আ.লীগকে নিয়ে শঙ্কায় বনমন্ত্রীর প্রার্থীরা
শরিফুল হাসান
নিজেদের দুর্গে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর জাতীয় পার্টির (জেপি) প্রার্থীরা। আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে এ চিত্র পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া, কাউখালী ও জিয়ানগর এলাকায়। এরই মধ্যে নির্বাচন কমিশন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে এ বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়ে চিঠিও দিয়েছেন তাঁরা।
তবে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের দাবি, তাঁদের বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষকে বাধা ও হুমকি দেওয়ার যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা সঠিক নয়।
বরিশাল থেকে ঝালকাঠি, এরপর রাজাপুর উপজেলা পার হলেই পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া। বরিশাল ও ঝালকাঠির বিভিন্ন সড়কে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাদের অনেক বিলবোর্ড ও পোস্টার থাকলেও ভান্ডারিয়ায় ঢুকতেই চোখে পড়বে সর্বত্র আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর ছবি। স্থানীয় লোকজন জানালেন, এই তিন উপজেলায় জেপির ভোট বেশি। তবে এবারের ইউপি নির্বাচনে জেপির প্রার্থীদের সহজে ছেড়ে দেবে না আওয়ামী লীগ। এই তিন উপজেলার ১১টির মধ্যে নয়টিতে বিএনপির প্রার্থী থাকলেও তাঁরা বেশ দুর্বল।
ভান্ডারিয়া উপজেলা জেপির আহ্বায়ক মনিরুল হক জমাদ্দার বলেন, ‘আমাদের আশঙ্কা ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা জোর করে জয় ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করবে। ভিটাবাড়িয়া ও ইকড়িতে এই আশঙ্কা খুব বেশি। প্রশাসনকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।’
জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাংসদ এ কে এম এ আউয়াল প্রথম আলোকে বলেন, জেপির এ ধরনের অভিযোগ ভিত্তিহীন। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন দেখে সাধারণ মানুষ নৌকায় ভোট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
মাঠের চিত্র: ভান্ডারিয়ার ভিটাবাড়িয়া ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান মশিউর রহমান মৃধা বাইসাইকেল নিয়ে নির্বাচন করছেন। ভান্ডারিয়া উপজেলা জেপির এই যুগ্ম আহ্বায়ক গতকাল দুপুরে বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচন হলে এই এলাকার ৯০ ভাগ মানুষই সাইকেলে ভোট দেবে। কিন্তু আমার এলাকায় নৌকার প্রার্থী ঘোষণা দিয়েছেন সব ভোট তাঁর পক্ষে যাবে। তাঁর লোকজন সাধারণ মানুষকেও হুমকি দিচ্ছেন। আমরা নির্বাচন কমিশন, র্যা ব সব জায়গায় চিঠি দিয়েছি।’
তবে ভিটাবাড়িয়ায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী খান এনামুল করিম এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর জিজ্ঞাসা, ‘আওয়ামী লীগ কী কখনো কেন্দ্র দখল করে? উল্টো জেপির লোকজনই মন্ত্রীর দোহাই দিচ্ছে। প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে মন্ত্রীর লোকজন। কারণ তারা বুঝতে পারছে আমি জয়ী হব।’
ইকড়িতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন হুমায়ুন কবির। এখানে জেপির প্রার্থী সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল হাই হাওলাদার। আবদুল হাই অভিযোগ করে বলেন, ‘বিভিন্ন জায়গায় আমাদের কর্মীদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। ৪ মার্চ জেপির প্রেসিডিয়াম সদস্য তাসমিমা হোসেন (আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর স্ত্রী) এলাকায় এসেছিলেন নির্বাচনী প্রচারণায়। সেদিন রাতেই আমাদের সব পোস্টার ছিঁড়ে ফেলেছে আওয়ামী লীগের কর্মীরা। আমি রিটার্নিং কর্মকর্তা ও থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।’
ভান্ডারিয়ার তেলিখালী ইউনিয়নের বিএনপির প্রার্থী মির্জা গোলাম কিবরিয়া মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেননি। বর্তমান চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন এখানে পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর জেপির বাইসাইকেল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। নৌকা প্রতীক নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে নির্বাচন করছেন তাঁরই ছেলে মুহাম্মদ শামসুদ্দিন। তাঁর দাবি, এবার নৌকা এখানে জয়ী হবে।
জিয়ানগর উপজেলার একটি মাত্র ইউনিয়নে নির্বাচন হচ্ছে। এখানে নৌকা প্রতীক নিয়ে কবির হোসেন বয়াতি আর বাইসাইকেল নিয়ে বর্তমান চেয়ারম্যান মশিউর রহমান নির্বাচন করছেন। মশিউর রহমান গতকাল বলেন, বিভিন্ন স্থানে তাঁর কর্মীদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ভোটের দিন এলাকায় র্যা ব মোতায়েনের দাবি জানিয়েছেন তিনি।
কাউখালীর চিড়াপাড়ার বর্তমান চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম জেপির মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করছেন। জেপির প্রার্থী হয়েছেন বজলুর রহমান। এখানে নৌকার প্রার্থী মাহমুদ খোকন। এই ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান জাফর আলী খান আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করছেন। তিনি ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ইসহাক আলী খান পান্নার ভাই।
কাউখালী সদর ইউনিয়নে নৌকা ও বাইসাইকেলের মধ্যে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে মনে করছেন এলাকার লোকজন। এখানে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন বর্তমান চেয়ারম্যান আমিনুর রশিদ। জেপির কাউখালী উপজেলা সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বাইসাইকেল প্রতীক নিয়ে। শাহ আলম বলেন, ‘আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা এমনভাবে প্রচারণা চালাচ্ছেন যেন সাধারণ মানুষ ভয় পায়। আমরা সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ জানিয়েছি।’
পিরোজপুরের জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আরিফুল হক বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন করার জন্য কার্যকর সব উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। কোথাও যদি কোনো প্রার্থীকে কেউ হুমকি দেয়, ভয়ভীতি দেখায় তবে তিনি রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিতে পারেন। এরপর আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।