শরিফুল হাসান
গত ৯ এপ্রিল মধ্যরাত। একটি গাড়ি হুট করে ঢুকে পড়ে বিজিবি সদর দপ্তরে। সাংসদের স্টিকার লাগানো ওই গাড়িতে বস্তাভর্তি টাকা। ‘সুরঞ্জিতের রেল কেলেঙ্কারি’র ঘটনার সূত্রপাত এভাবেই। ৫৫ বছরের রাজনৈতিক জীবনে সুরঞ্জিত প্রথমবারের মতো মন্ত্রিত্বের শপথ নেন ২০১১ সালের নভেম্বরে। আর দায়িত্ব নিয়েই রেল খাতে লোকসানের পেছনের ‘কালো বিড়াল’ খুঁজে বের করার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।তবে কালো বিড়ালটি বেরিয়ে এল ওই মধ্যরাতেই। সেদিন রাতে বিজিবি সদর দপ্তরে হুট করে গাড়ি নিয়ে ঢুকে পড়েন সুরঞ্জিতের এপিএস ওমর ফারুকের গাড়িচালক আজম খান। রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) ইউসুফ আলী মৃধা ও রেলওয়ের ঢাকা বিভাগের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা কমান্ড্যান্ট এনামুল হকও ছিলেন ওই গাড়িতে। ঘটনার পর চালক আজম খান দাবি করেন, গাড়িতে থাকা নিয়োগ-বাণিজ্যের ৭৪ লাখ টাকা মন্ত্রীর বাসায় যাচ্ছিল। তবে এনামুল হক ও ইউসুফ আলী মৃধা জানান, তাঁরা মন্ত্রীর বাসায় যাচ্ছিলেন; কিন্তু টাকার বিষয়ে কিছু জানেন না। সুরঞ্জিত এই ঘটনার জন্য এপিএস ও চালকের ওপর দায় চাপিয়ে নিজে দায়মুক্ত হওয়ার প্রাথমিক চেষ্টা করেন। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে সারা দেশে হইচই শুরু হয়ে যায়। সাধারণ মানুষ দাবি তোলেন সুরঞ্জিতের পদত্যাগ। চরম বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে ক্ষমতাসীন দল। প্রধানমন্ত্রী গণভবনে ডাকেন সুরঞ্জিতকে। এরপর ১৬ এপ্রিল অর্থ কেলেঙ্কারির সব দায় কাঁধে নিয়ে পদত্যাগের ঘোষণা দেন সুরঞ্জিত। টাকা উদ্ধারের ওই ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি ১৩ মে রেলসচিবের কাছে প্রতিবেদন দিয়ে জানায়, ‘সুরঞ্জিতের কোনো সংশ্লিষ্টতা তারা পায়নি।’ এই ঘোষণার পর ১৬ মে ফের রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার ঘোষণা দেন সুরঞ্জিত।অন্যদিকে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ১৪ আগস্ট ঢাকার রমনা থানায় ওমর ফারুক তালুকদার ও রেলের পূর্বাঞ্চলের সাবেক জিএম ইউসুফ আলী মৃধার বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা করে দুদক। এনামুল হকের বিরুদ্ধে মামলা হয় ২০ ডিসেম্বর। তবে ঘটনার মূল নায়ক আজম খান নিখোঁজ ছিলেন দীর্ঘদিন। কিন্তু ৬ অক্টোবর আবারও বিস্ফোরণ ঘটান আজম। বেসরকারি একটি টেলিভিশনকে দেওয়া দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে তিনি দাবি করেন, সুরঞ্জিত নিজেই কালো বিড়াল বনে গেছেন। ওই টাকা সুরঞ্জিতের বাসায় যাচ্ছিল।আজম খানের ওই সাক্ষাৎকারের পর সারা দেশে আবারও সুরঞ্জিতকে নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে।