কাজের অনুমতিপত্র ছাড়া লোক নেবে না মালদ্বীপ
শরিফুল হাসান
কাজের অনুমতিপত্র (ওয়ার্ক পারমিট) ছাড়া বাংলাদেশ থেকে আর কোনো লোক নেবে না মালদ্বীপ। সম্প্রতি দেশটির প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত ভঙ্গ করে ভ্রমণ ভিসায় কেউ সে দেশে গিয়ে কাজ করার চেষ্টা করলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেবে দেশটির সরকার। বৈঠকে অবৈধভাবে কাজ করছেন এমন বাংলাদেশিদের দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়। তবে বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা করেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে দেশটি। মালদ্বীপের বার্তা সংস্থা মিনিভান নিউজ এ ব্যাপারে বিস্তারিত সংবাদ প্রকাশ করেছে। এতে মন্ত্রিসভার বৈঠকের সূত্র উল্লেখ করে বলা হয়, কোনো বাংলাদেশি মালদ্বীপে কাজ করতে আসতে চাইলে অবশ্যই তাঁকে ওয়ার্ক পারমিট নিতে হবে। বাংলাদেশে অবস্থিত মালদ্বীপের হাইকমিশন এখন থেকে কাজের অনুমতিপত্রসহ এই ভিসা দেবে।দেশটির মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, অভিবাসনবিষয়ক অধিদপ্তর এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এখন থেকে এ ব্যাপারে সমন্বিতভাবে কাজ করবে বলেও বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়।ভারত মহাসাগরে অবস্থিত ছোট্ট এক দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপ। পর্যটন ও মৎস্য আহরণ দেশটির আয়ের অন্যতম উৎস। দেশটির মোট জনসংখ্যা চার লাখ। মিনিভান নিউজের তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে বর্তমানে এক লাখ অভিবাসী শ্রমিক আছেন, যাঁদের মধ্যে ৫০ হাজারই অবৈধ। তাঁদের বেশির ভাগই বাংলাদেশি অদক্ষ শ্রমিক, যাঁরা ভাগ্য বদলানোর আশায় দেশটিতে গিয়েছেন।প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, অবৈধ এই বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠাতে পারে মালদ্বীপ। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আহমেদ নাসিম কিছুদিন আগে বাংলাদেশে এসে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রীকে বিষয়টি জানিয়েছেন। তিনি জানান, অন্তত ৫০ হাজার বাংলাদেশি মালদ্বীপে কাজ করছেন।বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে অনেক লোক ভ্রমণ ভিসায় মালদ্বীপে গিয়ে কাজ করছেন। আমরাও চাই না কাজের অনুমতিপত্র ছাড়া অবৈধভাবে কেউ দেশটিতে যাক। দুই দেশ এ বিষয়ে একমত। মালদ্বীপ সরকার জানিয়েছে, তারা বৈধভাবে যাওয়া শ্রমিকদের ন্যূনতম মাসিক বেতন ৪২০ ডলার (৩২ হাজার টাকার মতো) করবে। এ ছাড়া বৈধ বাংলাদেশিদের আবাসন সমস্যারও সমাধানের আশ্বাস দিয়েছে। এ জন্য একটি দ্বীপে তারা পাঁচ হাজার ঘর করে দেওয়ার কথাও বলেছে।’জনশক্তি রপ্তানিকারকেরা জানিয়েছেন, একশ্রেণীর প্রতারক বিদেশে কাজ দেওয়ার কথা বলে লাখ লাখ টাকা নিয়ে লোকজনকে মালদ্বীপে পাঠাচ্ছে। এর সঙ্গে অনেক ট্রাভেল এজেন্সিও জড়িত। বাংলাদেশ থেকে বিদেশে কত লোক যায়, সেই হিসাব জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোতে (বিএমইটি) নিবন্ধিত থাকে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, মালদ্বীপে গেছে মাত্র ১৫ হাজার লোক। অর্থাৎ বাকি ৩৫ হাজারই গেছে অবৈধ পথে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিএমইটির মহাপরিচালক খোরশেদ আলম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘অবৈধভাবে লোক গেলে তাতে বাংলাদেশেরই ক্ষতি।’