বাংলাদেশ বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন !

Spread the love

শরিফুল হাসান

আন্তর্জাতিক বিতর্ক চ্যাম্পিয়নশিপের ইতিহাসে প্রথমবারের মত বাংলাদেশ বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এমনকি দক্ষিণ এশিয়ারও প্রথম দল হিসেবে এই মর্যাদা অর্জন করলো বাংলাদেশ। অভিনন্দন সাজিদ আসবাত খন্দকার এবং সৌরদীপ পাল। তারা দুজনই ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্স অব সায়েন্স ইন অ্যাপ্লাইড ইকোনমিক্সেরর শিক্ষার্থী।

অভিনন্দন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়। অভিনন্দন বাংলাদেশ। হার্ভার্ড, অক্সফোর্ড, কেমব্রিজ, শিকাগো, স্ট্যানফোর্ডের মত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২২ শিরোপা জয় নিশ্চয়ই একটা অসাধারন অর্জন।‌আসলে বিশ্ব বিতর্কের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ এই আসরকে বলা হয় বিতর্কের বিশ্বকাপ।

বুধবার (২৭ জুলাই) বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭টায় ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত হয় এই প্রতিযোগিতার ফাইনাল। ফাইনালে ব্র্যাক এ দলের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি, ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুর এবং অ্যাটেনিয়ো দে ম্যানিলা ইউনিভার্সিটি।এর আগে ৪০০ দলের মধ্যে প্রতিযোগিতার ফাইনালে উঠতে ব্র্যাক টিম হার্ভার্ড, অক্সফোর্ড, কেমব্রিজ, শিকাগো, স্ট্যানফোর্ডের মত বিশ্ববিদ্যালয়ের টিমগুলোর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয় পায়।

বিতর্কের সবচেয়ে বড় এই প্রতিযোগিতায় এবারই প্রথমবারের মতো ফাইনালে জায়গা করে নেয় বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার কোনো দল। অবশ্যই এটি বাংলাদেশের জন্য অনন্য অর্জন। আমি এই সুযোগে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ভিনসেন্ট চ্যাংকে অভিনন্দন জানাই। এই ভিনসেন্ট মানুষটাকে আমার দারুণ লাগে।

কয়েকদিন আগে এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেছেন, বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয় শুধু শেখায়। শেখানো তো সহজ! ইউটিউবে ভিডিও দেখে যে কেউ শিখতে পারে। কিন্তু মুক্তচিন্তা, সমস্যা সমাধানের দক্ষতা, টিম প্লেয়ার হয়ে ওঠা—এসবের জন্য লাগে যথাযথ পরিবেশ। কী দারুণ কথা! যারা ভিনসেন্টকে চেনেন না তাদের বলি, তিন বছর আগে তাকে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিব্র্যাক ইউনিভার্সিটির উপাচার্যের দায়িত্বে নিয়ে আসেন প্রয়াত স্যার ফজলে হাসান আবেদ।

ভিনসেন্ট যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি) ও যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ফেডারেল রিজার্ভ বোর্ডে গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত ছিলেন। অধ্যাপক চ্যাং উচ্চপর্যায়ে শিক্ষা ও গবেষণা, ফরচুন ৫০০, ওয়াল স্ট্রিট, সিলিকন ভ্যালি ও ব্যবসায় উদ্যোগের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, চীন, পূর্ব এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্য থেকে বিভিন্ন সময়ে স্বীকৃতি লাভ করেন। অধ্যাপক চ্যাং যুক্তরাষ্ট্রের বার্কলেতে অবস্থিত ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ও কম্পিউটার সায়েন্সে অধ্যাপক চ্যাং তাঁর প্রথম পিএইচডি লাভ করেন।

তিনি দ্বিতীয় পিএইচডি করেন অর্থনীতিতে, এমআইটি থেকে। এরপর হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কেনেডি স্কুল অব গভর্নমেন্ট থেকে লোক প্রশাসনে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন। এ ছাড়া তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল ইউনিভার্সিটির স্কুল অব ম্যানেজমেন্ট থেকে ব্যবসা প্রশাসনে স্নাতকোত্তর করেন। তিনি তাইওয়ানের ন্যাশনাল তাইওয়ান ইউনিভার্সিটি থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী। পড়তে পড়তে ভাবছিলাম একটা মানুষ দুনিয়ার কতো বিষয় নিয়ে লেখাপড়া করেছেন। আর কর্মক্ষেত্রও দারুণ।

ক্যালিফোর্নিয়া-ভিত্তিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইক্যাপিটাল ফাইন্যান্সিয়াল, লস অ্যাঞ্জেলেসভিত্তিক জেনারেল ব্যাংক, আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান জে পি মর্গানের নিউইয়র্ক, লন্ডন ও সিঙ্গাপুর অঞ্চল এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ম্যাকেঞ্জি অ্যান্ড কোং-এর হংকং ও বৃহত্তর চীন অঞ্চলে বিভিন্ন শীর্ষপদে কর্মরত ছিলেন। এমন একজন মানুষকে উপাচার্য করে বাংলাদেশে নিয়ে আসাটা দারুণ ব্যাপার।

আমি বিশ্বাস করি তাঁর নেতৃত্বে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে সেটা পুরো দেশের জন্য গর্বের। শুধু উপাচার্য নয় এই সুযোগে আমি ব্র্যাক বিশ্বিবদ্যালয়ের সব শিক্ষক কর্মকর্তা কর্মচারী শিক্ষার্থী সবাইকে অভিনন্দন জানাই। এর আগে ২০১৭ সালে ক্ষুদ্রাকৃতির কৃত্রিম উপগ্রহ (ন্যানো স্যাটেলাইট) মহাকাশে পাঠিয়েছিল ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। উন্নত দেশগুলো অনেক আগে থেকেই এগুলো মহাকাশে পাঠালেও ২০১৭ সালে বাংলাদেশও ওই তালিকায় নিজের স্থান করে নিয়েছে ব্র্যাক অন্বেষা কৃত্রিম উপগ্রহটি উৎক্ষেপণের মাধ্যমে।

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা এবং বর্তমানে জাপানের কিউশু ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে গবেষণারত শিক্ষার্থী রায়হানা শামস ইসলাম, আব্দুল্লাহিল কাফি ও মায়সূন ইবনে মনোয়ার—এই তিনজন মিলে বাংলাদেশের প্রথম এই ন্যানো স্যাটেলাইট নির্মাণ করেছেন। এই সুযোগে তাদেরও অভিনন্দন।গতকাল রাতেই আদমশুমারি নিয়ে লিখতে গিয়ে বলেছি, প্রায় ১৭ কোটি জনসংখ্যার এই বাংলাদেশে তরুণদের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি।

আদমশুমারি অনুযায়ী, বাংলাদেশের ৮২ শতাংশেরও বেশি জনগোষ্ঠীর বয়স ৫০ বছরের নিচে মানে দারুণ কর্মক্ষম। ৪০ এর নিচে জনগোষ্ঠী ৭০ শতাংশ। আর ৩০ এর নিচের জনগোষ্ঠী ধরলে ৬০ শতাংশ। এর মানে বাংলাদেশের মোট জনগোষ্ঠীর ৬০ শতাংশের বয়স ৩০ এর নিচে। আমি মনে করি এটাই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শক্তি।আসলে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ এবং সব অর্জনেই মূল ভূমিকা ছিল তারুণ্যের। চতুর্থ শিল্পবিপ্লব আর প্রযুক্তির এই সময়েও ভরসা তরুণেরাই।

২০৪১ সালে বাংলাদেশের যে রূপকল্প, সেটি অর্জন করতে হবে তারুণ্যের শক্তি দিয়ে। কাজেই তাদের কথা শুনতে হবে, তাদের কথা ভাবতে হবে।আমি বিশ্বাস করি আমরা সবাই মিলে যদি কাজ করতে পারি, আমাদের তারুণ্যকে কাজে লাগাতে পারি প্রবীনের অভিজ্ঞতা আর পরামর্শে এই দেশ আগাবেই।

অবশ্য এজন্য উন্নয়নের পাশাপাশি বা উন্নয়নের চেয়েও বেশি জরুরী সুশাসন আর মানবিক মূল্যবোধ। আশা করছি আমাদের নীতি নির্ধারকেরা বুঝবেন। সবাই মিলে নিশ্চয়ই আমরা একটা সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে পারবো। সবাইকে শুভ সকাল। শুভ সকাল বাংলাদেশ!

Leave a Reply

Your email address will not be published.