নজরুলকে ফেরত পেতে র্যাবকে দ্বিগুণ টাকা সেধেছি
শরিফুল হাসান

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম বলেছেন, র্যাব-১১-এর তিন কর্মকর্তার ব্যাংক হিসাব পরীক্ষা করলেই সব সত্য বেরিয়ে আসবে। গতকাল প্রথম আলোকে তিনি বলেন, নজরুলকে অক্ষত ফেরত পেতে র্যাব-১১-এর অধিনায়ককে (সিও) তিনি দ্বিগুণ টাকা দিতে চেয়েছিলেন।
শহীদুল ইসলাম ওরফে শহীদ চেয়ারম্যান গত রোববার নারায়ণগঞ্জের রাইফেল ক্লাবে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, ছয় কোটি টাকায় তাঁর জামাতাকে অপহরণের পর খুন করা হয়েছে এবং এ কাজ করেছেন র্যাব-১১-এর অধিনায়কসহ তিনজন কর্মকর্তা। গতকাল মঙ্গলবারও প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে একই অভিযোগ করেন তিনি।
প্রথম আলো: আপনারা বারবার বলছেন, র্যাব টাকা নিয়েছে। আপনি নিশ্চিত হচ্ছেন কীভাবে?
শহীদুল: আমার কথা বিশ্বাস না হলে র্যাব-১১-এর সিও লে. কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মাদ, লে. কমান্ডার এম এম রানা ও মেজর আরিফ হোসেনের ব্যাংক হিসাব চেক করেন। তাঁদের স্ত্রীদের ব্যাংক হিসাব চেক করেন। র্যাবে যোগ দেওয়ার আগে তাঁদের কত টাকা ছিল। আর এখন কত হয়েছে খোঁজ নেন, সব জানতে পারবেন।
প্রথম আলো: কারা এই টাকা দিয়েছে র্যাবকে?
শহীদুল: নজরুলকে খুন করার জন্য নূর হোসেন, ইয়াসিন, হাসমত আলী হাসু, ওয়ার্ড কমিশনার শাহজালাল বাদল শাজাহান, হাসান—এরা বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট থেকে র্যাবের কর্মকর্তাদের ব্যাংকে টাকা পাঠিয়েছে।
প্রথম আলো: আপনি প্রথম কবে এটা জানলেন?
শহীদুল: ২৭ এপ্রিল নজরুলকে অপহরণ করা হয়। তার কয়েক দিন আগে হাসুর বন্ধু জসিম আমাকে ফোন করে জানায়, নূর হোসেনেরা র্যাবকে ছয় কোটি টাকা দিয়ে নজরুলকে অপহরণ করানোর পরিকল্পনা করেছে।
প্রথম আলো: আপনি এই ফোন পাওয়ার পর কী করলেন?
শহীদুল: আমি ফোন পাওয়ার পরপরই হাসুর কাছে যাই। তাকে বলি তোমরা আমার মেয়ের জামাইরে মাইরো না। সে আমারে বলে, তোমার মেয়ে আমারও মেয়ে। কিন্তু সে মিথ্যা বলেছে। সে ঠিকই আমার মেয়ের জামাইরে মেরে ফেলল।
প্রথম আলো: নজরুল অপহরণের পর আপনি কী করে নিশ্চিত হলেন, র্যাবই এ কাজ করেছে?
শহীদুল: আমরা যখন অপহরণের পর নজরুলকে খুঁজে বেড়াচ্ছিলাম, তখন একজন আমাকে জানায়, শিবু মার্কেট এলাকা থেকে নজরুলকে তুলে নিয়ে গেছে র্যাব। এরপর আমরা সেখানে ছুটে যাই। এ সময় কয়েকজন বালুশ্রমিক আমাদের জানান, সকাল থেকে র্যাব-১১ লেখা দুটি মাইক্রোবাস ওই ফাঁকা জায়গায় দাঁড়িয়ে ছিল। বেলা একটার দিকে তারা দুটি প্রাইভেট কার থেকে বেশ কয়েকজনকে নামিয়ে র্যাবের মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে গেছে।
প্রথম আলো: র্যাব তুলে নিয়েছে জানার পর আপনারা কী করেছিলেন?
শহীদুল: আমি তখন এমপি শামীম ওসমানের কাছে যাই। তিনি আমাকে সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজীতে র্যাব-১১-এর সিও তারেক সাঈদের সঙ্গে দেখা করতে বলেন। আমি বিকেলে সেখানে গেলে আমাকে কয়েক ঘণ্টা আটকে রেখে নানা বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা। রাত নয়টার দিকে র্যাবের সিও আমাদের সঙ্গে দেখা করতে বলেন। তিনি এ সময় আমাদের বলেন, শামীম ওসমানের সঙ্গে আপনাদের কি কোনো ঝামেলা আছে? আপনারা শামীম ওসমানের কাছে যান। আমি এ সময় র্যাবের সিওর পা জড়িয়ে ধরে বলেছিলাম, নূর হোসেনেরা আপনাকে যে টাকা দিছে, আমি তার ডাবল দেব। কিন্তু তিনি কিছু শুনলেন না। তিনি আমাকে বলেন, আপনারা শামীম ওসমানের কাছে যান।
প্রথম আলো: আপনি কি এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন?
শহীদুল: আমার মোবাইলে মেসেজ আসছে। কোনো নম্বর নেই। তাতে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আমি পুলিশ সুপারকে জানিয়েছি। তিনি আমাকে নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়েছেন। পুলিশ পাহারা দিয়েছে।
প্রথম আলো: এখন আপনি কী চান?
শহীদুল: আমি চাই যারা নজরুলকে মেরেছে, তাদের সবার ফাঁসি হোক। আর কেউ যেন এভাবে না মরে।
এই অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে গতকাল মঙ্গলবার রাতে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক উইং কমান্ডার এ টি এম হাবিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, নজরুলের শ্বশুর সকালে এক কথা, বিকেলে আরেক কথা বলছেন। তবু অভিযোগের বিষয়ে খতিয়ে দেখবে র্যাবের তদন্ত কমিটি।