বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়

Spread the love

নিয়োগ নিয়ে বিভাগের আপত্তি, ক্লাস দেওয়া হচ্ছে না শিক্ষককে

শরিফুল হাসান

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েও কাজে যোগ দিতে পারছেন না এক শিক্ষক। বিভাগের চেয়ারম্যানসহ শিক্ষকদের তাঁর নিয়োগের বিষয়ে আপত্তি আছে। তাঁরা মনে করছেন, প্রার্থী হিসেবে তিনি সাধারণ মানের। তাঁর চেয়ে যোগ্য প্রার্থী ছিলেন, যিনি চাকরি পাননি।
বুয়েটের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগে এই ঘটনা ঘটেছে। ভুক্তভোগী শিক্ষকের নাম নীলোপল অদ্রি। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও বুয়েট থেকে স্নাতকোত্তর করেছেন। ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন থেকে তিনি পিএইচডি করছেন।
গত বছরের ২১ জুলাই প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠিত হয়। বাছাই কমিটি নীলোপল অদ্রি ও মাশরুর রহমানকে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করে এবং এস এম লাবিবকে প্যানেলভুক্ত করে রাখে। ৩১ ডিসেম্বর সিন্ডিকেট প্রথম দুজনের নিয়োগ চূড়ান্ত করে এবং পরে নিয়োগের চিঠি দেওয়া হয়। দুজনের মধ্যে মাশরুর বিভাগে যোগ দিয়ে ক্লাস নিচ্ছেন। তিনি এই বিভাগেরই ছাত্র ছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ১৮ জানুয়ারি নীলোপল যোগদানের জন্য গেলে বিভাগের চেয়ারম্যান তাঁর যোগদানপত্র গ্রহণ করতে রাজি হননি। অতঃপর তিনি রেজিস্ট্রারের কাছে যোগদানপত্র জমা দেন।
নীলোপলের দুটি আন্তর্জাতিক প্রকাশনাসহ ১০টি প্রকাশনা আছে। এই বিভাগে নিয়োগ পাওয়ার আগে তিনি বুয়েটেরই পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটে পোস্ট ডক্টরাল গবেষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
ইউআরপি বিভাগের শিক্ষকেরা জানান, তাঁরা চেয়েছিলেন তাঁদের যোগ্য দুজন ছাত্রকে শিক্ষক হিসেবে নিতে। কিন্তু নীলোপল নির্বাচিত হওয়ায় বিভাগের স্নাতক ও এ বছর রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পাওয়া এস এম লাবিব নিয়োগবঞ্চিত হন।
বুয়েট সূত্রে জানা গেছে, ২১ জুলাই নিয়োগ বোর্ডে নীলোপলের বিষয়ে মৌখিক আপত্তি জানান বিভাগের প্রধান মোহাম্মদ শাকিল আখতার। পরদিন তিনি বাছাই কমিটির সভাপতিকে একটি চিঠি দিয়ে বলেন, বুয়েটের স্নাতক এস এম লাবিব স্নাতকে জিপিএ ৩.৮৬ পেয়েছেন। আর জাহাঙ্গীরনগরের স্নাতক নীলোপলের জিপিএ ৩.৯৪। নীলোপলের ফলাফলকে বাছাই কমিটিতে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হলেও বুয়েটের পাঠ্যসূচি আর জাহাঙ্গীরনগরের পাঠ্যসূচি এক নয়। আর নীলোপল সাধারণ মানের ছাত্রী। তাঁর তুলনায় লাবিব অনেক বেশি যোগ্য। নীলোপল যেসব বিষয়ে গবেষণা করেছেন, সেসব বিষয়ে অভিজ্ঞ আরও কয়েকজন শিক্ষক বিভাগে আছেন। কিন্তু লাবিব যা নিয়ে গবেষণা করেছেন, সে বিষয়ের কোনো শিক্ষক নেই। নীলোপলকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ও শিক্ষক হিসেবে নেয়নি।
গত ১০ আগস্ট বিভাগের সব শিক্ষক উপাচার্যকে আরেকটি চিঠি দেন। তাতেও নীলোপলের নিয়োগের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার আবেদন জানানো হয়। ৩ ডিসেম্বর আবার আপত্তি দেন বিভাগের চেয়ারম্যান। এ অবস্থায় ৩১ ডিসেম্বর সিন্ডিকেট নীলোপলের নিয়োগ চূড়ান্ত করে।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার এ কে এম মাসুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই শিক্ষকের যোগদানপত্র গৃহীত হয়েছে। বিভাগের সঙ্গে তাঁর সমস্যাও দ্রুত সমাধান হয়ে যাবে বলে আশা করছি।’
জানতে চাইলে বিভাগের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাকিল আখতার বলেন, ‘নীলোপল আমাদের এখান থেকেই স্নাতকোত্তর করেছে। সে একেবারেই সাধারণ মানের ছাত্রী। সে কারণেই বিভাগের সব শিক্ষকেরা সম্মিলিতভাবে তাকে নিতে চাইছেন না।’
নীলোপল অদ্রি গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, তিনি বিভাগে যাচ্ছেন। তবে তাঁকে বসার জায়গা বা ক্লাস দেওয়া হচ্ছে না। তাঁর উপস্থিতিতে শিক্ষকেরা বিরক্তি প্রকাশ করছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.