দুই প্রার্থীই শতভাগ আশাবাদী
শরিফুল হাসান
সরকারি দল বলছে, মেয়র হিসেবে এ এইচ এম খায়রুজ্জামান সফল। তিনি অনেক উন্নয়নকাজ করেছেন। আর বিরোধী দল বলছে, শুধু খায়রুজ্জামান নন, পুরো সরকারই ব্যর্থ। কারণ, গত সাড়ে চার বছরে রাজশাহীতে তেমন উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। কোনটা ঠিক? এ প্রশ্নের উত্তর মিলবে আজ শনিবার, ১৫ জুন। রাজশাহীবাসী আজ চতুর্থবারের মতো নগরপিতা নির্বাচন করতে ভোট দিচ্ছেন। মেয়র পদে তিনজন প্রার্থী থাকলেও মূলত লড়াই হবে খায়রুজ্জামান ও মোসাদ্দেক হোসেনের মধ্যে। ভোটের আগের দিন দুই প্রার্থীই জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। নাগরিক কমিটির প্রার্থী খায়রুজ্জামান তালা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করলেও তিনি মূলত আওয়ামী লীগের প্রার্থী। আর সম্মিলিত নাগরিক ফোরামের প্রার্থী মোসাদ্দেক আনারস প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করলেও তিনি মূলত বিএনপি-জামায়াতের প্রার্থী। তাই এটি শুধু দুই ব্যক্তির লড়াই নয়, জাতীয় নির্বাচনের আগে এটি সরকার ও বিরোধী দলের জনপ্রিয়তাও যাচাই। ২০০৮ সালের আগস্টে সর্বশেষ রাজশাহী সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে খায়রুজ্জামান চার বছর সাত মাস দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর দাবি, নগরের রাস্তাঘাটসহ শহরের অনেক উন্নয়নকাজ করেছেন তিনি। মহানগর যুবদলের নেতা মোসাদ্দেক হোসেন ২০০৮ সালের নির্বাচনে খায়রুজ্জামানের কাছে ২৩ হাজার ৮১০ ভোটে হেরে যান। তবে এবার তিনি জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। তাঁর দাবি, বিভিন্ন ক্ষেত্রে মেয়রের ব্যর্থতা আর সরকারের নিপীড়নমূলক আচরণের কারণে ভোটারদের পাল্লা তাঁর দিকেই ভারী। আবার রাজশাহী মহানগর বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতিতে মোসাদ্দেকের চেয়ে সাবেক মেয়র ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মিজানুর রহমানের প্রভাব অনেক বেশি। ফলে তাঁর চাওয়া-পাওয়ার ওপরও অনেক কিছু নির্ভর করছে।রাজশাহী মহানগর বরাবরই বিএনপি-জামায়াতের আসন বলে পরিচিত। ১৯৭৩ সালের সংসদ নির্বাচনে শহরের আসনটি পেয়েছিলেন খায়রুজ্জামানের বাবা কামরুজ্জামান। তবে তিনি সেবার দুটি আসনে নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরে রাজশাহী শহরের আসনটি ছেড়ে দিলে ওই উপনির্বাচনেই আওয়ামী লীগের ভরাডুবি ঘটে। এরপর ২৫ বছর এই আসনে আর জয় পায়নি আওয়ামী লীগ। ১৯৯৪ ও ২০০২ সালের সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও পরাজিত হয় আওয়ামী লীগ। তবে ২০০৮ সালের তৃতীয় সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জয় পায় আওয়ামী লীগ। এর দুই মাস পর সংসদ নির্বাচনে শহরের সাংসদ নির্বাচিত হন মহাজোটের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা ফজলে হোসেন বাদশা। রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময় জামায়াত-শিবির-হেফাজত সারা দেশে এবং রাজশাহীতে যে তাণ্ডব চালিয়েছে, তাতে সাধারণ মানুষ এখন আর তাদের পছন্দ করে না। কাজেই রাজশাহীর সাধারণ মানুষ তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে। এ ছাড়া মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের কারণেও মানুষ জামায়াতকে অপছন্দ করে। আর আওয়ামী লীগের উন্নয়ন তো মানুষ দেখছেই। কাজেই এবারও ভোটারদের রায় খায়রুজ্জামানের দিকেই যাবে বলে আশা করছি।’ বিএনপি মনে করছে, রাজশাহীতে তাদের ভোটই বেশি। এবার যুক্ত হয়েছে হেফাজত। কাজেই এই ভোটগুলো একচেটিয়াভাবে মোসাদ্দেক হোসেন পাবেন। আর জামায়াত মোসাদ্দেকের পক্ষে সরাসরি মাঠে নেমেছে। এবারের নির্বাচনে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নারী ভোটার। এখানে মোট ভোটারের মধ্যে পুরুষের চেয়ে নারী ভোটার বেশি। এ ছাড়া ২৮ হাজার নতুন ভোটার হয়েছেন। নগরপিতা নির্বাচনে তাঁদের মনোভাবও বড় ভূমিকা রাখবে। বস্তিবাসী ও নিম্নবিত্ত ভোটার রয়েছেন ২০ থেকে ২৫ হাজার। এঁদের ভোট কোন দিকে যাবে, সেটিও দেখার বিষয়। কয়েক দিন ধরে এই ভোটারদের ভোট টাকার বিনিময়ে কেনার চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ করছে দুই পক্ষই। রাজশাহীর নির্বাচনে আরেকটি বড় বিষয় গ্যাস। নির্বাচনের আগে বাসাবাড়িতে গ্যাস-সংযোগ দেওয়ায় কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থায় আছেন খায়রুজ্জামান। রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশের বাইরে প্রার্থীদের যোগ্যতা, আচরণও নির্বাচনে ভূমিকা রাখবে। সদ্য বিদায়ী মেয়র মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এইচ এম খায়রুজ্জামান ইংরেজিতে অনার্স ও পরে আইনে স্নাতক। ১৯৫৯ সালের ১৪ আগস্ট তাঁর জন্ম। তাঁর বাবা এ এইচ এম কামরুজ্জামান জাতীয় চার নেতার একজন। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক মোসাদ্দেক হোসেনও আইনে স্নাতক। তাঁর জন্ম ১৯৬৫ সালের ৫ জুন। একসময় ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও পরে তিনি যুবদলের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন।



