বিদেশে প্রচলিত শ্রমবাজারে ঘুরপাক খাচ্ছে বাংলাদেশ
শরিফুল হাসান
বাংলাদেশ থেকে গত বছর সাড়ে সাত লাখ কর্মীর বৈদেশিক কর্মসংস্থান হয়েছে। বিপুলসংখ্যক নারী গৃহকর্মী বিদেশে যাওয়ায় গত আট বছরের মধ্যে এই সংখ্যা সর্বোচ্চ। তবে বরাবরের মতো নতুন কোনো শ্রমবাজারের বদলে ওমান, সৌদি আরব, কাতার, বাহরাইনের মতো প্রচলিত শ্রমবাজারেই ঘুরপাক খেয়েছে বাংলাদেশ।
অবশ্য প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তিনি মন্ত্রণালয়ে যোগ দেওয়ার পর থেকে নানা পদক্ষেপ নিয়েছেন, যার কারণে বিদেশে যাওয়া কর্মীর সংখ্যা বেড়েছে।
প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালে ৭ লাখ ৫৭ হাজার ৭৩১ জন কর্মী বিভিন্ন দেশে গেছেন। ২০১৫ সালে এই সংখ্যা ছিল সাড়ে ৫ লাখ।
দেশওয়ারি তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত বছর সবচেয়ে বেশি কর্মী গেছেন ওমানে। এই সংখ্যা ১ লাখ ৮৮ হাজার ২৪৭ জন। অর্থাৎ মোট বিদেশগামীর প্রায় ২৫ শতাংশই গেছেন ওমানে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কর্মী গেছেন সৌদি আরবে। তবে দেশটিতে নারী গৃহকর্মীরাই বেশি যাচ্ছেন। সৌদি আরবের পর সবচেয়ে বেশি কর্মী গেছেন কাতারে। ২০২২ সালের বিশ্বকাপ সামনে রেখে কাতার কয়েক বছর ধরেই বিপুলসংখ্যক কর্মী নিচ্ছে।
সাবেক প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন বললেন, তাঁর আমলে ১৫৯টি দেশে কর্মী পাঠানো হচ্ছে। আর বর্তমান প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বলছেন, এখন ১৬২টি দেশে কর্মী পাঠানো হচ্ছে। তবে বাস্তবতা হলো, স্বাধীনতার পর চার দশক ধরে প্রচলিত ১১টি শ্রমবাজারেই আটকে আছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাত বন্ধ থাকায় কয়েক বছর ধরে মূলত ওমান, কাতার, বাহরাইন ও সিঙ্গাপুরেই আটকে আছে বাংলাদেশের শ্রমবাজার।
২০১৬ সালে বিদেশে কর্মী যাওয়ার তালিকায় প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় ৯৪টি দেশের তালিকা করলেও এর মধ্যে ৬৬টি দেশ রয়েছে, যেখানে এক শ জন কর্মীও যাননি। একজন বা দুজন কর্মী গেছেন এমন দেশ আছে ৪০টি। বাস্তবতা হলো, গত বছর ১০ হাজারের বেশি কর্মী গেছেন এমন বাজার আছে মাত্র ১০টি।
জনশক্তি রপ্তানি খাতের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা বলছেন, সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় নতুন বাজার চালুর দাবি করা হলেও বাস্তবে তেমন কোনো বাজার দেখা যায়নি।
আবার জনশক্তি রপ্তানিকারকেরা বলছেন, বাজার বন্ধ থাকার পরও মালয়েশিয়ায় কী করে গত বছর ৪০ হাজার লোক গেলেন, আবার মালদ্বীপেই বা হঠাৎ করে ২০ হাজার লোক কেন গেলেন, তা নিয়ে নানা প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। এর বাইরে সুদানেই বা কেন লোক যাচ্ছেন, সেটি নিয়েও প্রশ্ন তৈরি হচ্ছে।
মালয়েশিয়ার বাজার খোলার আগেই সেখানে ৪০ হাজার লোক যাওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বায়রার মহাসচিব রুহুল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘পেশাদার হিসেবে অনেকেই গেছেন, যাঁদের সবাই পেশাদার নন। আমরা মনে করি, এটা বন্ধ হওয়া দরকার। এ কারণেই নিয়োগপ্রক্রিয়া অনলাইনে করতে হবে। তাহলে আমরা বুঝতে পারব, কারা কোথায় যাচ্ছেন। তবে সবাই মিলে কাজ করলে সামনে বাংলাদেশ থেকে আরও বেশি লোকের বিদেশে কর্মসংস্থান হবে।’