ভ্রমণ ভিসায় মালয়েশিয়া যাওয়ার হিড়িক

Spread the love

বৈধ হওয়ার লোভে অবৈধ হওয়ার ফাঁদে

শরিফুল হাসান

মালয়েশিয়ায় বৈধ হওয়ার লোভে গিয়ে অবৈধ হওয়ার ফাঁদে পা দিচ্ছেন অনেকে। প্রতিদিনই কয়েক শ বাংলাদেশি ভ্রমণ ভিসায় মালয়েশিয়ায় গিয়ে কাজের জন্য থেকে যাচ্ছেন। কিন্তু ভিসার মেয়াদ ফুরালে তাঁরা গ্রেপ্তার হবেন। বৈধ জনশক্তি রপ্তানিতেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও বিমানবন্দর সূত্র এই মালয়েশিয়াগামী ঢলের কথা জানিয়েছেন। এই দুই সূত্রে জানা গেছে, একশ্রেণীর দালাল মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে সহজ-সরল শ্রমিকদের চাকরির লোভ দেখিয়ে ভ্রমণ ভিসায় মালয়েশিয়া পাঠাচ্ছেন। অবৈধ শ্রমিকদের বৈধ করার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে ওই দালালেরা বলছেন, এখন মালয়েশিয়া গেলেই বৈধ হওয়া যাবে। কিন্তু আসলে এভাবে ভ্রমণ ভিসায় যাওয়া লোকজন কেউ বৈধ কর্মী হতে পারবেন না। কারণ এখন যাঁরা মালয়েশিয়ায় যাচ্ছেন, তাঁদের সবার আঙুলের ছাপ রেখে দেওয়া হচ্ছে। থেকে যাওয়ার চেষ্টা করলে উল্টো তাঁরা সে দেশে গ্রেপ্তার হয়ে জেলে যেতে পারেন। এ ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়। চার-পাঁচ বছর ধরে আছেন কিন্তু কাজের অনুমতিপত্র নেই, সম্প্রতি শুধু এমন অবৈধ অভিবাসী শ্রমিকদের বৈধ করে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে মালয়েশিয়া। ১১ জুলাই থেকে এ কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। কিন্তু উপরিউক্ত শর্ত প্রযোজ্য নয়, এমন কেউই এই সুযোগ নিতে পারবেন না। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) মহাপরিচালক খোরশেদ আলম চৌধুরী গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, মালয়েশিয়ায় দীর্ঘদিন ধরে আছেন, এমন তিন লাখ শ্রমিক বৈধ হওয়ার সুযোগ পাবেন। এই শ্রমিকদের তথ্য মালয়েশিয়ার তথ্যভান্ডারে (ডেটাবেইস) নেই। কিন্তু এখন যাঁরা যাচ্ছেন, মালয়েশিয়ার কর্তৃপক্ষ তাঁদের সবার ছবি ও আঙুলের ছাপ রেখে দিচ্ছে। এপ্রিল থেকে এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ফলে এখন কোনো শ্রমিক গিয়ে চাইলেও বৈধ হওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন না। বিএমইটি মহাপরিচালক বলেন, এ কারণে যাঁরা ভ্রমণ ভিসায় গিয়ে কাজের কথা ভাবছেন, তাঁদের এই চিন্তা বাদ দেওয়া উচিত। এভাবে গিয়ে তাঁরা যেমন নিজেদের বিপদ ডেকে আনছেন, তেমন দেশের ভাবমূর্তিরও ক্ষতি করছেন। সরকারের পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চাইলে খোরশেদ আলম চৌধুরী বলেন, ‘এ ব্যাপারে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের একটি টাস্কফোর্স আছে। ওই টাস্কফোর্স এখন থেকে কাজ শুরু করবে। এর ফলে অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় যাওয়া হয়তো ঠেকানো যাবে। মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশনের শ্রম কাউন্সিলর মন্টু কুমার বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, মালয়েশিয়ার শ্রমিকদের বৈধ করার ঘোষণা কেবল ইতিমধ্যে অবৈধ হওয়া শ্রমিকদের জন্য। দেশটি এক বছর ধরে শ্রমিকদের কাজের অনুমতিপত্র দিচ্ছিল না। এর ফলেই পুরোনো শ্রমিকেরা অবৈধ হয়েছেন। কিন্তু নতুন করে আসা কেউ এই সুযোগ পাবেন না। বিএমইটির বহির্গমন শাখার কর্মকর্তারা বলছেন, একশ্রেণীর দালাল কর্মপ্রার্থীদের কাছ থেকে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা নিয়ে ভ্রমণ ভিসায় মালয়েশিয়া পাঠাচ্ছেন। অনেক ট্রাভেল এজেন্সিও এই তৎপরতায় জড়িত। এভাবে ছাড়াও অবৈধ নানা প্রক্রিয়ায় একশ্রেণীর লোক মালয়েশিয়ায় যাওয়ার চেষ্টা করছে।মালয়েশিয়ার অভিবাসন আইন, ১৯৫৯-এর ১৫(১)সি-তে বলা হয়েছে, ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর কেউ সে দেশে থাকলে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হবে। কাজেই এক মাসের ভ্রমণ ভিসা নিয়ে যাওয়া কেউ অতিরিক্ত সময় থাকলে তিনি অবৈধ হিসেবে গ্রেপ্তার হবেন। জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বায়রার সভাপতি আবুল বাশার প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখন প্রতিদিন ২০০ থেকে ৩০০ লোক কাজের উদ্দেশ্যে ভ্রমণ ভিসায় মালয়েশিয়ায় যাচ্ছে বলে আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য রয়েছে। দালালচক্র এদের কাছ থেকে অনেক টাকা নিচ্ছে। এর ফলে এই লোকগুলো বিপদে পড়বে। বৈধ বাজারও নষ্ট হচ্ছে। কাজেই ভ্রমণ ভিসায় লোক যাওয়া ঠেকানো সরকারের দায়িত্ব।’ এশিয়ার অভিবাসন-বিষয়ক বেসরকারি সংস্থাগুলোর জোট ‘কারাম এশিয়ার’ প্রধান সমন্বয়ক হারুন-অর-রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘কেউ যদি দালালদের প্রতারণায় এখন মালয়েশিয়ায় কাজের জন্য আসে, তারা চরম বিপদে পড়বে। বাংলাদেশ সরকারের উচিত, যেকোনোভাবে এটি ঠেকানো।’গুরুত্বপূর্ণ শ্রমবাজারটিতে পাওয়া নতুন সুযোগের অপব্যবহার ঠেকাতে কী করা হচ্ছে, জানতে চাইলে পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ভ্রমণ ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রে ঢাকায় মালয়েশীয় দূতাবাসকে আরও যাচাই করতে অনুরোধ করা হয়েছে। এ ছাড়া অতীতের ভ্রমণ রেকর্ড দেখেই কেবল কাউকে যাত্রার অনুমতি দেওয়া হবে। এ বিষয়ে খুব শিগগির প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে একটি বৈঠক হবে। এসবির বহির্গমন বিভাগের দায়িত্বে থাকা বিশেষ সুপার নাসিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে ভ্রমণ ভিসায় মালয়েশিয়া যাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। তবে আমরাও এখন তৎপর আছি। যাঁরা যাচ্ছেন তাঁরা অতীতে কোন কোন দেশে গেছেন, তাঁদের কথাবার্তা, চেহারা—এসব দেখেই আমরা যাওয়ার অনুমতি দিচ্ছি। কাউকে সন্দেহজনক মনে হলে আমরা তাঁকে যেতে দিচ্ছি না। গত মাসে এমন ২০০ জনকে বিমান থেকে নামিয়ে যাত্রা স্থগিত করা হয়েছে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published.