আটকে আছে প্রকল্প

Spread the love

প্রাথমিকের উপবৃত্তি বন্ধ আট মাস

শরিফুল হাসান


আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি বন্ধ হয়ে আছে আট মাস ধরে। বিদ্যালয়ে শিশুদের ঝরে পড়া কমানোর জন্য এ প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল। বৃত্তির টাকা না পাওয়ায় অনেক শিশুর স্কুলে উপস্থিতির হার কমে গেছে বলে শিক্ষকেরা অভিযোগ করেছেন।
রংপুরের পীরগঞ্জের নখারপাড়ার ভ্যানচালক আবুল কালাম জানান, তাঁর ছেলে সেফাউল ইসলাম পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। বৃত্তির টাকা তাঁদের খুবই কাজে লাগছিল। ওই টাকায় তিনি ছেলের স্কুলের খাতা কিনে দিতেন, পোশাক বানিয়ে দিতেন। কিছু টাকা সংসারে টুকটাক কাজেও লাগত। এখন টাকা বন্ধ। কবে চালু হবে, শিক্ষকেরা জানাতে পারছেন না।
দরিদ্র পরিবারের শিশুদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি বাড়ানো, শ্রেণিকক্ষে উপস্থিতি বাড়ানো ও ঝরে পড়া কমাতে ২০০২ সাল থেকে উপবৃত্তি চালু করে সরকার। শিক্ষার্থীরা পাচ্ছিল মাসে ১০০ টাকা করে। পরিবারে একাধিক ভাইবোন থাকলে ১২৫ টাকা। দুই দফায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়। কিন্তু তৃতীয় পর্যায়ে পা রাখতে গিয়ে আটকে আছে প্রকল্প।
কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার ব্রান্দন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এনামুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘মঙ্গাপীড়িত এই এলাকার স্কুলটিতে ১৪০ জন শিশু উপবৃত্তি পেত। আট মাস ধরে বৃত্তির টাকা বন্ধ। অভিভাবকেরা বারবার আমাদের কাছে জানতে চান কবে টাকা আসবে। আমরা বলি আপনারা বাচ্চাদের স্কুলে পাঠানো বন্ধ করবেন না। টাকা আসবে।’ একই জেলার ভূরুঙ্গামারী উপজেলার পশ্চিম চর গোপালপুর স্কুলের প্রধান শিক্ষক আশরাফুল ইসলাম বলেন, বৃত্তি বন্ধ হওয়ায় তাঁর স্কুলে ৩০ জন ছাত্র কমে গেছে। অনেকেই শিশুশ্রমে যুক্ত হচ্ছে।
সাতজন জেলা ও প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এবং উপবৃত্তি প্রকল্পের চারজন জেলা মনিটরিং কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেছেন, ৬ থেকে ১০ বছরের সব শিশুকে প্রাথমিক শিক্ষার আলোয় আলোকিত করতে এই উপবৃত্তি খুব কার্যকর ভূমিকা পালন করছিল। এখন বন্ধ থাকায় মাঠপর্যায়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
প্রকল্পটির দ্বিতীয় পর্যায়ের মেয়াদ শেষ হয় গত বছরের জুনে। আগের সাফল্য দেখে তৃতীয় পর্যায়ে উপবৃত্তির পরিধি আরও বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় মন্ত্রণালয়। ঠিক হয়, ২০১৭ সাল পর্যন্ত বৃত্তিভোগীর সংখ্যা দ্বিগুণ করা হবে। বড় শহরগুলোর বাইরে গ্রামাঞ্চলে সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সব শিশু আসবে এটির আওতায়। সে হিসাবে ১ কোটি ১৪ লাখ শিশু বৃত্তি পাবে। আগে ৭৮ লাখ শিশু বৃত্তি পাচ্ছিল। এবার পঞ্চম শ্রেণি পেরিয়ে ১৬ লাখ শিশু অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত বৃত্তি পাবে।
এই উপবৃত্তি প্রকল্পের পরিচালক ইরতিজা আহমেদ চৌধুরী বলেন, তৃতীয় পর্যায়ের প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এখনো সেটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) অনুমোদন পায়নি। তিনি আরও বলেন, উপবৃত্তি প্রকল্প চালু হলে গত আট মাসের টাকাও শিশুরা পাবে।
নতুন প্রকল্প কবে নাগাদ আলোর মুখ দেখবে, জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, প্রকল্পটিকে অগ্রাধিকার দিতে তিনি অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রীকে তাগাদা দিয়েছেন। কেননা, এটার সাফল্য সবার কাছেই স্পষ্ট। এদিকে অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আবদুল মান্নান প্রথম আলোকে বলেন, প্রকল্পটি অগ্রাধিকার না পাওয়ার কোনো কারণ নেই। সরকারের ভালো প্রকল্পগুলোর মধ্যে এটি একটি। শিগগিরই তিনি প্রকল্পটি অনুমোদনের উদ্যোগ নিচ্ছেন।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) নির্বাহী পরিচালক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, উপবৃত্তি প্রকল্পটি বলতে গেলে বাংলাদেশের একটা নিজস্ব ব্র্যান্ড। এমন একটি প্রকল্প আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় দীর্ঘায়িত হওয়া দুঃখজনক।

Leave a Reply

Your email address will not be published.