শরিফুল হাসান
বাংলাদেশিদের জন্য মালয়েশিয়ায় চাকরির দারুণ সুযোগ তৈরি হয়েছে। দেশটি বলছে, আগামী তিন বছরে বাংলাদেশ থেকে ১৫ লাখ কর্মী নেবে। যাঁরা কাজের জন্য মালয়েশিয়ায় যেতে চান, তাঁদের জন্য এটি দারুণ এক সুযোগ। এর আগে শুধু বনায়ন খাতে কর্মী নিলেও এবার সব খাতেই কর্মী নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে দেশটি। জনশক্তি রপ্তানিকারকেরা আশা করছেন, মালয়েশিয়ার বাজার পুরোদমে চালু হলে কাতারসহ মধ্যপ্রাচ্যে কর্মী যাওয়ার চাপ কিছুটা কমে আসবে। বেসরকারি রপ্তানিকারকদের যুক্ত করে সরকারি ব্যবস্থাপনায় (জিটুজি প্লাস পদ্ধতি) মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর বিষয়ে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর ইস্কাটনে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে এই স্মারক সই হয়। এতে বাংলাদেশের পক্ষে সই করেন প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী নুরুল ইসলাম ও মালয়েশিয়ার পক্ষে সই করেন সে দেশের মানবসম্পদমন্ত্রী দাতো রিচার্ড রায়ট আনাক জায়েম। সমঝোতা স্মারক সই করার পরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী দাতো রিচার্ড রায়ট আনাক জিম বলেন, নতুন এই পদ্ধতিতে মনোপলি (একচেটিয়া) ব্যবসার কোনো সুযোগ নেই। একেকজন কর্মীর ন্যূনতম মজুরি কত হবে—এ-সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে রিচার্ড রায়ট আনাক জায়েম বলেন, স্থানীয়ভাবে মালয়েশিয়ায় এলাকাভেদে ন্যূনতম মজুরি হলো ৯০০ ও ৮০০ রিঙ্গিত। সে অনুযায়ী মজুরি হবে।
অনুষ্ঠানে প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশের কর্মী পাঠাতে একেক জনের অভিবাসনব্যয় ৩৪ হাজার টাকা থেকে ৩৭ হাজার টাকার মধ্যে সীমিত রাখা সম্ভব হবে। কর্মী পাঠানোর এই কার্যক্রম তদারক করবে মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, এবারের প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও জবাবদিহিপূর্ণ হবে। আগে কেবল বনায়ন খাতে লোক পাঠানো হতো। এবার সেবা, উৎপাদন, নির্মাণসহ সব খাতে কর্মী পাঠানো যাবে। প্রত্যেক শ্রমিককে তিন বছরের চুক্তিতে নিয়োগ দেওয়া হবে। এরপর তিনি আরও এক বছর কাজ করার সুযোগ পাবেন। কর্মীদের বেতন সরাসরি ব্যাংক হিসাবে জমা হবে।
জানতে চাইলে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব কাজী আবুল কালাম প্রথম আলোকে বলেন, মন্ত্রিসভা ইতিমধ্যেই জিটুজি প্লাসের খসড়ার অনুমোদন দিয়েছে। কর্মী পাঠানো শুরু হতে কয়েক মাস সময় লাগতে পারে। নতুন প্রক্রিয়ায় মালয়েশিয়ায় কর্মী যেতে ৩৪ হাজার থেকে ৩৭ হাজার টাকা ব্যয় হবে। এই টাকা নিয়োগদাতা দেবে।
জনশক্তি রপ্তানিকারক ও সরকারি সূত্রে জানা গেছে, মালয়েশিয়ায় অবৈধ প্রবাসীদের বৈধ করার পরেই এই প্রক্রিয়া শুরু হবে। তবে মালয়েশিয়ায় কত লোক লাগবে, কারা এবার লোক পাঠানোর প্রক্রিয়ায় যুক্ত হচ্ছেন—এসব নিয়ে এখনো ধোঁয়াশা কাটেনি। মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশের শ্রমিক, ব্যবসায়ী সংগঠন ও বেসরকারি মানবাধিকার সংস্থা বলছে, যেভাবে সবকিছু হচ্ছে, তাতে অতীতের মতোই দুর্নীতির আশঙ্কা রয়ে গেল। বিশেষ করে জনশক্তি রপ্তানিকারকদের মধ্যে মালয়েশিয়ায় লোক পাঠানোর প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করার প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য আগে নিবন্ধিত সাড়ে ১৪ লাখ লোকের সঙ্গে নতুন করে কর্মীরা নিবন্ধন করতে পারবেন। কর্মী চূড়ান্ত হওয়ার পর পুরো প্রক্রিয়া অনলাইনে সম্পন্ন হবে। মালয়েশিয়ায় একটি ওয়ান স্টপ সেন্টার থাকবে। সে দেশের নিয়োগকারীরা ওয়ান স্টপ সার্ভিসে তাঁদের কর্মীর চাহিদা জানাবেন। সে অনুযায়ী মালয়েশিয়ার সরকার বাংলাদেশকে চাহিদাপত্র পাঠাবে। এরপর বাংলাদেশ সরকারের তথ্যভান্ডার থেকে কর্মী দেওয়া হবে।
মালয়েশিয়ার একাধিক গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে উপপ্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জাহিদ হামিদি বলেন, বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক এনে সরকার শিল্প ও ব্যবসায়িক সংগঠনগুলোর চাহিদা পূরণ করবে। একসঙ্গে ১৫ লাখ শ্রমিক আসবেন না। তিন থেকে পাঁচ বছরে ধাপে ধাপে এসব কর্মী আসবেন।
অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করা সংগঠন কারাম এশিয়ার আঞ্চলিক সমন্বয়ক হারুন আল রশিদ বলেন, বৈধকরণ প্রক্রিয়া, লেভি, ১৫ লাখ কর্মী নেওয়া—সব মিলিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের সতর্ক হওয়া উচিত, যাতে সাধারণ মানুষ প্রতারিত না হয়।



