তিনি পড়েন, কাজও করেন

Spread the love

শরিফুল হাসান

সুদর্শন তরুণটির চোখে চশমা। মুখে মিষ্টি হাসি। বিক্রি করছেন টুপি, আতর, খেজুরসহ নানা সামগ্রী। চট করে দেখলে কারও মনে হতে পারে, তরুণ ‘নায়ক’ কোনো নাটক বা চলচ্চিত্রের শুটিং করছেন। কিন্তু তা নয়, এটি বাস্তব জীবনের দৃশ্য।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনের ফটকে গেলে দেখা যাবে এই দৃশ্য।
টুপি ও আতরবিক্রেতা এই তরুণের নাম আনোয়ার সাদাত। তিনি রাজধানীর তিতুমীর কলেজের সমাজকর্ম বিভাগের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। এই নগরে অনেক তরুণ যখন টাকার জন্য নানা ধরনের অপকর্ম করে বেড়ান, তখন তিনি লেখাপড়ার পাশাপাশি এই কাজ করেন। স্নাতকের ছাত্র হয়েও এ কাজে তাঁর কোনো জড়তা নেই। বরং তিনি মনে করেন, সব কাজই সম্মানের।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে যাঁরা নামাজ পড়েন কিংবা এই পথে চলাচল করেন, তাঁরা একটু খেয়াল করলেই দেখবেন, উত্তর গেটে দাঁড়িয়ে বেচাকেনা করছেন আনোয়ার। গত শুক্রবার সেখানেই তাঁর সঙ্গে কথা হয়।
আনোয়ারের গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জে। থাকেন ঢাকায়। তাঁর বাবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে চাকরি করেন। আনোয়ার জানালেন, ক্লাস থাকলে প্রতিদিন সকালে কলেজে গিয়ে ক্লাস করেন। ক্লাস শেষ হলে দুপুরে চলে আসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। এরপর বিকেল পর্যন্ত মসজিদের সামনে দাঁড়িয়ে বেচাবিক্রি করেন। বিকেলের পর তাঁর বাবা দোকান চালান।
বেচাবিক্রি কেমন হয়? জানতে চাইলে আনোয়ার জানান, প্রতিদিন তিন থেকে চার হাজার টাকা বিক্রি হয়। এর মধ্যে ছয় থেকে সাত শ টাকা লাভ থাকে। আনোয়ার জানান, তাঁদের ভ্রাম্যমাণ দোকানে দেশি-বিদেশি টুপি বিক্রি হয় বেশি। এ ছাড়া আতর, সুগন্ধিসহ অন্যান্য পণ্যও কমবেশি বিক্রি হয়।
আনোয়ার জানান, পবিত্র রমজান সামনে রেখে নানা ধরনের খেজুর এনেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য ছাত্ররা যখন ক্লাস করেন, তখন এখানে ভ্যানে করে পণ্য বিক্রি করছেন। কোনো ধরনের জড়তা কাজ করে কি না? জানতে চাইলে আনোয়ার বলেন, ‘কাজই তো করছি। আর্থিক অবস্থা ভালো থাকলে হয়তো করতাম না। এখন জীবনের জন্য করছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরাই এখানকার ক্রেতা। এর মধ্যে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনেকেই বাবাকে চেনেন। আমাকেও চেনেন।’
মাদ্রাসা থেকে আলিম পাস করেছেন আনোয়ার। আলিমে পেয়েছেন জিপিএ ৪ দমশিক ৯২। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ইচ্ছা ছিল তাঁর। কিন্তু হয়নি।
সমাজকর্ম বিষয়ে লেখাপড়া করতে ভালো লাগছে আনোয়ারের। সমাজকর্মের লেখাপড়া ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর সুযোগ আছে, এমন কোথাও কাজ করতে চান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published.