শরিফুল হাসান
পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর প্রায় দুই বছর হয়ে গেলেও দক্ষিণ কোরিয়ায় যেতে ইচ্ছুক এক হাজার ৬৬১ কর্মপ্রার্থীর অপেক্ষার প্রহর শেষ হচ্ছে না। হতাশ এই প্রার্থীরা বলছেন, আর কয়েক মাসের মধ্যে যেতে না পারলে তাঁদের যোগ্যতার মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
সরকারি জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট সার্ভিসেস লিমিটেড (বোয়েসল) কর্তৃপক্ষ বলছে, ২০০৮ থেকে এ পর্যন্ত ১০ হাজার কর্মী দক্ষিণ কোরিয়া গেছেন এবং সবকিছু নিয়মমাফিকই হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের করণীয় আর কিছু নেই।
দক্ষিণ কোরিয়া যেতে হলে লটারির মাধ্যমে বাছাই হওয়া প্রার্থীদের কোরীয় ভাষায় ২০০ নম্বরের পরীক্ষা দিতে হয়। এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা দিতে হয়। তাতে উত্তীর্ণদের তালিকা দক্ষিণ কোরিয়ায় পাঠালে দেশটি নির্বাচিত প্রার্থীদের একটি তালিকা (জব রোস্টার) করে। সেখান থেকে দৈবচয়ন ভিত্তিতে কর্মী নেয় দেশটি। এই তালিকার মেয়াদ থাকে দুই বছর।
২০১২ সালের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ তোফাজ্জল হোসেন গতকাল শনিবার প্রথম আলোকে জানান, ওই বছর চারটি পরীক্ষায় তিন হাজার ৮৭ জন প্রার্থী যোগ্য বিবেচিত হন। চার ধাপে এক হাজার ৪২৬ জন প্রার্থী কোরিয়ায় গেছেন। এক হাজার ৬৬১ জন এখনো যেতে পারেননি। কয়েক মাস পরই একে একে তাঁদের মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে।
২০১২ সালে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের অভিযোগ, তাঁরা এক হাজার ৬৬১ জন যেতে না পারলেও ২০১৩ সালে উত্তীর্ণ প্রার্থীরা কোরিয়ায় যাওয়া শুরু করে দিয়েছেন। গত ফেব্রুয়ারিতে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আসা ৪৬০টি ভিসার মধ্যে ৪৫২টিই পেয়েছেন ২০১৩ সালের প্রার্থীরা।
২০১২ সালে উত্তীর্ণ বাবুমণি চাকমা, নজরুল ইসলাম, ওয়াসিমসহ আরও অনেকেই বলেন, তাঁরা সবকিছু বাদ দিয়ে ভাষা শিক্ষা, স্বাস্থ্য পরীক্ষা—এসব করে দুই বছর ধরে অপেক্ষা করছেন। তাঁরা সবাই অভিযোগ করে বলেন, দৈবচয়ন পদ্ধতিতেই প্রার্থী ঠিক করা হলে ২০১৩ সাল থেকে কেন প্রায় সবার নাম আসবে?
উত্তীর্ণ এই প্রার্থীরা বলেন, আড়াই মাসের মধ্যে ৩০০ প্রার্থীর যোগ্যতার মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। বাকিদের শেষ হবে এই বছরের মধ্যেই। কিছুদিন আগে তাঁরা বোয়েসলে স্মারকলিপি দেন ও প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। মন্ত্রী তাঁদের সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন। কিন্তু সমস্যার সমাধান না হওয়ায় তাঁরা মানববন্ধন ও সর্বশেষ ১ এপ্রিল অনশন করেন।
এ বিষয়ে বোয়েসলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল হান্নান গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, দক্ষিণ কোরিয়া বাংলাদেশসহ ১৫টি দেশ থেকে ইপিএস পদ্ধতিতে কর্মী নেয়। এ ক্ষেত্রে পরীক্ষা নেওয়া, কর্মী পছন্দ করা, ভিসা পাঠানো, যোগ্যদের বাছাই করা—সবকিছুই তারা করে। আর তালিকায় থাকলেই সবাই যে দেশটিতে যেতে পারবেন, এমন কোনো কথা কখনো বলা হয়নি। যতজন যাবেন, তার চেয়ে তিন গুণ বেশি কর্মীর তালিকা তারা তৈরি করে রাখে।