ঈদে মোটরসাইকেল বন্ধ!

Spread the love

শরিফুল হাসান

একটা দেশে পরিবহন মালিকরা কতোটা ক্ষমতাধর সেটা ফের বোঝা গেল ঈদের আগে মোটরসাইকেল নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তে। গত ঈদে বিপুল সংখ্যক মানুষ মোটরসাইকেলে বাড়ি ফেরায় বাস মালিকদের ব্যবসা কম হয়েছে। কাজেই এবার ঈদে মোটরসাইকেল বন্ধ। এমনকি জেলা থেকে জেলাতেও‌। অথচ এটা শুধু অনৈতিক নয় বেআইনিও।

প্রশ্ন উঠেছে, এই সিদ্ধান্ত বিআরটিএর নাকি পরিবহন মালিকদের?দেখেন বিআরটিএ মোটরসাইকেল নিবন্ধন আর লাইসেন্স দেওয়ার সময় বলেছে সমগ্র দেশে চলতে পারবে। আমি নিশ্চিত আদালতে গেলে আদালতও এমনটাই বলবে। আজকে ডিএমপি কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেছেন, বিআরটিএর এই সিদ্ধান্তে জনরোষ তৈরি হবে। শতশত মানুষ ঈদের সময় মোটরসাইকেল নিয়ে বাড়ি যায়। পুলিশ কীভাবে তাদের ঠেকাবে?

এটি বাস্তব সম্মত নয়। আমরা বিআরটিএকে জানিয়েছি, এ কাজ পুলিশের একার পক্ষে করা সম্ভব নয়। আর বাড়ি যাওয়ার যৌক্তিক কারণ দেখাতে পারলে পুলিশ মোটরসাইকেল চালকদের ছেড়ে দেবে।ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মুনিবর রহমান বলেন, মোটরসাইকেল চালানো একজন মানুষের নাগরিক অধিকার। জীবনের প্রয়োজনে মানুষ এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যান।

এমন স্পষ্ট করে কথা বলায় বাংলাদেশ পুলিশকে ধন্যবাদ। বিআরটিএ কেন কার স্বার্থে এই সিদ্ধান্ত নিল অনুমান করা যায়। তারা ভুলে গেছে, একটা দেশের গণপরিবহন ব্যবস্থা ঠিক না করে এমন সিদ্ধান্ত নেয়াটা অন্যায়। আচ্ছা পদ্মা সেতু চালুর পর বিভিন্নস্থানে বিআরটিসির বাস চলাচল কারা বন্ধ করলো। তখন বিআরটিএ কী করেছে।

খান সাহেবদের কাছে আর কতোকাল জিম্মি হয়ে থাকবে পরিবহন খাত?জানি মোটরসাইকেল বিরোধীরা পাল্টা প্রশ্ন করতে পারেন মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটায়। দেখেন দুর্ঘটনার অনেক কারণ আছে। বাস চালকরাও দুর্ঘটনা ঘটায়। লাইসেন্স আর ফিটনেস ছাড়া চালায়। তাই বলে কী কেউ বলে বাস বন্ধ করে দেন? কয়েকদিন আগে লিখেছিলাম, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মৃত্যুহার বাংলাদেশে অনেক বেশি।

কাজেই তাদের সতর্ক হতে হবে। নিয়ম মানতে হবে। আমি মনে করি মোটরসাইকেল চালকরা কোন অনিয়ম করলে কিংবা তাদের শৃঙ্খলায় আনতে বিআরটিএ নতুন আইন করতে পারে কিন্তু কোনভাবেই মোটরসাইকেল বন্ধ করা যায় না। জানি পরিবহন মালিকরা যেহেতু মহাক্ষমতাধর তারা চাইলে একটা দেশের রেল পরিষেবা উন্নত হবে না, বিকল্প কোন ব্যবস্থা গড়ে উঠবে না‌। আর এই দেশে পরিবহন নেতাদের যেহেতু অনেক ক্ষমতা, তারা চাইলেই যেহেতু সব অচল করে দিতে পারে কাজেই সরকারগুলো সবসময় তাদের পাত্তা দেয় আর জিম্মি থাকে জনতা।

কিন্তু স্বাধীনতার ৫০ বছর পর এসে একটা দেশ এভাবে কারো হাতে জিম্মি করতে দেয়া উচিত নয়। আশা করছি নীতি নির্ধারকদের বোধ ফিরবে। আশা করি তারা এই সিদ্ধান্ত বদলাবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.