ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের সাংগঠনিক চিত্র

Spread the love

ছয় মাসেও কমিটি পূর্ণাঙ্গ হয়নি

শরিফুল হাসান


জাতীয় সম্মেলনের পর ছয় মাসের বেশি হয়ে গেলেও এখনো কেন্দ্রীয় কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে পারেনি আওয়ামী লীগের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগ। এদিকে কমিটি না হওয়ায় পদপ্রত্যাশীরা সাবেক ও বর্তমান নেতাদের বাসায় ছুটছেন।
গঠনতন্ত্র অনুয়ায়ী ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি ২৫১ সদস্যের। গত বছরের ২৬ জুলাই ২৮তম জাতীয় সম্মেলনে সাইফুর রহমান সভাপতি এবং এস এম জাকির হোসাইন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এর দুই মাস পর ৪ অক্টোবর বিজ্ঞপ্তি দিয়ে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের পদপ্রত্যাশীদের জীবনবৃত্তান্ত আহ্বান করে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় দপ্তর। এরপর আরও প্রায় চার মাস পেরিয়ে গেলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি।
পদপ্রত্যাশীদের অভিযোগ, কারা নেতা হবেন, তাঁরা কার অনুসারী, কোন এলাকার নেতা—এসব হিসাব শেষ হচ্ছে না সাবেক ও বর্তমান নেতাদের। তাই কমিটি গঠনে দেরি হচ্ছে। আবার কমিটিতে পদ-পদবি নিয়ে অর্থের লেনদেন হচ্ছে এমন অভিযোগ উঠেছে। তবে সভাপতি সাইফুর রহমান এসব অভিযোগকে ভিত্তিহীন দাবি করেছেন। গতকাল তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিতর্কিত লোক, অযোগ্য লোক কমিটিতে আসার জন্য চেষ্টা-তদবির করতেই পারে। কিন্তু তারা পদ পায় কি না আপনারা নজর রাইখেন।’ কবে নাগাদ কমিটি হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘খুব শিগগিরই কমিটি হয়ে যাবে।’
গত দুই দিনে বর্তমান কমিটির পদপ্রত্যাশী ছয়জন ও সাবেক কমিটির ১৪ জন নেতা-কর্মীর সঙ্গে কথা হয়েছে। প্রত্যেকেই বলেছেন, ছাত্রলীগ কীভাবে চলবে, কত দিন কমিটি থাকবে, তার সবই বলা আছে গঠনতন্ত্রে। কিন্তু দেড় যুগেরও বেশি সময় ধরে সেই গঠনতন্ত্র উপেক্ষিত। ফলে সংগঠনে সংকটের শেষ নেই। ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে গত ছয় বছরে ৪০ জন নেতা-কর্মী প্রাণ হারিয়েছেন। এ ছাড়া ছাত্রলীগের নেতাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, ভর্তি-বাণিজ্যসহ নানা অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন সময়ে।
ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের ১১ (খ) ধারা অনুযায়ী কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের কার্যকাল দুই বছর। এই সময়ের মধ্যে জাতীয় সম্মেলন করতে হবে। অন্যথায় নির্বাহী সংসদের কার্যকারিতা থাকবে না। কিন্তু এই গঠনতন্ত্রের এই নিয়ম না মেনে এক যুগ ধরে প্রতিটি কমিটিই তিন থেকে চার বছর মেয়াদ পার করছে। গঠনতন্ত্রের ১৫ ধারার (ঙ) উপধারায় বলা হয়েছে, প্রতি দুই মাসে অন্তত একবার কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সভা বসবে। কিন্তু গত ছয় মাসেও কমিটি না হওয়ায় কোনো বৈঠক হয়নি। অবশ্য পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়ে গেলেও এ নিয়ম মানে না কমিটি। বরং সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকই সব সিদ্ধান্ত নেন।
ছাত্রলীগের একাধিক নেতা-কর্মী জানিয়েছেন, ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত নিয়মিত ছাত্রলীগের কমিটি হয়েছে। কিন্তু ১৯৯৪ সালের পর থেকে এর নিয়মিত ব্যত্যয় ঘটতে থাকে। কখনো চার, কখনো পাঁচ বছর পর নতুন কমিটি হওয়া অনেকটাই নিয়মে পরিণত হয়েছে।
ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের অনেকেরই অভিযোগ, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা হওয়ার জন্য এখন বয়স নির্ধারণ করা হয়েছে ২৯। কিন্তু দুই বছরের কমিটি চার বছর থাকার কারণে ছাত্রনেতার বয়স ২৯ পেরিয়ে যায়। ফলে তিনি যখন বুঝতে পারেন আর নেতা হতে পারবেন না, তখন ব্যবসা-বাণিজ্য, ঠিকাদারি কিংবা চাকরি পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন। ছাত্রলীগকে ঠিক করতে হলে নিয়মিত সময়ে সম্মেলন করতে হবে। ।

Leave a Reply

Your email address will not be published.