প্রবাসীদের মধ্যে উদ্বেগ

Spread the love

ছয় বছরের বেশি থাকা বিদেশিদের আকামা দেবে না সৌদি আরব

শরিফুল হাসান

ছয় বছরের বেশি সময় ধরে সৌদি আরবে আছেন এমন শ্রমিকদের আর নতুন করে কাজের অনুমতি না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে দেশটির শ্রম মন্ত্রণালয়। গতকাল মঙ্গলবার সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের গণমাধ্যমে এ-সংক্রান্ত খবর প্রচারিত হয়েছে। সৌদি সরকারের এই উদ্যোগে দেশটিতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। তাঁদের আশঙ্কা, এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে বহু বাংলাদেশিকে দেশে ফিরতে হতে পারে। শ্রম মন্ত্রণালয়ের এ-সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হতে সৌদি বাদশাহর অনুমোদন লাগবে। তবে তা শেষ পর্যন্ত কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা জোরালো বলে মধ্যপ্রাচ্যের সংবাদমাধ্যম ইঙ্গিত দিয়েছে। খবরে বলা হয়, কয়েক বছর ধরে পরিকল্পনাধীন ‘সৌদিকরণ’ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে সৌদি সরকার এই উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে। সৌদি আরব নিজের নাগরিকদের বেকারত্ব দূর করার জন্য এ পরিকল্পনা করেছে।সৌদি আরবের নির্মাণ খাত, টেলিযোগাযোগ, স্বাস্থ্য ও বিভিন্ন সেবা খাতে এক কোটি বিদেশি শ্রমিক আছে। প্রাপ্ত তথ্যমতে, এঁদের মধ্যে ২৫ লাখই বাংলাদেশি। আরব নিউজ-এ গতকাল মঙ্গলবার প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়, শ্রমমন্ত্রী আদেল ফাকেহ ঘোষণা দিয়েছেন, সৌদি সরকার দেশটিতে ছয় বছরের বেশি সময় ধরে আছেন এমন শ্রমিকদের নতুন করে আকামা (কাজের অনুমতিপত্র) না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই প্রতিবেদনে বলা হয়, শ্রম মন্ত্রণালয় তাদের সিদ্ধান্ত জানালেও সৌদি বাদশাহ অনুমোদন দেওয়ার পরই কেবল এটির বাস্তবায়ন শুরু হবে।গালফ নিউজ-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সৌদি আরবের সব বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে সবুজ, হলুদ ও লাল—তিনটি শ্রেণীতে ভাগ করা হবে। বেশির ভাগ শ্রমিক বিদেশি হলে কোম্পানি ‘লাল’ তালিকাভুক্ত হবে। এসব কোম্পানিতে চাকরিরত কেউ আর আকামা পাবেন না। ‘হলুদ’ তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে স্থানীয়দের জন্য জায়গা করতে কিছু বিদেশি শ্রমিক ছাঁটাই করতে হবে। সব বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এ নিয়ম প্রযোজ্য হলেও গৃহকর্মীদের (খাদ্দামা) ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য হবে না। সৌদি সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে বাংলাদেশের কাছে কোনো তথ্য আছে কি না জানতে চাইলে বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও প্রবাসীকল্যাণ সচিব জাফর আহমেদ খান গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, সৌদি আরবের বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে এ ব্যাপারে তাঁদের এখনো কিছু জানানো হয়নি। জানানো হলে এ ব্যাপারে পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রিয়াদে বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম কাউন্সেলর হারুন-অর-রশিদ ফোনে গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, সৌদি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এক বৈঠকে দেশটির শ্রমমন্ত্রী এ ঘোষণা দিয়েছেন। তবে এখনো এটি কার্যকর হয়নি। হারুন-অর-রশিদ বলেন, ২০০৪ সালের সৌদিকরণ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই এই ঘোষণা। সৌদি আরব তাদের বেকারত্ব দূরীকরণে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ সিদ্ধান্তের ফলে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যদি বাস্তবায়িত হয় তাহলে সব দেশই কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমরা এ ব্যাপারে খোঁজখবর নিচ্ছি।’ দীর্ঘদিন ধরে সৌদি আরবে প্রবাসী বাংলাদেশি প্রকৌশলী ফখরুল বাশারও এ উদ্যোগের পেছনের কারণ হিসেবে একই কথা বলেন। গতকাল তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সৌদিকরণ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে দেশটির সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দেশটিতে বেকারত্ব বেড়েছে। তাই চাপ সামলাতে সব কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠানে সৌদি নাগরিকদের নিয়োগ দিতে চায়।প্রকৌশলী বাশার বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেন, এর ফলে সব কোম্পানিতে অন্তত ৪০ ভাগ কর্মী হতে হবে সৌদি নাগরিক। যেসব কোম্পানিতে ৪০ ভাগের নিচে সৌদি নাগরিক থাকবে, তাদের ‘হলুদ’ ও ‘লাল’ তালিকাভুক্ত করা হবে। ফখরুল বাশারের মতে, সৌদি সরকারের এই সিদ্ধান্তে বাংলাদেশিরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। কারণ দেশটিতে বাংলাদেশি মালিকানাধীন অন্তত ৫০ হাজার ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান আছে। সৌদি আরবে দীর্ঘদিন চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত সালেহউদ্দিন বলেন, এ আইন হলে এখন থেকে সৌদি আরবে কেউ চাকরি ছাড়া ফ্রি ভিসায় যেতে পারবেন না। তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ফ্রি ভিসায় লোক আসতেন এবং পরে তাঁরা চাকরি খুঁজে নিতেন। কিন্তু নতুন আইন হলে আর সেই সুযোগ থাকবে না। গালফ নিউজ-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সৌদি আরবে বেকারত্বের হার এখন ১০ দশমিক ৫ শতাংশ। অন্তত পাঁচ লাখ লোকের এখন চাকরি নেই। তবে সৌদি সরকারের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে সে দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যেও বিভক্তি আছে। তাঁদের অনেকে বলছেন, এর ফলে দেশটির অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তবে সৌদি তরুণেরা সরকারের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। সৌদি আরবে কর্মরত বিদেশি শ্রমিকদের বেশির ভাগই ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও ফিলিপাইনের নাগরিক। ফিলিপাইনের পত্রিকা ম্যানিলা বুলেটিন-এর এক খবরে বলা হয়েছে, সৌদি সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে অন্তত ৩৫ লাখ ফিলিপাইনের নাগরিক চাকরি হারাবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.