ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার খামখেয়ালি

Spread the love

এসিআর বিড়ম্বনায় সাত কর্মকর্তা

শরিফুল হাসান

ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন (এসিআর) না দেওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন বিসিএস ক্যাডারের সাত কর্মকর্তা। এসিআর না পাওয়ায় তাঁদের একজনের পদোন্নতি, তিনজনের সিনিয়র স্কেল পরীক্ষা ও তিনজনের স্থায়ী নিয়োগ আটকে আছে।

ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা হলেন আমদানি ও রপ্তানি নিয়ন্ত্রকের চট্টগ্রাম অঞ্চলের যুগ্ম নিয়ন্ত্রক অনুপ কুমার সাহা, সহকারী নিয়ন্ত্রক খায়রুল আলম, বরিশাল অঞ্চলের সহকারী নিয়ন্ত্রক আবদুর রহিম ও জিয়াউর রহমান, খুলনার গোলাম খোরশেদ, রংপুরের মনিরুজ্জামান খান ও ঢাকার মাহমুদুল হক। এর মধ্যে অনুপ কুমার সাহার ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরের এসিআর যায়নি। গোলাম খোরশেদের এসিআর প্রতিবেদন আটকে আছে দুই বছর ধরে। বাকিদের ২০১৩ সালের এসিআর পাঠানো হয়নি।

অভিযোগ উঠেছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আমদানি ও রপ্তানি নিয়ন্ত্রক দপ্তরের অবসরে যাওয়া প্রধান নিয়ন্ত্রক এম এ সবুর ওই সাত কর্মকর্তার এসিআর আটকে রেখেছেন। এই সাত কর্মকর্তা সরাসরি তাঁর অধীনে ছিলেন।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এসিআর না পাওয়ায় সপ্তম বিসিএসের মাধ্যমে যোগ দেওয়া অনুপ কুমার সাহা নিয়ন্ত্রক পদে পদোন্নতি পাচ্ছেন না। ২৮তম বিসিএসের মাধ্যমে যোগ দেওয়া আবদুর রহিম, গোলাম খোরশেদ ও খায়রুল আলম সিনিয়র স্কেল পরীক্ষা দিতে পারছেন না। ২৯তম বিসিএসের মাধ্যমে যোগ দেওয়া জিয়াউর রহমান এবং ৩০তম বিসিএসের মাধ্যমে যোগ দেওয়া মনিরুজ্জামান ও মাহমুদুল হকের নিয়োগ স্থায়ী হচ্ছে না এসিআর না পাওয়ায়।

যোগাযোগ করা হলে অনুপ কুমার সাহা প্রথম আলোকে বলেন, ‘একজন সরকারি কর্মকর্তার চাকরিজীবনের মূল্যায়নের মাপকাঠি হলো তাঁর এসিআর। অথচ আমার সেই এসিআর পাঁচ বছর ধরে আটকে রাখা হয়েছে। ফলে আমাদের দুর্ভোগের শেষ নেই। কিন্তু প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সবাই এ ব্যাপারে নির্বিকার।’

আবদুর রহিম, গোলাম খোরশেদ ও খায়রুল আলম প্রথম আলোকে জানান, ২০১০ সালের ১ ডিসেম্বর চাকরিতে যোগ দিয়েছেন। চার মাসের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, বিভাগীয় পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন, চাকরিও স্থায়ী হয়েছে। কিন্তু এসিআর না আসায় সিনিয়র স্কেলের পরীক্ষা দিতে পারছেন না।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৫ মে মন্ত্রণালয় থেকে এম এ সবুরের কাছে চিঠি পাঠিয়ে সাতজনের এস‌িআর না পাঠানোর জন্য সাত দিনের মধ্যে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। আমদানি ও রপ্তানি নিয়ন্ত্রকের দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এম এ সবুরকে এ বিষয়ে তিনবার চিঠি দেওয়া হয়। সর্বশেষ ২৯ অক্টোবর বর্তমান প্রধান নিয়ন্ত্রক মজিবর রহমান তাঁকে এ বিষয়ে একটি চিঠি দেন। চিঠি দেওয়ার দেড় মাস হয়ে গেলেও তিনি এসিআর পাঠাননি।

সাত কর্মকর্তার এসিআর না দেওয়ার বিষয়ে জানতে এম এ সবুরের তিনটি মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনটিই বন্ধ পাওয়া যায়। গত রোববার বিকেলে বাসায় গিয়ে কথা হয় তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে। দেখা করতে চাওয়ার কারণ বলা হলে জানানো হয়, এম এ সবুর পার্বত্য চট্টগ্রামে আছেন। এই প্রতিবেদক মুঠোফোন নম্বর দিয়ে যোগাযোগ করতে বললেও তিনি যোগাযোগ করেননি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বর্তমান প্রধান নিয়ন্ত্রক মজিবর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি ২৯ অক্টোবরও তাঁকে এ বিষয়ে চিঠি দিয়েছি। আশা করছি, তিনি দ্রুত ওই কর্মকর্তাদের এসিআর দিয়ে দেবেন। বাণিজ্যসচিবও বিষয়টি জানেন।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘কোনো একজন কর্মকর্তার গাফিলতির কারণে বাকিদের দুর্ভোগে পড়া উচিত নয়। এ ক্ষেত্রে ওই কর্মকর্তারা যেন আর ভোগান্তির শিকার না হন, সে কারণে আগের বছরের গড় এসিআর হিসেবে ধরে হলেও তাঁদের হয়রানি বন্ধ করা উচিত।’

Leave a Reply

Your email address will not be published.