ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) অঞ্চল-১-এর কার্যালয়

Spread the love

সেবাদাতা আছেন, সেবাগ্রহীতা কম

শরিফুল হাসান

সেবা দিতে বসে আছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তবে সেবা নিতে আসা নাগরিকদের সেরকম ভিড় নেই। এ কারণে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কেউ নথি নিয়ে দাপ্তরিক কাজে ব্যস্ত, কেউ আবার অলস সময় কাটাচ্ছেন। কাউকে দেখা গেল খোশগল্প করতে। প্রথমে দেখলে যে কারও মনে হতে পারে, এখানকার লোকজনের বুঝি কাজ নেই!
এই চিত্র ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) অঞ্চল-১-এর কার্যালয়ের। গত মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করে এই চিত্র দেখা যায়।
ঢাকার দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫৭টি ওয়ার্ডকে ৫টি অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে। নাগরিকদের গৃহ কর থেকে শুরু করে ট্রেড লাইসেন্স, জন্মনিবন্ধন সনদ, সালিসসহ নানা সেবার জন্য আঞ্চলিক কার্যালয়গুলোতে যেতে হয়।
১৫, ১৬, ১৭, ১৮, ১৯, ২০ ও ২১ নম্বর ওয়ার্ড অঞ্চল-১-এ পড়েছে। নগর ভবনে অঞ্চল-১-এর কার্যালয়। একজন আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তার অধীনে প্রায় ১০০ কর্মকর্তা-কর্মচারী এখানে কাজ করেন।
গতকাল দুপুর ১২টায় নগর ভবনের নয়তলায় আঞ্চলিক-১-এর জন্মনিবন্ধন শাখায় গিয়ে দেখা যায়, লোকজনের কোনো ভিড় নেই। মাত্র একজন ব্যক্তি জন্মনিবন্ধন সনদ নিতে এসেছেন। সাইদুল হক নামের ওই কলেজছাত্র জানান, তাঁর মামা কামরুজ্জামান ২০ নম্বর ওয়ার্ডের সেগুনবাগিচা এলাকার বাসিন্দা। তিনি বিদেশে থাকেন। তাঁর মামার আগের জন্মনিবন্ধন সনদ নষ্ট হয়ে গেছে। তাই নতুন সনদ নিতে এসেছেন। তিনি জানান, যেদিন আবেদন করেছেন, তার দুদিন পরই সনদ পেয়েছেন। সনদ পেতে তাঁর তেমন কোনো ভোগান্তি হয়নি। সনদ নেওয়ার জন্য তাঁকে ফি দিতে হয়েছে ১০০ টাকা।
কার্যালয়ের কর্মীরা জানান, একসময় জন্মনিবন্ধন শাখায় অনেক ভিড় থাকত। এখন তাহলে ভিড় নেই কেন—জানতে চাইলে শাখার দায়িত্বরত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, এই বছর মার্চে জন্মনিবন্ধনের নতুন গেজেট হয়েছে। এখন থেকে যিনি যে জেলার স্থায়ী বাসিন্দা, তাঁকে সেখান থেকে সনদ নিতে হচ্ছে। ঢাকার বেশির ভাগ বাসিন্দাই ভাড়াটে। এতে জন্মনিবন্ধন সনদ নিতে আসা লোকের সংখ্যা কমে গেছে। এখন শুধু ঢাকার স্থায়ী বাসিন্দা এবং যারা সদ্য জন্ম নিয়েছে, তাদের সনদ নিতে অভিভাবকেরা আসছেন। তিনি বলেন, জন্মসনদ নিতে দিনে চার-পাঁচজনের বেশি ব্যক্তি আসেন না।
১২ তলায় অঞ্চল-১-এর গৃহ কর শাখায় গিয়ে দেখা যায়, ১০-১২ জন কর্মচারী বসে আছেন তাঁদের চেয়ারে। কেউ নথি নিয়ে কাজ করছেন। কেউ গল্প করছেন। সেবা নিতে আসা লোকের সংখ্যা মাত্র একজন। সেবা নিতে আসা অবসরপ্রাপ্ত চিকিৎসক আকরামুল হক জানালেন, তিনি এলিফ্যান্ট রোডে থাকেন। বাড়ির কর দিতে এসেছেন। কেমন সেবা পাচ্ছেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ভালোই তো। লোকজনের ভিড় নেই। ঝামেলা নেই। দ্রুত কাজ হয়ে যাচ্ছে।’
ট্রেড লাইসেন্স শাখায় গিয়েও সেভাবে ভিড় পাওয়া গেল না। এই শাখার কর্মকর্তা এ কে এম আবদুল মনির বলেন, সাধারণত জুলাই থেকে আগস্ট মাসে ট্রেড লাইসেন্সের জন্য লোকজনের বেশি ভিড় থাকে। অন্য সময়ে সেভাবে ভিড় থাকে না। আবেদন করার তিন দিনের মধ্যেই ট্রেড লাইসেন্স পাওয়া যায়।
কার্যালয়ে সেবা নিতে আসা লোকের সংখ্যা এত কম কেন—জানতে চাইলে অঞ্চল-১ আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা সানাউল হক প্রথম আলোকে বলেন, জন্মনিবন্ধন সনদ বেশি লাগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে। এ কারণে ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে জন্মনিবন্ধনের সনদ নিতে বেশি ভিড় হয়। আর ট্রেড লাইসেন্স-গৃহ কর এসবের জন্য মূলত প্রতি অর্থবছরের শুরুতে, অর্থাৎ জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভিড় হয়। কারণ, এই সময়ে নানা ধরনের রেয়াত দেওয়া হয়ে থাকে। এর বাইরে অন্য সময় সেবাগ্রহীতাদের খুব বেশি ভিড় থাকে না। আবার জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দম ফেলার সময় থাকে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published.