাচিত হয়েছেন ঢাকা জেলা থেকে। দ্বিতীয় টাঙ্গাইল থেকে ৮২, তৃতীয় ময়মনসিংহ থেকে ৭১ এবং চতুর্থ গোপালগঞ্জ থেকে ৫৮ জন ও নেত্রকোনা থেকে ৫২ জন নির্বাচিত হয়েছেন।

গোপালগঞ্জ প্রধানমন্ত্রীর জেলা, আর নেত্রকোনা পুলিশের প্রভাবশালী একজন কর্মকর্তার বাড়ি। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকুর জেলা পাবনা থেকে মেধা তালিকায় ২০ জনসহ মোট ৪১ জন নির্বাচিত হয়েছেন। এ ছাড়া ফরিদপুর থেকে মেধা তালিকায় ২৩ জনসহ ৪৬, কিশোরগঞ্জ থেকে মেধা তালিকায় ২২ জনসহ ৩৭ এবং রাজবাড়ী থেকে মেধা কোটায় ১৫ এবং জেলা ও অন্যান্য কোটায় ১৪ জন নির্বাচিত হয়েছেন।

মাত্র চারজন আদিবাসী এই এসআই পদে নিয়োগের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন। ২২টি জেলা থেকে নারী কোটায় কেউ নির্বাচিত হননি।

গত তিন মাসে অন্তত ৪০ জন প্রার্থী এই নিয়োগের ফল কবে হবে তা জানতে এবং নির্বাচন-প্রক্রিয়ায় তাঁদের জানামতে চলা নানা অসংগতি, অর্থের লেনদেন, রাজনৈতিক আশীর্বাদ ও তদবিরের বিষয়ে অভিযোগ জানাতে প্রথম আলো কার্যালয়ে এসেছেন, ফোনে কথা বলেছেন।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (নিয়োগ ও পরিকল্পনা) মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘১৫২০ জনকে নির্বাচিত করা হয়েছে, নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এক বছর প্রশিক্ষণ শেষ করার পরই তাঁরা নিয়োগ পাবেন। আর নিয়োগ বিধিমালা সংশোধনের বিষয়টি চূড়ান্ত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে স্বাক্ষর হয়ে গেছে। আজকালের মধ্যে সেটি চূড়ান্ত হয়ে যাবে।’

গোপালগঞ্জ বা নেত্রকোনা থেকে এত বেশিসংখ্যক প্রার্থী মেধা কোটায় কী করে সুযোগ পেল—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রাথমিক বাছাই, লিখিত পরীক্ষা ও মৌখিক পরীক্ষাসহ সব প্রক্রিয়া শেষে একটি চূড়ান্ত তালিকা করা হয়েছে। মেধা তালিকায় কে কোন জেলার সেটা দেখার সুযোগ নেই।’

অর্থ লেনদেনের বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের ঊর্ধ্বতন এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের এ ধরনের অভিযোগ জানা নেই। কারও ক্ষেত্রে এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকলে তিনি যথোপযুক্ত জায়গায় অভিযোগ করতে পারেন।’

Leave a Reply

Your email address will not be published.