প্রিমিয়ার ব্যাংকের এ কী কাণ্ড!

Spread the love

শরিফুল হাসান

চার দিন নিজেদের কাছে আটকে রাখার পর এক কর্মকর্তাকে পুলিশে দিয়েছে প্রিমিয়ার ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। ওই কর্মকর্তাকে ব্যাংকের বনানীর প্রধান কার্যালয়ে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।ওই ব্যাংক কর্মকর্তার নাম শাহিনুর রহমান। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক সাংসদ এইচ বি এম ইকবালের মালিকানাধীন প্রিমিয়ার ব্যাংকের মতিঝিল করপোরেট শাখার ব্যবস্থাপক ছিলেন। গত বুধবার তিনিসহ ওই ব্যাংকের পাঁচ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ। ঘটনার পর থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন। গতকাল রোববার বিকেলে তাঁকে মতিঝিল থানায় হস্তান্তর করে ব্যাংকটির কর্তৃপক্ষ। ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি বিসমিল্লাহ গ্রুপ নামে একটি বেসরকারি সংস্থার বিরুদ্ধে ঋণ জালিয়াতির মাধ্যমে কয়েকটি ব্যাংক থেকে কয়েক শ কোটি টাকা উত্তোলনের প্রমাণ পায় বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই ঘটনার পর প্রিমিয়ার ব্যাংকের মতিঝিল শাখার ব্যবস্থাপক শাহিনুর রহমান, কর্মকর্তা আবদুর রহিম, আরিফ হোসেন, তানজিবুল ইসলাম ও শাহাদাতকে বরখাস্ত করা হয়।অভিযোগ উঠেছে, প্রিমিয়ার ব্যাংকের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা এই ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় জড়িত থাকলেও এখন ঘটনার দায় অন্যদের ওপর চাপিয়ে তাঁদের ফাঁসানোর চেষ্টা চলছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রিমিয়ার ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, বরখাস্ত করার পরদিন বৃহস্পতিবার ওই কর্মকর্তাদের ইকবাল সেন্টারে প্রধান কার্যালয়ে ডেকে নেওয়া হয়। এরপর ১৯ তলা ওই ভবনের নয়তলায় তাঁদের আটকে রাখা হয়। ছয়জন প্রহরী সর্বক্ষণ তাঁদের পাহারা দেন। পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য তাঁদের মাঝেমধ্যে মুঠোফোন ব্যবহার করতে দেওয়া হয়। তবে মুঠোফোনে অস্বাভাবিক কোনো কথা বললে কিংবা ঘটনা অন্য কাউকে জানালে তাঁদের ছাদ থেকে ফেলে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। ব্যাংক কর্মকর্তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলেও তাঁরা ভয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।শাহিনুর ছাড়াও প্রিমিয়ার ব্যাংকের আরও দুই কর্মকর্তাকে সেখানে আটকে রাখা হয়েছিল বলে সূত্র জানায়। এঁদের মধ্যে একজনকে ৫ জানুয়ারি এবং আরেকজনকে ১৫ জানুয়ারি আটক করা হয়। এ বিষয়ে জানতে শনিবার রাতে প্রিমিয়ার ব্যাংকের চেয়ারম্যান এইচ বি এম ইকবালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কাউকে আটক রাখার প্রশ্নই আসে না। আর নির্যাতনের খবর তো অবান্তর। এগুলো একেবারেই ভিত্তিহীন কথা।’ আপনার ব্যাংকের বরখাস্ত হওয়া কয়েকজন কর্মকর্তা কয়েক দিন ধরে নিখোঁজ, বিষয়টি আপনি জানেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ইকবাল বলেন, ‘দেখেন কোথাও পালিয়েছে কি না!’ মতিঝিল করপোরেট শাখার ব্যবস্থাপক শাহিনুর ইসলাম কোথায় জানতে চাইলে এইচ বি এম ইকবাল বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তকৃতরা তো মূল কার্যালয়ে কাজ করেন। তিনি এখন অডিট শাখায় কাজ করছেন।’ ওই কর্মকর্তা বাসায় ফিরতে পারছেন না কেন—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সেটা আমাকে কেন জিজ্ঞেস করছেন? বিষয়গুলো নিয়ে আমাকে জিজ্ঞেস না করে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে জিজ্ঞাসা করুন। ব্যাংক খাতে এত বড় দুর্নীতি হয়ে গেল সেটা নিয়ে কেন আপনারা সংবাদ প্রকাশ করছেন না?’ কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলেও এভাবে আটকে রাখা যায় কি না—জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র নির্বাহী পরিচালক মাহফুজুর রহমান গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘শুধু ব্যাংক কেন, কোনো অবস্থাতেই কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নিতে পারে না। দেশে যেহেতু আইন-কানুন আছে কাজেই কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো ব্যাংক কর্মকর্তাকে আটকে রাখা যায় না। এমনটি হয়ে থাকলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু করার নেই। ’ শনিবার রাতে এইচ বি এম ইকবালের সঙ্গে এই আটক নিয়ে কথা বলার পর গতকাল বিকেলে মতিঝিল থানায় একটি মামলা করেন প্রিমিয়ার ব্যাংকের মতিঝিল করপোরেট শাখার নতুন ব্যবস্থাপক ও ব্যাংকের সিনিয়র এক্সিকিউটিভি ভাইস প্রেসিডেন্ট ইদ্রিস আলী ফকির। মামলা করার সময় বাদী নিজেই আসামিকে নিয়ে এসে পুলিশের হাতে তুলে দেন। শাহিনুরকে কোথা থেকে থানায় নিয়ে আসা হলো, জানার জন্য তাঁর সঙ্গে কয়েক দফায় যোগাযোগ করা হলেও তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তাঁর মুঠোফোনে খুদে বার্তা (এসএমএস) পাঠিয়েও কোনো জবাব পাওয়া যায়নি। তবে মতিঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হায়াতুজ্জামান মোল্লা গতকাল সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে জানান, বাদী ওই ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপক শাহিনুরকে নিয়ে আসেন। এরপর তিনি শাহিনুরসহ নয়জনের বিরুদ্ধে থানায় একটি মামলা করেন। এরপর তিনি শাহিনুরকে থানায় হস্তান্তর করে চলে যান।

Leave a Reply

Your email address will not be published.