মেয়াদহীন কমিটি নিয়ে ছাত্রলীগে হতাশা

Spread the love

আন্দোলন-হরতাল সামনে রেখে সক্রিয় হতে চায় ছাত্রদল

শরিফুল হাসান


হরতাল-সমাবেশসহ দলের সব কর্মসূচিতে নিয়মিত অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে আবার সক্রিয় হতে চায় বিএনপির ছাত্রসংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। সংগঠনের নেতারা বলছেন, ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে এখন চরম বিভক্তি। মূল দলের বাইরে সংগঠনে ছয়টি উপদল আছে।অন্যদিকে মেয়াদহীন ছাত্রলীগের নেতাদের মধ্যে এখন ভর করেছে হতাশা। বারবার সম্মেলনের রব উঠলেও তা হয় না। বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার তিন বছর পেরিয়ে গেলেও নতুন কমিটি হচ্ছে না। এসব কারণে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা এখন রাজনীতিতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। অনেকেই টেন্ডারবাজিসহ নানান অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছেন।ছাত্রদলের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে সংগঠনের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, সামনে হরতালসহ নানা কর্মসূচি আছে। এসব কর্মসূচি সফল করতে রাজপথে থাকবে ছাত্রদল। দলের বিভক্তি সম্পর্কে তিনি বলেন, মূল দলের বাইরে কোনো ছাত্রদল নেই।ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাহমুদ হাসান প্রথম আলোকে বলেন, সারা দেশে সম্মেলন করে ছাত্রলীগের নতুন কমিটি করা হচ্ছে। খুব শিগগির সম্মেলন করে নতুন কমিটি করা হবে।ছাত্রদল: তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই বছরে প্রায় নির্জীব হয়ে পড়া ছাত্রদলকে গোছাতে সুলতান সালাউদ্দিনকে সভাপতি ও আমিরুল ইসলামকে সাধারণ সম্পাদক করে ২০০৯ সালের ১ জানুয়ারি ছাত্রদলের নতুন কমিটি করা হয়। কিন্তু দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও নতুন কমিটি হয়নি।ছাত্রদলের নেতারা বলছেন, ৪৮ বছর বয়সী সুলতান সালাউদ্দিন আর চল্লিশোর্ধ্ব আমিরুল কারও ছাত্রত্ব নেই। দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যেও তাঁদের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নের মুখে। ফলে কমিটি গঠনের পরই বিদ্রোহীদের মুখে পড়েন তাঁরা। সংগঠনে বাড়তে থাকে বিভক্তি। বর্তমানে ছাত্রদলে সাতটি গ্রুপ। সংগঠনের সাবেক সহসভাপতি নুরুল ইসলাম এবং সাবেক আন্তর্জাতিক-বিষয়ক সম্পাদক মশিউর রহমান দুটি গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সহসভাপতি বজলুল করিম চৌধুরী ওরফে আবেদ, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল কাদের ভূঁইয়া ওরফে জুয়েল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি হাসান মামুন এবং সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ওরফে ফিরোজ একটি করে গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সময় আধিপত্য সৃষ্টি করা ছাত্রনেতা খোকন ও শিপন বিদ্রোহ করলেও এখন তাঁরা মূল দলে।নুরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছাত্রদলের বর্তমান কমিটির মেয়াদ নেই। ছয় মাসের জন্য এই কমিটি হলেও দুই বছর ধরে চলছে। কেন্দ্রীয় কমিটির বেশির ভাগ নেতা-কর্মী এখন আমার সঙ্গে আছে। এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতা-কর্মীরা মূল দল ছেড়ে আমার সঙ্গে আছে। আমি সবাইকে নিয়ে দলের প্রতিটি কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছি।’মশিউর রহমান বলেন, ‘ছাত্ররাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই ছাত্রদল নিষ্ক্রিয়। তাই নিয়মিত ছাত্রদের নিয়ে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সংগঠন গড়ে তুলছি। দলের সব কর্মসূচিতেই আমরা থাকব।’আবদুল কাদের বলেন, ছাত্রদলের বর্তমান কমিটি পুরোপুরি ব্যর্থ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন বিএনপি, ছাত্রদল, খালেদা ও তারেক রহমানের নামে কোনো স্লোগান নেই। জেলা কমিটি গঠনে অর্থ লেনদেন হচ্ছে। সারা দেশে ছাত্রদল শেষ হয়ে যাচ্ছে।ছাত্রদল সূত্রে জানা গেছে, গত ১ জানুয়ারি ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে নতুন কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত হয়েছিল। কিন্তু বিএনপির প্রভাবশালী একটি অংশের কারণে তা এগোয়নি। নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, বিএনপির একজন যুগ্ম মহাসচিবসহ কয়েকজন প্রভাবশালী নেতার হস্তক্ষেপের কারণে ছাত্রদলের নতুন কমিটি হচ্ছে না।এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগ যা করছে, তাতে অন্দোলন ছাড়া বিকল্প নেই। তাই সামনের প্রতিটি কর্মসূচিতেই রাজপথে থাকবে ছাত্রদল। শিগগিরই ছাত্রদলের নতুন কমিটি হবে বলে জানান তিনি।ছাত্রলীগ: ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগ আড়াই বছর ধরে সমালোচিত ছাত্রসংগঠন। টেন্ডারবাজি ছাড়াও সারা দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছেন ছাত্রলীগের কর্মীরা। এসব ঘটনায় মারা গেছেন পাঁচজন। আহত হয়েছেন হাজার খানেক। বন্ধ হয়েছে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।সংগঠনের নেতা-কর্মীরা বলছেন, কার্যত ছাত্রলীগের ওপর এখন আর কারও নিয়ন্ত্রণ নেই। দুই বছরের জন্য বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হলেও ছয় বছর ধরে নেতারা পদ আঁকড়ে আছেন। ফলে তৃণমূলে হতাশা বাড়ছে।ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির একজন সহসভাপতি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখন কোনোরকম উদ্দেশ্য ছাড়াই চলছে সংগঠন। বছরের পর বছর ধরে একই কমিটি রয়েছে, ফলে তরুণেরা আগ্রহ হারাচ্ছে। জেঁকে বসছেন বয়স্করা। সংগঠন চালানোর বদলে তাঁরা চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিসহ নানান অপকর্মে লিপ্ত।তবে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মাহমুদ হাসান এসব মানতে নারাজ। তাঁর মতে, ছাত্রলীগ ঠিক পথেই চলছে। ছাত্রলীগে কেউ অন্যায় করলে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। কয়েক বছরে এভাবে অনেককে বহিষ্কার করা হয়েছে।২০০৬ সালের ৪ এপ্রিল মাহমুদ হাসানকে সভাপতি এবং মাহফুজুল হায়দার চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক করে ছাত্রলীগের বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়। ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের ১১(খ) ধারা অনুযায়ী কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের কার্যকাল দুই বছর। সে অনুযায়ী, দুই বছরের এই কমিটির মেয়াদ শেষ হয় ২০০৮ সালের এপ্রিলে। কিন্তু তিন বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো মেয়াদহীন কমিটিই ছাত্রলীগের ভরসা।নির্বাচন কমিশনের বর্তমান গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ অনুযায়ী ছাত্রসংগঠনগুলো স্বাধীন। এরা কোনো মূল দলের অংশ নয়। যে কারণে বিগত আড়াই বছরে সরকারকে বিব্রত করে এমন অপকর্মের পর মন্ত্রীরা পর্যন্ত বলেছেন, ছাত্রলীগের ব্যাপারে তাঁদের করার কিছু নেই।গত বছরের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এফ রহমান হলে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষ এবং এ ঘটনায় মেধাবী ছাত্র আবু বকরের মৃত্যুর ঘটনার পর ছাত্রলীগ নিয়ে সারা দেশে আবার সমালোচনার ঝড় ওঠে। ওই ঘটনার পর আওয়ামী লীগের তিন সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, আহমদ হোসেন ও বি এম মোজাম্মেল হককে ছাত্রলীগকে দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু এক বছর পেরিয়ে গেলেও ওই কমিটি কিছু করতে পারেনি।এ বিষয়ে জানতে আহমদ হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ক্ষুব্ধ কণ্ঠে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছাত্রলীগকে নিয়ে আমাকে কিছু জিজ্ঞেস করবেন না। যা জিজ্ঞেস করার ছাত্রলীগের নেতাদের করুন। তা ছাড়া গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ অনুযায়ী ছাত্রলীগ স্বাধীন সংগঠন। কাজেই এ নিয়ে আমি কোনো কথা বলতে পারি না।’ গত বছর তো প্রধানমন্ত্রী আপনাদের ছাত্রলীগকে দেখভাল করার দায়িত্ব দিয়েছিলেন, সেটার কী হলো? তিনি বলেন, ‘আমাদের যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, আমরা সেটা পালন করেছি।’ তাহলে ছাত্রলীগ ঠিক হচ্ছে না কেন? তাঁর জবাব, এই প্রশ্ন ছাত্রলীগের নেতাদের করুন।ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাহমুদ হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘কমিটি গঠনের নামে অর্থ-বাণিজ্যের অভিযোগ ভিত্তিহীন। সারা দেশে প্রকৃত ছাত্রদের হাতে ছাত্রলীগের রাজনীতি ফিরিয়ে আনার কাজ চলছে। বেশির ভাগ জেলায় সম্মেলন হয়ে গেছে। যেখানে বাকি আছে সেসব জেলায় এখন কমিটি গঠনের কাজ চলছে। সেটি শেষ হলেই সম্মেলন করে নতুন কমিটি করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.