শরিফুল হাসান
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) বলছে, তাদের অনুমোদন নেই। বাংলাদেশ নার্সিং কাউন্সিল (বিএনসি) বলছে, তাদের শর্ত মানা হচ্ছে না। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়টি বলছে, তাদের সবকিছুই ঠিক আছে। এই তিনের বেড়াজালে চরম বিপাকে পড়েছেন বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নার্সিং কোর্সের শিক্ষার্থীরা।ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি (আইইউবিএটি) নামের ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, তাঁরা এখন চরম অনিশ্চয়তায় আছেন। কারণ, কয়েক লাখ টাকা খরচ করে চার বছরের লেখাপড়া শেষ করলেও বিএনসি তাঁদের স্বীকৃতি দিচ্ছে না। ফলে তাঁরা কর্মজীবন নিয়ে সংকটে পড়েছেন। সবচেয়ে বেশি বিপাকে আছেন নেপালি শিক্ষার্থীরা।বিএনসি বলছে, নার্সিং কোর্স চালু করার জন্য যেসব শর্ত মানার কথা, আইইউবিএটি সেসব শর্ত মানেনি। তাই ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের স্বীকৃতি দেওয়া যাচ্ছে না। আর মঞ্জুরি কমিশন বলছে, তাদের অনুমোদন ছাড়াই নার্সিং বিষয়ে সম্মান ডিগ্রি দিচ্ছে আইইউবিএটি। তাই অনুমোদনহীন এই কোর্স বন্ধ করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়কে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে তারা সেটি মানছে না। ১৯৯১ সালে আইইউবিএটি প্রতিষ্ঠিত হয়। শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, ২০০৫ সাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টি নার্সিং কোর্সে শিক্ষার্থী ভর্তি শুরু করে। এ ক্ষেত্রে দেশি একজন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে দুই থেকে তিন লাখ এবং নেপালি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে তিন থেকে চার লাখ টাকা নেওয়া হয়। এই পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি অন্তত দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী ভর্তি করেছে। তাঁদের মধ্যে ২১ জন নেপালিসহ প্রায় অর্ধশত শিক্ষার্থী চার বছরের লেখাপড়া শেষ করেছেন। লেখাপড়া শেষ করার পরই শুরু হয়েছে বিপত্তি।আইইউবিএটি থেকে নার্সিং পাস করা বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, কেউ নার্সিং পেশা শুরু করতে চাইলে তাঁকে বিএনসি থেকে অনুমতি নিতে হয়। সেই অনুযায়ী লেখাপড়া শেষ করে প্রশিক্ষণ নিয়ে শিক্ষার্থীরা বিএনসিতে স্বীকৃতির জন্য আবেদন করেন। কিন্তু বিএনসি এখন পর্যন্ত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থীকে স্বীকৃতি দেয়নি।নেপালি শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ থেকে পাস করে তাঁরা নেপালের ত্রিভুবন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমমানের মর্যাদা পেয়েছেন। এরপর তাঁরা নেপাল নার্সিং কাউন্সিলে (এনএনসি) আবেদনসহ অন্যান্য প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করেছেন। কিন্তু এনএনসি কর্তৃপক্ষ বলছে, আগে বিএনসির অনুমোদন দরকার। এরপর তাঁরা বিএনসিতে আবেদন করলেও তাঁদের স্বীকৃতি পাচ্ছেন না। সমস্যা সমাধানে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, আইইউবিএটি কর্তৃপক্ষসহ সবার কাছে আবেদন করলেও কোনো সুরাহা হচ্ছে না। নেপালের বাংলাদেশ দূতাবাসও সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছে। কিন্তু ফলাফল শূন্য। বিএনসি সূত্রে জানা গেছে, নার্সিং কোর্স চালুর আগে নিজস্ব হাসপাতাল চালু করা, প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করাসহ অনেকগুলো শর্ত দেওয়া হয়েছিল আইইউবিএটি কর্তৃপক্ষকে। কিন্তু তারা সেসব শর্ত মানেনি। ফলে ওই প্রতিষ্ঠানকে স্বীকৃতি দেওয়া যাচ্ছে না।জানতে চাইলে বাংলাদেশ নার্সিং কাউন্সিলের নিবন্ধক (রেজিস্ট্রার) সুরাইয়া বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘যে প্রক্রিয়ায় নার্সিং কোর্স চালু করার কথা, আইইউবিএটি সেটি করেনি। যেসব শর্ত মানার কথা, সেগুলোও তারা মানেনি। আমরা তাদের বিভিন্ন সময়ে বিষয়গুলো জানিয়েছি। কিন্তু তারা সেগুলো মানেনি। উল্টো শিক্ষার্থীদের দিয়ে মামলা করিয়েছে। বিষয়টি এখন আদালতে নিষ্পত্তির অপেক্ষায়।’ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন সূত্রে জানা গেছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ১৯৯২-এর ১৫ ধারা অনুযায়ী যেকোনো বিষয়ে যেকোনো কোর্স চালুর আগে কমিশনের অনুমোদন নিতে হয়। কিন্তু আইইউবিএটি কর্তৃপক্ষ অনুমোদন না নিয়েই বিএসসি ইন নার্সিং ও কম্পিউটার বিজ্ঞানবিষয়ক ডিপ্লোমা কোর্স চালু করে। ২০০৭ সালের ৮ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন থেকে ওই বিশ্ববিদ্যালয়কে দেওয়া চিঠিতে এ ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়ে বলা হয়, যেহেতু এই দুটি কোর্সের অনুমোদন নেই, কাজেই কোর্স দুটিতে যেন নতুন করে শিক্ষার্থী ভর্তি না করা হয়। তবে কমিশনের এই নির্দেশ অমান্য করে এখনো শিক্ষার্থী ভর্তি করছে আইইউবিএটি। আইইউবিএটির ওয়েবসাইট ও প্রসপেক্টাস দেখেও এর সত্যতা মিলেছে। এতে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক মানের ব্যাচেলর অব সায়েন্স ইন নার্সিং (বিএসএন) ডিগ্রি দিচ্ছে আইইউবিএটি। দক্ষ নার্স গড়ে তোলাই এই কোর্সের উদ্দেশ্য। জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সচিব মো. খালেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘কমিশনের অনুমতি না নিয়েই আইইউবিএটি নার্সিং কোর্স চালাচ্ছিল। আমরা তাদের নার্সিং কাউন্সিলের অনুমতি নিয়ে কমিশনে যথাযথ অনুমতি নেওয়ার জন্য আবেদন করতে বলেছি। কিন্তু তারা যথাযথভাবে আবেদন করেনি।’এ বিষয়ে আইইউবিএটির উপাচার্য আলিমুল্যা মিয়ান প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেশের ভালোর জন্যই আমরা নার্সিং কোর্স চালু করেছিলাম। তখন বিএনসিরও অনুমোদন নেওয়া হয়েছিল। আর আচার্যের অনুমোদন নিয়েই বিশ্ববিদ্যালয় করা হয়েছিল। কিন্তু মঞ্জুরি কমিশন এখন বলছে নার্সিংয়ের অনুমোদন নেই। বিএনসি অযথা ঝামেলা করছে। আমরা চাই না শিক্ষার্থীদের কোনো সমস্যা হোক। সমস্যা সমাধানে আমরা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় বসছি। মঞ্জুরি কমিশনের সঙ্গেও কথা হচ্ছে। আশা করি দ্রুত সমাধান হয়ে যাবে।’