শরিফুল হাসান
অনুদান কমে যাওয়ায় বিদেশি সাহায্যপুষ্ট হাজার খানেক এনজিওর এখন কোনো কাজ নেই। এর মধ্যে অন্তত ৮০০ এনজিও নির্ধারিত সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরও নিবন্ধন নবায়ন করেনি।
ফেডারেশন অব এনজিওস ইন বাংলাদেশের (এফএনবি) পরিচালক তাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, কয়েক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে, দাতারা ছোট এনজিওগুলোকে সরাসরি অনুদান দিচ্ছে না। তারা বড় এনজিওগুলোকে কিংবা এ-সম্পর্কিত কিছু প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অনুদান দিচ্ছে। অনুদানপ্রাপ্তরা তাদের সঙ্গে যাদের সম্পর্ক আছে, সেই এনজিওগুলোই অংশীদারির ভিত্তিতে কাজ দিচ্ছে। ফলে কাজ ও অর্থসংকটে অনেক এনজিও এখন আর নিবন্ধন নবায়ন করছে না। আবার নিবন্ধন নবায়ন-প্রক্রিয়াতেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা আছে বলে দাবি করেন তিনি।
এনজিওবিষয়ক ব্যুরোর একজন কর্মকর্তা বলেন, খরচ বাড়বে, মনিটরিংয়ে সমস্যা হবে ভেবে সুনির্দিষ্ট কিছু এনজিওর বাইরে কাজ দেয় না দাতারা। ফলে ১০ হাজার টাকা দিয়ে পাঁচ বছরের জন্য নিবন্ধন নবায়নও করতে চাইছে না ছোট এনজিওগুলো।
এনজিওবিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক নূরুন নবী তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, ব্যুরোর মাধ্যমে এনজিওগুলোর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা হয়। তাই যেসব এনজিও নিবন্ধন নবায়ন করছে না, তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া ছাড়া উপায় নেই।
২০১৩ সালের ৩১ জুলাই পর্যন্ত তথ্য অনুযায়ী, এনজিওবিষয়ক ব্যুরোতে নিবন্ধিত এনজিওর সংখ্যা দুই হাজার ২৫২। ব্যুরোর আইন অনুযায়ী, কোনো এনজিওর মেয়াদ শেষ হওয়ার অন্তত ছয় মাস আগে নিবন্ধন নবায়নের জন্য আবেদন করতে হয়। কিন্তু চলতি বছর ১২০টি এনজিও মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও নিবন্ধন নবায়ন করেনি।
এ ছাড়া ২০১২ সালে ১০৮টি, ২০১১ সালে ২০১টি, ২০১০ সালে ১০৫টি, ২০০৯ সালে ৪৪টি, ২০০৮ সালে ২৫টি, ২০০৭ সালে ২০টি, ২০০৬ সালে ২৯টি, ২০০৫ সালে ৩৬টি, ২০০৪ সালে ৩৫টি, ২০০৩ সালে ২৭টি, ২০০২ সালে ৩৭টি, ২০০১ সালে ২৭টি ও ২০০০ সালে ২৬টি এনজিওর মেয়াদ পেরিয়ে গেলেও সেগুলো নিবন্ধন নবায়ন করেনি।
এনজিওগুলো যা বলছে: ১৯৯১ সালে এনজিওবিষয়ক ব্যুরো থেকে নিবন্ধন নিয়ে বরিশাল অঞ্চলে কাজ শুরু করেছিল বেসরকারি সংস্থা সামাজিক উন্নয়ন সংস্থা। কিন্তু নিবন্ধনের সময় পেরিয়ে গেলেও নবায়ন করেনি তারা। প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক মুজিবর রহমান শিকদার বলেন, ‘একসময় বিদেশি অনুদান পেয়েছি। এখন পাচ্ছি না। অবস্থা ভালো না। তবে এবার আবেদন করেছি। টাকা জমা দেব।’
প্রতিবন্ধীদের জন্য কাজ করার উদ্দেশ্য নিয়ে ২০০১ সালে টাঙ্গাইলে কাজ শুরু করে টাঙ্গাইল প্রতিবন্ধী উন্নয়ন সংস্থা। কিন্তু পরে তারা আর নবায়ন করেনি। প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘বিদেশি অনুদান পাওয়ার পর কাজ করতে গিয়েই নিবন্ধন নিয়েছিলাম। পরে আর কাজ পাইনি। এখন নিবন্ধন করার মতো সামর্থ্যও নেই।’
ভলান্টারি ফ্যামিলি ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন নামের একটি এনজিও কাজ শুরু করেছিল ফরিদপুর অঞ্চলে। প্রতিষ্ঠানটির সচিব নির্মল দাস বলেন, ‘১৯৯৭ সালে হংকংয়ের একটি অনুদান পেয়েছিলাম। তখন বয়স্ক শিক্ষা উন্নয়নে কাজ করেছিলাম। অনেক দিন ধরে অনুদান বা কাজ পাচ্ছি না। কাজ পেলে নিবন্ধন নবায়ন করব।’
অ্যাসোসিয়েশন অব ডেভেলপমেন্ট এজেন্সিস বাংলাদেশের (অ্যাডাব) ভাইস চেয়ারম্যান রফিকুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, এখন দাতারা তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ এনজিওগুলোকেই কেবল কাজ দেয়। কিন্তু গরিব মানুষের কাজের জন্য টাকা আনলে তো ছোট-বড় সব এনজিওকেই কাজ দেওয়া উচিত। এ ব্যাপারে সবার দৃষ্টি দেওয়া দরকার।