আরও ১৩২ এনজিওর নিবন্ধন বাতিল
শরিফুল হাসান
গত এক মাসে বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট আরও ১৩২টি বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) নিবন্ধন বাতিল করেছে এনজিওবিষয়ক ব্যুরো। এর আগে বাতিল করা হয় ৩৩৪টির নিবন্ধন। এ নিয়ে চার মাসে ৪৬৬টি এনজিওর নিবন্ধন বাতিল হলো।এনজিও ব্যুরোর গত ৩০ আগস্ট পর্যন্ত সর্বশেষ হিসাবে এ তথ্য পাওয়া গেছে। ব্যুরোর ওয়েবসাইটে ইতিমধ্যে বাতিল হওয়া এসব এনজিওর তালিকা দেওয়া হয়েছে। ব্যুরোর উপপরিচালক জাফর উল্লাহ খান প্রথম আলোকে জানান, নানা অভিযোগ এবং দীর্ঘদিনেও সনদ নবায়ন না করার কারণেই মূলত এসব এনজিওর নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে।ব্যুরোর একাধিক কর্মকর্তা জানান, বছরের পর বছর এনজিওগুলোর সামগ্রিক কার্যক্রম তদারক করা হচ্ছিল না। এ কারণেই ব্যুরো প্রতিষ্ঠার পর ১৯ বছরে মাত্র ৫৬টি এনজিওর নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছিল। কিন্তু এক বছর ধরে সার্বিকভাবে এনজিওগুলোর কাজ তদারক করার চেষ্টা চলছে। এরই অংশ হিসেবে এপ্রিল মাস থেকে ৩০ আগস্ট পর্যন্ত ৪৬৬টি এনজিওর নিবন্ধন বাতিল করা হয়।ব্যুরোর কর্মকর্তারা জানান, অনেক মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে নিবন্ধন নিলেও বাস্তবে এসব এনজিও সেভাবে কাজ করেনি। সর্বশেষ নিবন্ধন বাতিলের তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বাতিল এনজিওগুলো শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষক, আদিবাসী, বন্যা, নারী, দারিদ্র্য বিমোচন ইত্যাদি বিষয় নিয়ে কাজ করতে নিবন্ধন নিয়েছিল। কিন্তু অনেকগুলোরই এখন কার্যক্রম নেই। এই এনজিওগুলো সেভাবে পরিচিতও নয়। এসব কারণে এক দশক আগে নিবন্ধনের মেয়াদ শেষ হলেও অনেকগুলো এনজিও নবায়নের জন্য আবেদন করেনি। তাদের আয়-ব্যয়ের হিসাবও ব্যুরোর কাছে নেই।ব্যুরোর সহকারী পরিচালক (নিবন্ধন) খুরশিদ আলম প্রথম আলোকে জানান, বিদেশি সাহায্যপুষ্ট এনজিওগুলো দ্য ফরেন ডোনেশনস (ভলান্টারি অ্যাক্টিভিটিজ) রেগুলেশন রুলস, ১৯৭৮ এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ২০০১ সালের ২৯ মে জারি করা পরিপত্র অনুযায়ী চলে। ওই আইনে বলা আছে, নিবন্ধনের তারিখ থেকে পাঁচ বছর পর প্রতিটি বেসরকারি সংস্থাকে নিবন্ধন নবায়নের আবেদন করতে হবে। ওই আবেদনের সঙ্গে এনজিওটির পাঁচ বছরের কার্যক্রম, বার্ষিক প্রতিবেদন ও নিরীক্ষা প্রতিবেদন জমা দিতে হবে। ফলে যারা দীর্ঘদিনেও নবায়নের আবেদন করেনি, সেই এনজিওগুলোর নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে।ব্যুরোর এক কর্মকর্তা বলেন, একসময় বিদেশ থেকে এনজিওগুলোর কাছে সরাসরি অনেক টাকা আসত। এই টাকা অনেকেই লুটপাট করেছেন। এসব দেখে অনেকেই ব্যবসার উদ্দেশ্য নিয়ে এনজিও চালু করেন। কিন্তু এখন ছোট এনজিওগুলো সরাসরি টাকা পায় না। বড় কিছু এনজিওর মাধ্যমে এখন বিদেশ থেকে টাকা আসে। ফলে অনেক এনজিওরই কার্যক্রম নেই। একাধারে এতগুলো এনজিওর নিবন্ধন বাতিলের প্রতিক্রিয়ায় ফেডারেশন অব এনজিওস ইন বাংলাদেশের (এফএনবি) পরিচালক তাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, নবায়ন না করার কারণেই মূলত এসব এনজিওর নিবন্ধন বাতিল করা হচ্ছে। কিন্তু এই নবায়ন-প্রক্রিয়া নিয়ে এনজিও ব্যুরোর বিরুদ্ধে অনেক অস্বচ্ছতা ও দুর্নীতির অভিযোগ আছে। অনেক এনজিওর অভিযোগ, নিবন্ধন বা নবায়ন নিয়ে ব্যুরোতে মূলত লেনদেন চলে। ব্যুরোর কিছু কর্মচারী ঘুষ ছাড়া নবায়নের কাজ করতে চান না। তাই অনেক এনজিও চাইলেও নিবন্ধন নবায়ন করতে পারছে না।



