শরিফুল হাসান
সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) রাজধানী আবুধাবিতে ২২০ জন বাংলাদেশি গ্রেপ্তার হয়েছেন। গত সপ্তাহে দেশটির পুলিশ তাঁদের গ্রেপ্তার করে। এদিকে অবৈধভাবে থাইল্যান্ড যাওয়ার পথে মিয়ানমারে আটক ৬০ বাংলাদেশি প্রায় দেড় মাস কারাগারে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন।মধ্যপ্রাচ্যের ইংরেজি দৈনিক গালফ নিউজে গতকাল রোববার প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়, আবুধাবির মুসাফাহ শিল্প এলাকা থেকে গত সপ্তাহে ২২০ বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাঁদের কাছ থেকে জাল কাগজপত্র উদ্ধার করা হয়।ইউএইর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্ডার সেক্রেটারি মেজর জেনারেল নাসের বিন আওয়াদি আল মেনহালি গালফ নিউজকে বলেন, ‘মুসাফাহ শিল্প এলাকায় চরম অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ৩০০ বাংলাদেশি থাকতেন। পুলিশ সেখান থেকে জাল কাগজপত্রসহ ২২০ বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তার করে। তাঁরা পুলিশ দেখে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন। তাঁদের অবৈধভাবে আনা ব্যক্তিকেও (২৯) গ্রেপ্তার করে পুলিশ।’ তিনি জানান, অবৈধভাবে প্রবেশ করে কেউ ধরা পড়লে দুই মাসের কারাদণ্ড ও এক লাখ দিরহাম জরিমানা করা হবে।এ বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে ইউএইর বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম কাউন্সিলর লুৎফুল হক কাজমী বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই বাংলাদেশিদের আরব অমিরাতে থাকার বৈধ সময় শেষ হয়ে গিয়েছিল। এরপর সুজন নামের এক দালাল তাঁদের শারজা ও দুবাই থেকে আবুধাবি আনেন। পরে পুলিশ তাঁদের গ্রেপ্তার করে। আমি এ ব্যাপারে পুলিশের সঙ্গে কথা বলেছি। শিগগিরই ওই বাংলাদেশিদের দেশে ফেরত পাঠানো হবে।’মিয়ানমারে বন্দী ৬০ বাংলাদেশি: সূত্র জানায়, গত ১ এপ্রিল মিয়ানমারের রাজধানী ইয়াঙ্গুন থেকে ১৫০ মাইল দূরে উপকূলীয় জেলা পাথেইনে ৬০ বাংলাদেশিসহ ১৪৬ জনকে আটক করে মিয়ানমারের নৌবাহিনী। তাঁরা নদীতে বড় একটি নৌকায় ছিলেন। ভ্রমণসংক্রান্ত বৈধ কাগজপত্র না থাকায় নৌবাহিনী বাংলাদেশিদের পাথেইন পুলিশের কাছে সোপর্দ করে। পরে তাঁদের পাথেইন কারাগারে পাঠানো হয়। মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ৭ এপ্রিল আটক ব্যক্তিদের নাম-পরিচয় ইয়াঙ্গুনের বাংলাদেশ দূতাবাসে জানায়।জানা গেছে, এত বন্দীর খাবার জোগাতে বিপাকে পড়া পাথেইন কারাগার কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে স্থানীয় লোকজনের সহায়তা চায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় লোকজন চাঁদা তুলে বাংলাদেশিদের খাবার জোগাচ্ছেন। খাবার সরবরাহ করা লোকজনকে বাংলাদেশিরা জানিয়েছেন, দালালেরা তাঁদের থাইল্যান্ডে পাঠানোর কথা বলে টাকা নেয়। তাঁদের কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে নৌপথে মিয়ানমারের পাথেইনের পর্যটন এলাকা চাওনডা সৈকতের কাছে এনে নৌকায় তুলে দেয় দালালেরা। চাওনডা দেখতে থাইল্যান্ডের সৈকতগুলোর মতো হওয়ায় দালালেরা থাইল্যান্ডে পৌঁছানোর দাবি করে তাঁদের সেখানে নৌকায় রেখে পালিয়ে যায়। টহলের সময় মিয়ানমারের নৌবাহিনী তাঁদের আটক করে। তাঁদের খাবারের বন্দোবস্ত করা স্থানীয় লোকজন কয়েকজন প্রবাসীকে জানিয়েছেন, চাঁদা তুলে এভাবে খাবার জোগানো বেশি দিন সম্ভব হবে না।এ বিষয়ে ইয়াঙ্গুনের বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সিলর গোলাম মোস্তফা প্রথম আলোকে বলেন, ‘দূতাবাসে জানানো হয়েছে যে বৈধ কাগজপত্র না থাকায় ৬০ জন বাংলাদেশিকে আটক করা হয়েছে। কারাগারে গিয়ে কথা বলে নিশ্চিত করা হবে, তাঁরা বাংলাদেশি কি না। যাঁদের বাংলাদেশি হিসেবে শনাক্ত করা হবে, দূতাবাস তাঁদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে।’ তিনি জানান, দুই-এক দিনের মধ্যে দূতাবাসের কর্মকর্তারা সেখানে যাবেন।এসব বিষয়ে জানতে চাইলে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ বুরে্যার (বিএমইটি) মহাপরিচালক খোরশেদ আলম চৌধুরী গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, বৈধ কাগজপত্র ছাড়া কারোরই চাকরি নিয়ে বিদেশ যাওয়া উচিত নয়। এ ব্যাপারে সবার সতর্ক থাকা উচিত।জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বায়রার সভাপতি আবুল বাশার বলেন, একশ্রেণীর দালাল নানা প্ররোচনায় অবৈধভাবে বিদেশে লোক পাঠানোর সঙ্গে জড়িত। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উচিত, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া।