ইতিহাস তুলে ধরবে পুলিশের মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর

Spread the love

শরিফুল হাসান

যুদ্ধদিনের সাক্ষ্য বহন করে চলেছে এসব অস্ত্র। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে একটি জাতির জন্মের ইতিহাস। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর আক্রমণের জবাব পুলিশ দিয়েছিল এসব অস্ত্র ব্যবহার করে। গতকাল রাজধানীর রাজারবাগে পুলিশের মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে।  ছবি: সাজিদ হোসেন

যুদ্ধদিনের সাক্ষ্য বহন করে চলেছে এসব অস্ত্র। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে একটি জাতির জন্মের ইতিহাস। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর আক্রমণের জবাব পুলিশ দিয়েছিল এসব অস্ত্র ব্যবহার করে। গতকাল রাজধানীর রাজারবাগে পুলিশের মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে। ছবি: সাজিদ হোসেন

দেয়ালজুড়ে অসংখ্য আলোকচিত্র। ঠিক মাঝখানে সেই বেতার যন্ত্রটি, যার মাধ্যমে রাজারবাগে পুলিশের প্রতিরোধ গড়ে তোলার কথা ছড়িয়ে পড়েছিল সারা দেশে। আছে মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের ব্যবহূত সেকেলে থ্রি নট থ্রি রাইফেল এবং অনেক ঐতিহাসিক দলিল। এটিই সদ্য গড়ে ওঠা বাংলাদেশ পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে স্থাপিত এই জাদুঘর বলবে একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতে পুলিশের প্রথম প্রতিরোধ ও মুক্তিযুদ্ধে পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের সাহসিকতা আর ত্যাগের কথা। আজ রোববার সন্ধ্যায় এই জাদুঘরের উদ্বোধন করা হবে।

গতকাল সেখানে গিয়ে দেখা যায়, শেষ মুহূর্তের সাজসজ্জার কাজ করছেন জাদুঘরের কর্মীরা। বেতার যন্ত্রটি মন দিয়ে দেখছিলেন এক বৃদ্ধ। কৌতূহলী হয়ে পরিচয় জানতে চাইলে স্মিত হেসে বৃদ্ধ জানালেন, তাঁর নাম মো. শাহজাহান মিয়া। পাকিস্তানি সেনাদের হাতে ২৫ মার্চ রাজারবাগ পুলিশ লাইনসসহ ঢাকা শহর আক্রান্ত হওয়ার বার্তা সারা দেশের বিভিন্ন পুলিশ লাইনসে পাঠিয়েছিলেন তিনিই। এ সময় চোখে পড়ল দেয়ালে এই বেতার অপারেটর কনস্টেবলের একটি বড় ছবি।শাহজাহান মিয়া যন্ত্রটির সামনে দাঁড়িয়ে স্মৃতিচারণা করে বলেন, ‘২৫ মার্চ সন্ধ্যা থেকেই আমরা অপেক্ষা করছিলাম উত্তেজনা নিয়ে। বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পারি, রাজারবাগ পুলিশ লাইনস আক্রমণ হতে পারে। আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি।…রাত ১১টা ২০ মিনিটে সেনাবাহিনী পুলিশ লাইনস ঘিরে ফেলে। এর কিছুক্ষণ পরেই আক্রমণ। শুরু হলো প্রচণ্ড গোলাগুলি। আমি সারা দেশের জেলা ও সাবডিভিশন পুলিশে বেতার মারফত খবরটি জানিয়ে সাবধান হতে বলে দিলাম।’অনেক গুণ বেশি ও উন্নত অস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে রাতভর যুদ্ধ চালিয়ে গিয়েছিলেন রাজারবাগের বীর পুলিশ সদস্যরা। শেষ পর্যন্ত শহীদ হলেন অন্তত এক শ পুলিশ সদস্য। বন্দী হলেন আরও দেড় শ।

২৫ মার্চ রাতে রাজারবাগ পুলিশ লাইনস আক্রান্ত হলে তখনকার পুলিশ মহাপরিদর্শকের দেহরক্ষী কনস্টেবল আবদুল আলী যে পাগলা ঘণ্টা বাজিয়ে পুলিশ সদস্যদের একত্র করেন, সেটি রয়েছে এই জাদুঘরে। আছে রাজারবাগের প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশ নেওয়া পুলিশ মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যবহূত হাতব্যাগ, নামাজের টুপি, হাতঘড়ি, চশমা, ওষুধ, মগ, মর্টার শেল ইত্যাদি।মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পুলিশের মহাপরিদর্শক আবদুল খালেক বেতারে একটি ভাষণ দিয়ে পুলিশ বাহিনীকে উজ্জীবিত করেন। সেই ভাষণের কপিটিও আছে জাদুঘরে। ওই ভাষণে দেশ স্বাধীন না হওয়া পর্যন্ত কর্মস্থলে যোগ না দিয়ে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়।

রাজশাহী বিভাগের পুলিশের উপমহাপরিদর্শক মামুন মাহমুদের পারিবারিক আলোকচিত্র ও নোটখাতা, রাজশাহীর এসপি শাহ আবদুল মজিদ, কুমিল্লার এসপি কবির উদ্দিন আহমেদ, চট্টগ্রামের এসপি এম শামসুল হক, বরিশালের অতিরিক্ত এসপি গোলাম হোসেন, পিরোজপুরের পুলিশ কর্মকর্তা ফয়জুর রহমান আহমেদ (লেখক হুমায়ূন আহমেদ ও জাফর ইকবালের বাবা), দেবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল কাদের মিয়া, নড়াইলের গোলাম রাব্বানীসহ আরও অনেক শহীদ ও মুক্তিযোদ্ধার কীর্তির আলোকচিত্র আছে এই জাদুঘরে। জাদুঘর প্রতিষ্ঠা কমিটির সভাপতি ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন পুলিশ স্টেশন ও অন্যান্য স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন মুক্তিযুদ্ধসংশ্লিষ্ট স্মারক এবং পুলিশের সংশ্লিষ্টতা-সম্পর্কিত তথ্য উপস্থাপন ও সংরক্ষণ করবে এই জাদুঘর।’কমিটির সদস্যসচিব পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার আবিদা সুলতানা বলেন, ‘১৪ হাজার পুলিশ সদস্য মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। এক হাজারের বেশি শহীদ হন। আহত ও পঙ্গু হন আরও হাজার দেড়েক সদস্য। আমরা এই জাদুঘরের মাধ্যমে সেই কীর্তি তুলে ধরতে চাই।’

Leave a Reply

Your email address will not be published.