শরিফুল হাসান
২৮তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ দুই হাজার ১৯০ জনকে বিভিন্ন ক্যাডারে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি)। তাঁদের মধ্যে পুরুষ এক হাজার ৫২০ জন এবং মহিলা ৬৭০ জন। ফলাফল জানতে এখানে ক্লিক করুনগতকাল বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায়, এ পরীক্ষায় মোট পাঁচ হাজার ১০৫ জন প্রার্থী চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হয়েছেন। পিএসসি সূত্র জানায়, ক্যাডার সার্ভিসে যাঁরা নিয়োগের জন্য নির্বাচিত হননি, তাঁদের পর্যায়ক্রমে নন-ক্যাডার পদে নিয়োগ দেওয়া হবে। এ জন্য খুব শিগগির তাঁদের কাছে পছন্দক্রম চাওয়া হবে। নন-ক্যাডার বিশেষ বিধিমালা, ২০১০ জারি হওয়ায় উত্তীর্ণদের বেশির ভাগই প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি পাবেন।২৮তম বিসিএসের এ চূড়ান্ত ফলাফল প্রথম আলো (www.prothom-alo.com) ও পিএসসির ওয়েবসাইটে (www.bpsc.gov.bd) পাওয়া যাবে।পিএসসি সূত্রে জানা গেছে, প্রার্থী না পাওয়ায় প্রাধিকার কোটায় ৮১৩টি পদে কাউকে নিয়োগ দেওয়া যায়নি। এ পদগুলো শূন্যই থাকবে। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের ৬২৮টি, নারী ৪৫টি এবং উপজাতীয় কোটার ১৪০টি পদে প্রার্থী পাওয়া যায়নি। বঞ্চিত একাধিক প্রার্থীর অভিযোগ, কোটা পদ্ধতির কারণেই ৮১৩টি পদ শূন্য থাকছে। সরকার যদি এমন নিয়ম করত যে কোটায় প্রার্থী না পাওয়া গেলে মেধা থেকে সেটি পূরণ করবে, তাহলে এ পদগুলো শূন্য থাকত না। আরও ৮১৩ জন মেধাবী নিয়োগ পেতেন। জানতে চাইলে পিএসসির চেয়ারম্যান সা’দত হুসাইন গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, নিয়োগের সুপারিশ প্রণয়নের ক্ষেত্রে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত কোটা পদ্ধতি পুরোপুরি অনুসরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে সাধারণ ক্যাডারে প্রাধিকার কোটায় শত ভাগ প্রার্থী পাওয়া গেলেও কারিগরি ক্যাডারে প্রাধিকার কোটায় অনেক প্রার্থী পাওয়া যায়নি। সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয়েছে চিকিৎসক নিয়োগে। সেখানে প্রাধিকার কোটার কারণে অন্তত ৩০০ পদ খালি রাখতে হয়েছে।প্রকাশিত ফলাফল অনুযায়ী, উত্তীর্ণদের মধ্যে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে ১৯০ জন, পুলিশে ১৮৯, পররাষ্ট্র ক্যাডারে ১৫, নিরীক্ষা ও হিসাব ক্যাডারে ১৯, পরিবার ও পরিকল্পনায় পাঁচ, তথ্য ক্যাডারে ৮৭, কর ক্যাডারে ৪৬, ডাকে সাত, আনসারে ১১, শুল্ক ও আবগারিতে ২৯, সমবায়ে এক, খাদ্যে পাঁচ, রেলওয়েতে তিন, বাণিজ্যে চার এবং ইকোনমিক ক্যাডারে মোট ৪৬ জন নির্বাচিত হয়েছেন। প্রফেশনাল ক্যাডারের মধ্যে সহকারী সার্জন হিসেবে ৭২৪ জন, ডেন্টাল সার্জন হিসেবে ১০১, সহকারী বেতার প্রকৌশলী হিসেবে ১৯, বিসিএস কৃষিতে ১২৩ এবং মৎস্যে ৩১ জন নিয়োগ পেয়েছেন। বাকিরা সাধারণ শিক্ষাসহ বিভিন্ন ক্যাডারে নিয়োগ পেয়েছেন। মেধাবীর চেয়ে কোটায় নিয়োগ বেশি: ২৮তম বিসিএসে মেধাবীদের চেয়ে কোটায় বেশি নিয়োগ হচ্ছে। এ বিসিএসে সাধারণ ক্যাডারে মোট ৬৫৭ জনকে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৪৭ জনই নিয়োগ পাচ্ছেন বিভিন্ন কোটায়। ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, প্রশাসন ক্যাডারে উত্তীর্ণদের ১৯০ জনের মধ্যে ১০০ জনই প্রাধিকার কোটায় নিয়োগ পাচ্ছেন। সাধারণ বাকি ক্যাডারের মধ্যে পুলিশে ১৮৯ জনের মধ্যে ৯৯ জন, নিরীক্ষায় ১৯ জনের মধ্যে ১০, আনসারে ১১ জনের মধ্যে ছয়, শুল্ক ও আবগারিতে ২৯ জনের মধ্যে ১৫, পররাষ্ট্রে ১৫ জনের মধ্যে আট, তথ্যে ৮৭ জনের মধ্যে ৪৬, ডাকে সাতজনের মধ্যে চার, করে ৪৬ জনের মধ্যে ২৫, ইকোনমিকে ৪৬ জনের মধ্যে ২৪ জন নিয়োগ পাচ্ছেন প্রাধিকার কোটায়। প্রফেশনাল ক্যাডারের মধ্যে সহকারী সার্জন হিসেবে নিয়োগ পাওয়া ৭২৪ জনের মধ্যে ২৪৭ জন, সহকারী ডেন্টাল সার্জনের ১০১ জনের মধ্যে ৩৩, কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ক্যাডারে ১২৩ জনের মধ্যে ২৯ জনকে প্রাধিকার কোটায় নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হয়েছেন। এ ছাড়া প্রার্থী না পাওয়ায় প্রফেশনাল ক্যাডারের ৮১৩টি পদ শূন্য থাকছে।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সচিব দাবি করেন, এভাবে মেধার চেয়ে কোটায় বেশি নিয়োগ দেওয়ার কারণেই বাংলাদেশের জনপ্রশাসন দিন দিন মেধাশূন্য হয়ে পড়ছে। মেধাবীরাও বিসিএসে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। এ ব্যাপারে পিএসসির চেয়ারম্যান সা’দত হুসাইন বলেন, সরকার যেভাবে কোটা অনুসরণ করতে বলেছে, সেভাবেই নিয়োগ-প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে পিএসসির করণীয় কিছু নেই। এক হাজার ৭২০টি পদে নিয়োগের জন্য ২০০৮ সালের ২২ জানুয়ারি ২৮তম বিসিএস পরীক্ষার প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এতে এক লাখ ২০ হাজার ৯৪৬ জন আবেদন করেন। এর মধ্যে প্রাথমিক বাছাই পরীক্ষায় ১১ হাজার ৭৭৮ জন প্রার্থী উত্তীর্ণ হন। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন পাঁচ হাজার ৮৮১ জন। গত বছরের ৪ অক্টোবর থেকে এ বছরের ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত উত্তীর্ণদের মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এতে পাঁচ হাজার ৭৮৩ জন প্রার্থী উপস্থিত এবং ৯৮ জন অনুপস্থিত ছিলেন। এর মধ্যে পাঁচ হাজার ১০৫ জন উত্তীর্ণ হন।



