ভোলায় আ.লীগের বিরুদ্ধে আ.লীগ, সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা
শরিফুল হাসান
ভোলার চারটি পৌরসভায়ই মেয়র পদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ। সব কেন্দ্রের সমর্থন পাওয়া প্রার্থীরা প্রতিপক্ষকে ভয়ভীতি ও কেন্দ্র দখলের হুমকি দিচ্ছেন বলে দলটির বিদ্রোহী প্রার্থীরা অভিযোগ করেছেন। ইতিমধ্যে লালমোহন পৌরসভায় একাধিক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। সেখানে দুজন নিজেদের আওয়ামী লীগের সমর্থিত প্রার্থী বলে দাবি করছেন। এর মধ্যে স্থানীয় সাংসদ নুরন্নবী চৌধুরী ওরফে শাওনের মনোনীত প্রার্থী হলেন এমদাদুল ইসলাম। ১৩ জানুয়ারি ভোলার চার পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তবে ক্ষমতাসীন দলটির প্রার্থীদের দাপটে ইতিমধ্যে এখানে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে কি না, এ নিয়ে জনমনে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। গতকাল রোববার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নির্বাচন নিয়ে আইনশৃঙ্খলা কমিটির বৈঠকেও একই শঙ্কা ও আতঙ্কের কথা জানিয়েছেন কয়েকজন প্রার্থী। তবে জেলা প্রশাসক মেসবাহুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘কোনো প্রার্থীরই আতঙ্কের কোনো কারণ নেই। কোনো প্রার্থীই কোনোভাবেই প্রভাব বিস্তার করতে পারবেন না। ভালো একটি নির্বাচন দেওয়ার জন্য আমরা প্রস্তুত।’নির্বাচন কমিশন ভোলা সদর ও লালমোহনে ভোটের সময় সেনাবাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন বাকি দুই পৌরসভায়ও সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি তুলেছেন প্রার্থীরা। ভোলার পুলিশ সুপার বশির আহমেদ দাবি করেন, নির্বাচনী পরিবেশ এবার ভালো। যেকোনো মূল্যে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করা হবে। সদর পৌরসভা: ভোলা সদর পৌরসভায় মেয়র পদে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুই দলেরই দুজন করে প্রার্থী রয়েছেন। এর মধ্যে এখানে আওয়ামী লীগের সমর্থিত প্রার্থী হলেন জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মমিনও এখানে প্রার্থী। তিনি নিজেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বলে দাবি করছেন। এ নিয়ে এখানে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি গোলাম মোস্তফা সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ করেন, মনিরুজ্জামানকেই তৃণমূলের প্রার্থী করা হয়েছিল। কিন্তু প্রতারণা করে মমিনকে প্রার্থী করা হয়। তাই তিনি মনিরুজ্জামানকে সমর্থন দিচ্ছেন।জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলে কাদের মজনু মোল্লা প্রথম আলোকে বলেন, তৃণমূলের মতামতেই আবদুল মমিনকে সমর্থন দেওয়া হয়। কিন্তু কিছু ব্যক্তি সাংগঠনিক নীতিমালা ভঙ্গ করে মনিরুজ্জামানকে সমর্থন দিচ্ছেন। তিনি অভিযোগ করেন, ‘মনিরুজ্জামানের পক্ষের কর্মীরা আমাদের হুমকি দিচ্ছে। বহিরাগত ব্যক্তিরা অস্ত্র নিয়ে আসছে। আমরা জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে বিষয়টি জানিয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেছি।’মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ করেছেন বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী, দলটির জেলা সভাপতি ও বর্তমান মেয়র গোলাম নবী আলমগীর এবং বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী ও দলটির জেলা সহসভাপতি শফিউর রহমান। তবে মনিরুজ্জামান এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন। লালমোহন: এই পৌরসভায়ও প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের দুজন করে চারজন মেয়র প্রার্থী মাঠে আছেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের সমর্থিত প্রার্থী হলেন স্থানীয় সাংসদ নুরুন্নবী চৌধুরীর (শাওন) চাচাতো ভাই এমদাদুল ইসলাম।আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী এ কে এম মিজানুর রহমান এখন নিজেকে নাগরিক কমিটির প্রার্থী বলে দাবি করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাংসদ শাওন তৃণমূলের মতামত না নিয়ে তাঁর চাচাতো ভাই এমদাদুল ইসলামকে এখানে প্রার্থী ঘোষণা করেছেন। সাংসদ নির্বাচনী জনসভা করে নির্দেশ দিয়েছেন যেকোনো মূল্যে এমদাদকে জয়ী করতে হবে। নইলে কারও রক্ষা নেই। সাংসদ হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতাদের তলব করে এমদাদ ছাড়া অন্য কাউকে ভোট দিলে সমস্যা হবে বলে হুমকি দিয়েছে।’স্থানীয় সাংসদ নুরন্নবী চৌধুরী এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এমদাদকে আমি আত্মীয় হিসেবে সমর্থন দিইনি। তিনি তৃণমূলের সমর্থন পেয়েছেন। তাই তাঁকে সমর্থন দিয়েছি।’লালমোহন পৌরসভায় বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী এনায়েত কবীর এবং বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী মনিরুজ্জামান মনির অভিযোগ করেছেন, স্থানীয় সাংসদ আচরণবিধি লঙ্ঘন করে তাঁর আত্মীয় এমদাদুলের পক্ষে কাজ করেছেন। এমদাদুল বিভিন্নভাবে তাঁদের হুমকি দিয়ে ভোট কেন্দ্রে যেতে নিষেধ করছেন। বোরহানউদ্দিন: বোরহানউদ্দিন পৌরসভায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্র থেকে সমর্থন পেয়েছেন রফিকুল ইসলাম। তাঁর বিপরীতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী হলেন নুরই আলম চৌধুরী ওরফে টিপু চৌধুরী।একইভাবে এখানে বিএনপিরও প্রার্থী দুজন। তবে দলটির সমর্থন পেয়েছেন বর্তমান মেয়র সাইদুর রহমান ওরফে মিলন। আর বিদ্রোহী প্রার্থী হলেন আনোয়ার হোসেন ভূঁইয়া। আনোয়ারকে এ আসনে বিগত সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) প্রার্থী আশিকুর রহমান সমর্থন দিয়ে গণসংযোগ করেছেন।এদিকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রফিকুলের বিরুদ্ধে বাকি তিন মেয়র প্রার্থীদের অভিযোগ, ‘রফিকুল ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে পৌর এলাকায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রতিপক্ষের কর্মী, সমর্থক ও ভোটারদের হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও স্কুলশিক্ষকদের নির্বাচনী কাজে ব্যবহার করছেন।’ তিন প্রার্থীই এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনে লিখিত অভিযোগ করে সেখানে সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি জানিয়েছেন।রফিকুল এসব অভিযোগ অস্বীকার করে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি কাউকে হুমকি দিচ্ছি না। আচরণবিধি মেনেই আমি সব করছি। কিন্তু প্রতিপক্ষের লোকজন আমার জনপ্রিয়তা দেখে টাকা দিয়ে ভোট কেনার চেষ্টা করছে।’দৌলতখান: এখানে নাছির খান ও আলী আজম দুজনই নিজেকে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে দাবি করে নির্বাচনী প্রচার চালাচ্ছেন। এই পৌরসভায় বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মাকসুদুর রহমান শিকদার। তিনি অভিযোগ করেন, আলী আজমের লোকজনের দাপটে তাঁর কর্মীরা মাঠে থাকতে পারছেন না। এমনকি তিনি নিজেও ধাওয়া খেয়েছেন। আলী আজম এই অভিযোগ অস্বীকার করে পাল্টা অভিযোগ করেন নিজ দলীয় আরেক প্রার্থী নাছির খানের বিরুদ্ধে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সমর্থনের দাবিদার আরেক প্রার্থী কেন্দ্র দখল করে নির্বাচনে জয়ী হওয়ার হুমকি দিচ্ছেন। কিন্তু এমনটি হলে জনগণই তাঁকে প্রতিহত করবে।’নাছির খান এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, ‘আমি সুন্দর পৌরসভা গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে জনগণের কাছে যাচ্ছি। কাউকে হুমকি দিচ্ছি না।’



