শরিফুল হাসান
রাজধানীর কল্যাণপুর খালের একাংশ দখল করে সেখানে দলীয় কার্যালয় বানিয়েছে ছাত্রলীগ। কার্যালয়ের নতুন ঘরের সামনে ‘৪১ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগ’ সাইনবোর্ড টাঙানো হয়েছে। এলাকাবাসী জানিয়েছে, ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি শহীদুল আলম খান ওরফে কাজলের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা সপ্তাহখানেক আগে বাঁশ-কাঠ দিয়ে এই কার্যালয় বানান। মাস দুয়েক আগেও ওই জায়গায় খালের ওপর ছাত্রলীগ তাদের কার্যালয় বানানোর উদ্যোগ নেয়। কিন্তু মোহাম্মদপুর থানার পুলিশ তখন সেটি ভেঙে দেয়। এবার কার্যালয় করার সময় মোহাম্মদপুর থানা ছাত্রলীগের শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন নেতা উপস্থিত ছিলেন। কার্যালয় বানানোর খরচ জোগাতে আশপাশের কয়েকজন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে চাঁদা নেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।এলাকাবাসী জানায়, গত মাসের শেষ দিকে এই খালের আশপাশে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছিল ঢাকা ওয়াসা। এরপর এই কার্যালয়টি হয়। এলাকাবাসীর আশঙ্কা, এই কার্যালয়টি বৈধতা পেলেই এর পাশ দিয়ে দোকান গড়ে তোলা হবে। ছাত্রলীগ নেতা যা বললেন: ছাত্রলীগের ৪১ নম্বর ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি কাজল চাঁদাবাজির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি দাবি করেছেন, কার্যালয় বানাতে হাজার চল্লিশেক টাকা খরচ হয়েছে। নিজেরা চাঁদা দিয়ে তাঁরা এটা করেছেন। খাল দখল করে কার্যালয় বানালেন কেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা সরকারি দলের ছাত্র সংগঠন। কিন্তু কার্যালয় নেই। তাই খালের ওপর অস্থায়ী একটি কার্যালয় বানিয়েছি।’ কারও অনুমতি নিয়েছেন কি না, জানতে চাইলে কাজল বলেন, এটা অস্থায়ী কার্যালয়। এ জন্য কারও অনুমতির প্রয়োজন নেই। কাজল বলেন, ‘যদি অন্য কোথাও জায়গা পাই তাহলে এই কার্যালয় সরিয়ে নেব। এ জন্য বাঁশ-কাঠ দিয়ে কার্যালয় বানানো হয়েছে, যাতে ভেঙে ফেলা যায়।’এর আগে কার্যালয় পুলিশ ভেঙে দিয়েছিল কেন—জানতে চাইলে ছাত্রলীগের নেতা বলেন, ‘সে সময় খালের বেশি ভেতরে চলে গিয়েছিলাম। সেটা সবার কাছে দৃষ্টিকটু মনে হয়েছিল। তাই পুলিশ ভেঙে ফেলেছে। আমরাও মেনে নিয়েছি।’ তিনি দাবি করেন, ’৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত এখানে ছাত্রলীগের কার্যালয় ছিল।কোথায় এই দখল: কল্যাণপুর বাসস্ট্যান্ড যাওয়ার আগে সড়কের কালভার্টের ওপর দাঁড়িয়ে ডান দিকে তাকালেই চোখে পড়বে খালের ওপর একটি বিরাট ঘর। যেতে হয় শ্যামলীর ৪ নম্বর সড়ক ধরে। বেড়ার ঘরের সামনে সাইনবোর্ড ঝোলানো। কার্যালয়ের পাশে জান্নাতুল ফেরদৌস জামে মসজিদ। গতকাল দুপুরে সরেজমিন গেলে স্থানীয় লোকজন জানান, আট-দশ দিন আগে হঠাত্ করে তাঁরা খালের ওপর এই ঘরটি দেখেন। জান্নাতুল ফেরদৌস জামে মসজিদের মুয়াজ্জিন জাহিদ হোসেন বলেন, ‘সন্ধ্যার পর কাজল ভাই আর তাঁর বন্ধুরা এখানে এসে আড্ডা দেন। মাঝে মাঝে আমাদের সালাম দেন।’ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৪১ নম্বর ওয়ার্ড কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে ছয় বছর আগে। নতুন কমিটি না হওয়ায় কাজলই সব দেখভাল করেন। বিষয়টি স্বীকারও করেন কাজল। তিনি বলেন, ২০০২-০৩ সালে এই কমিটি হয়েছিল। কমিটির সাধারণ সম্পাদক দেশের বাইরে। সাংগঠনিক সম্পাদক সরকারি চাকরি করছেন। আপাতত তিনিই ‘কষ্ট করে দল সামলাচ্ছেন।’ ৪১ নম্বর ওয়ার্ডটি আগে মোহাম্মদপুর থানায় থাকলেও বর্তমানে নতুন হওয়া শেরেবাংলা নগর থানায় পড়েছে। শেরেবাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রিয়াজ হোসেন গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, কার্যালয়টি তাঁর চোখে পড়েনি। সত্যিই খালের ওপর কোনো কার্যালয় থাকলে পুলিশ দ্রুত উচ্ছেদের ব্যবস্থা নেবে।



