পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মেডিকেল অফিসার

Spread the love

উত্তীর্ণ হলেও চাকরি হচ্ছে না ৩৮৩ চিকিৎসকের

শরিফুল হাসান

বরিশাল মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস শেষ করেই স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের চিকিৎসা কর্মকর্তা পদে বিজ্ঞাপন দেখে আবেদন করেন সুলতানা পারভীন। লিখিত, মৌখিকসহ সব পরীক্ষায় চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণও হন তিনি। এরপর ১১ মাস পেরিয়ে গেলেও তিনি চাকরিতে যোগ দিতে পারেননি।

সুলতানার মতো একই সংকটে আছেন নিয়োগ পাওয়া ৩৮৩ জন প্রার্থী। দেড় বছরের নিয়োগপ্রক্রিয়া শেষে ২০১৫ সালের ১২ অক্টোবর তাঁদের চাকরিতে চূড়ান্তভাবে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করেছিল সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি)। কিন্তু পুলিশ যাচাই প্রতিবেদন আর আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় এখনো তাঁরা চাকরিতে যোগ দিতে পারেননি। সব মিলিয়ে এই নিয়োগপ্রক্রিয়া ঝুলে আছে ২৭ মাস।

উত্তীর্ণ প্রার্থীরা বলছেন, আজ নিয়োগ হবে, কাল হবে এমন কথা শুনতে শুনতে ১১ মাস পেরিয়ে গেছে। ফলে তাঁদের প্রশিক্ষণ, অন্যান্য চাকরি, ব্যক্তিগত জীবনসহ অনেক সিদ্ধান্ত ঝুলে আছে।

পিএসসি ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পুলিশি যাচাই প্রতিবেদনের জন্য অনেক দিন ধরে নিয়োগ ঝুলে ছিল।
সেটি মোটামুটি শেষ হলেও অধিদপ্তরের চিকিৎসক নন এমন একটি অংশ চাইছে এই নিয়োগ না হোক। তাই নিয়োগপ্রক্রিয়া আরও দীর্ঘায়িত হচ্ছে।

পিএসসি সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ৭ মে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের ৫৩৫টি চিকিৎসা কর্মকর্তার স্থায়ী শূন্য পদ পূরণের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। গত বছরের ৫ এপ্রিল লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ৮ জুলাই লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। এতে ৪৬৩ জন উত্তীর্ণ হন। ১৬ থেকে ২৪ আগস্ট পর্যন্ত তাঁদের মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ১২ অক্টোবর চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হয়। এতে ৩৮৩ জনকে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়। এ বছরের ৩ জানুয়ারি তাঁদের পুলিশ যাচাই ফরম পূরণ করে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে জমা দিতে বলা হয়। এরপর ১ থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি তাঁদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষ হয়। তাঁদের বলা হয়, শিগগিরই নিয়োগ হয়ে যাবে। কিন্তু ফল প্রকাশের ১১ মাস হয়ে গেলেও এখনো তাঁরা নিয়োগ পাননি।

রংপুর মেডিকেল কলেজ থেকে পাস করা মুহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেন, ‘চূড়ান্ত ফল দেওয়ার পরই শুনলাম দ্রুত যোগ দিতে হবে। একটা ক্লিনিকে চাকরি করতাম, ছেড়ে দিলাম। কিন্তু এখন দেখি নিয়োগ হয় না। তিন মাস পর আবার বিভিন্ন ক্লিনিকে কাজ শুরু করলাম। কারণ, আমার আয়ে সংসার চলে। বিয়ে করেছি। সব মিলিয়ে সামাজিকভাবে সংকটে আছি। সরকারের কাছে অনুরোধ, মানবিক দিক বিবেচনা করেও যেন দ্রুত সমস্যার সমাধান করা হয়।’

জামালপুরের একজন প্রার্থী প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকারি চাকরি পাওয়ার পর পরিবার ও আত্মীয়স্বজন সবাই খুব খুশি হয়েছিল। এখন সবাই জানতে চায়, আমি কাজে যোগ দিয়েছি কি না। লজ্জায় কিছু বলতে পারি না। আর কত দিন লাগবে আমাদের যোগ দিতে?’

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ থেকে পাস করা একজন বলেন, ‘নিয়োগ হবে এই আশায় বসে থেকে জীবনের মূল্যবান সময় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। নানা ধরনের প্রশিক্ষণের সুযোগ থাকলেও যেতে পারছি না।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চট্টগ্রামের একজন প্রার্থী বলেন, ‘ঢাকায় একটা বেসরকারি মেডিকেল কলেজে শিক্ষকতা করতাম। রোজার ঈদের পর নিয়োগ হবে শুনে আগের চাকরিটা ছেড়ে দিই। কিন্তু নিয়োগ হচ্ছে না। এখন বাড়িতে বসে আছি। প্রতিদিন সকালে উঠেই নানা কথা শুনতে হয়। নিজেকে আজকাল খুব ছোট মনে হয়।’

এই দীর্ঘসূত্রতার বিষয়ে জানতে চাইলে পিএসসির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা দ্রুতই লিখিত, মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে গত বছরের অক্টোবরেই ফলাফল প্রকাশ করে দিয়েছি। এরপর কেন এত সময় লাগছে, সেটা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা অধিদপ্তর বলতে পারবে। এমন দীর্ঘসূত্রতা কাম্য নয়।’

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের পরিচালক (লাইন ডিরেক্টর) মঈনউদ্দিন বলেন, ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ছাড়পত্র পেলেই আমরা তাঁদের নিয়োগপত্র দিতে পারি। কিন্তু সেটা দীর্ঘায়িত হচ্ছে। আমরা এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। আমাদের মহাপরিচালকও বিয়ষটিতে তাগাদা দিচ্ছেন। আমরাও চাই দ্রুত এই নিয়োগ হোক।’

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন অনুবিভাগের যুগ্মসচিব জামাল হোসাইনকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি নিরাপত্তা শাখায় কথা বলার পরামর্শ দেন। নিরাপত্তা শাখার যুগ্মসচিব সাহেদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ৩৮৩ জনের মধ্যে তিন শতাধিক ছাড়পত্র দিয়ে দিয়েছি।’

Leave a Reply

Your email address will not be published.