চাকরি নিয়ে বিদেশ যাত্রা

Spread the love

শরিফুল হাসান

মালয়েশিয়ার কোতারা, মক্কার মিসফালা, জেদ্দার নাজলা, রিয়াদের হারা কিংবা নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটস, কানাডার টরোন্টো, অষ্ট্রেলিয়ার সিডনি, লন্ডনের ব্রিকলেনে কিছুক্ষণ হাঁটলে চারপাশের মানুষজন দেখে আপনি অবাক হতে পারেন ‘বাংলাদেশ’ ভেবে। বিদেশের মাটিতে এতো বাংলাদেশি কোত্থেকে এলো সেই প্রশ্নও জাগতে পারে মনে। তবে একটি তথ্য জেনে রাখুন, বাংলাদেশের প্রায় এক কোটি মানুষ এখন আছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। এদের বেশির ভাগই গেছেন জীবিকার সন্ধানে। বৈদেশিক এই কর্মসংস্থান কেবল যে দেশের বেকারত্ব দূর করছে তাই নয়, প্রবাসীদের পাঠানো বৈদেশিক মুদ্রা বা রেমিটেন্সই এখন সচল রাখছে দেশের অর্থনীতি। গত কয়েক বছর ধরে প্রবাসীরা বছরে গড়ে ৭০ হাজার কোটি টাকা পাঠাচ্ছেন রেমিটেন্স হিসেবে। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য অনুযায়ী, প্রতিদিন গড়ে দুই থেকে তিন হাজার বাংলাদেশি চাকরি নিয়ে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন। সে হিসেবে বছরে এ সংখ্যা পাঁচ থেকে ছয় লাখ ছাড়িয়ে যায়।বর্তমান এই বাস্তবতায় আপনিও যদি বিদেশে গিয়ে নিজের ভাগ্যের চাকা ঘোরানের চিন্তা করে থাকেন সেটি অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে তবে বিদেশে যাওয়ার আগে অবশ্যই ভালো করে জেনে নিন কিছু তথ্য। অন্যথায় প্রতারণার শিকার কিংবা বিপদে পড়ার আশঙ্কা থাকে। কোথায় যাবেন?বাংলাদেশ থেকে যারা বিদেশে যান তাদের একটি বড় অংশই হুট করে বিদেশে যাবার সিদ্ধান্ত নেন। তারা ভাবেন বিদেশে গেলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, ঘুরে যাবে ভাগ্যের চাকা। কিন্তু বিষয়টি তেমন নয়। কাজেই বিদেশে যাওয়ার আগে সময় নিয়ে ভালোভাবে চিন্তাভাবনা করতে হবে। প্রথমেই ভাবতে হবে আপনি কোন কাজ জানেন। এরপর ভাবুন কোন দেশে যাবেন। কতো খরচ হবে। খরচের এই টাকা কোথা থেকে আসবে। ভাবুন যেই কাজে যাচ্ছে তাতে বেতন কতো? সব খরচ বাদ দিয়ে আপনার কতো থাকবে? কত বছরে আপনি খরচের টাকা তুলতে পারবেন। এসব চিন্তা ভাবনা করে তবেই বিদেশে যাবার সিদ্ধান্ত নিন।বাংলাদেশ থেকে চাকুরি নিয়ে যারা বিদেশে গেছেন তাদের মধ্যে ৯০ ভাগেরও বেশি গেছেন মধ্যপ্রাচ্যে। বিএমইটির হিসাব অনুযায়ী, ১৯৭৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে ৮০ লাখ কর্মী বিদেশে গেছেন। এর মধ্যে ২৫ লাখই গেছেন সৌদি আরবে। ২১ লাখ গেছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতে। এছাড়া মালয়েশিয়ায় সাত লাখ, কুয়েতে পাঁচ লাখ, ওমানে ছয় লাখ, সিঙ্গাপুরে পৌনে চার লাখ, বাহারাইনে আড়াই লাখ ও লিবিয়ায় প্রায় এক লাখ কর্মী গেছেন। এগুলোই মূলত বাংলাদেশের প্রধান শ্রমবাজার। এর বাইরে মরিশাস, লেবানন, জর্ডান, দক্ষিণ কোরিয়া, ব্রুনেই এবং ব্রিটেন, ইতালি, গ্রিস, রুমানিয়াসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কিছু মানুষ যাচ্ছেন। এই দেশগুলোকে বলা হয় শ্রম গ্রহণকারী দেশ। এবার আপনি কোন দেশে যাবেন ভেবে নিন। প্রয়োজন প্রশিক্ষণবিদেশে যাওয়ার আগে ভাবতে হবে, কোন কাজে আপনার দক্ষতা বেশি। কোন কাজে নিজেকে যোগ্য মনে করেন। এরপর খোঁজ নিন কোন দেশে আপনার কর্মসংস্থানের সুযোগ বেশি, সেই দেশ এখন কর্মী নিচ্ছে কিনা। ঢাকার ১৩০ নিউ ইস্কাটন রোডের বায়রা ভবন, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, সরকারি জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান বোয়েসেল (৭১-৭২ এলিফ্যান্ট রোড) ও দৈনিক পত্রিকাগুলোর মাধ্যমে বিদেশে নিয়োগের খবরাখবর জানা যাবে। বাংলাদেশ থেকে যারা বিদেশে যান তাদের পেশাজীবী, দক্ষ, আধাদক্ষ এবং অদক্ষ এই চারটি শ্রেনীতে ভাগ করা হয়। বিএমইটির তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত যারা বিদেশে গেছেন তাদের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি অদক্ষ শ্রমিক। পেশাজীবীর সংখ্যা এক ভাগেরও কম। জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বায়রার সভাপতি আবুল বাশার প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ থেকে যারা বিদেশে যেতে চায় তাদের বেশির ভাগই অদক্ষ শ্রমিক। কিন্তু তারা একটু প্রশিক্ষণ নিলেই দক্ষ হয়ে উঠতে পারে। আর দক্ষতা বাড়লে তাদের বেতনও অনেক বেড়ে যাবে। কাজেই আপনি যে কাজে যেতে চাইছেন সেই কাজে দক্ষতা অর্জন করুন। এরপর বিদেশে যাওয়ার প্রস্তুতি নিন। বিএমইটির পরিচালক (প্রশিক্ষণমান ও পরিকল্পনা) নূরুল ইসলাম জানিয়েছেন, বিদেশগামীদের প্রশিক্ষণ দিতে দেশের বিভিন্ন জেলায় সরকারের কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি) রয়েছে। সেখানে নানান ধরনের কাজের প্রশিক্ষণ নেওয়া যায়। এসব প্রশিক্ষণ নিয়ে কেউ বিদেশে গেলে তাঁর দক্ষতা যেমন বাড়বে তেমনি চাহিদাও বাড়বে। পাসপোর্টপাসপোর্ট হলো সরকারের দেওয়া পরিচিতপত্র যার মাধ্যমে নির্দিষ্ট ব্যাক্তির জাতীয়তার পরিচয় প্রদান করার পাশাপাশি তাকে দেশের বাইরে যাবার অনুমতি দেওয়া হয়। আপনি যে দেশেই যেতে চান না কেন, প্রথমেই দরকার নিজের পাসপোর্ট। পাসপোর্টের ফরম পাওয়া যাবে পাসপোর্ট অফিস কিংবা ওয়েবসাইটেও। www.bip.gov.bd এই ঠিকানায় মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের (এমআরপি) ফরম পাওয়া যাবে। একটি বিষয় মনে রাখুন, এখন আর হাতে লেখা পাসপোর্ট নিয়ে বিদেশে যাওয়ার সুযোগ নেই। কাজেই অবশ্যই এমআরপি করুন। এমআরপি পাসপোর্ট পাওয়ার প্রক্রিয়া অনেক সহজ, কাজেই দালালের সহায়তা নেওয়ার কিছু নেই। সরাসরি নিকটস্থ পাসপোর্ট অফিসে যোগাযোগ করুন।কীভাবে চাকুরি পাবেন, কতো খরচঅভিবাসন প্রক্রিয়ার সাথে বাংলাদেশের যেসব প্রতিষ্ঠান জড়িত সেগুলো হলো, বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রনালয়, জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি), সরকারি একমাত্র জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান বোয়েসেল এবং বেসরকারি প্রায় এক হাজার রিক্রটিং এজেন্সি যাদের প্রত্যেকের একটি করে লাইসেন্স নম্বর আছে। এর বাইরে আপনার বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজন আপনাকে বিদেশে নিতে সহায়তা করতে পারে। তবে অবশ্যই কোনো দালালের সহায়তা নেবেন না। বিএমইটির পরিচালন নূরুল ইসলাম জানান, বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে ভিসা বা অন্যান্য সার্বিক সহযোগিতার জন্য মাঝখানের দালাল এড়িয়ে সরাসরি বৈধ কোনো রিক্রুটিং এজেন্সির সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত। আর বিদেশ যেতে আগ্রহীরা আমাদের জেলা কার্যালয়ে গিয়ে নাম নিবন্ধন করতে পারেন। এমনকি তারা মুঠোফোনেও বিদেশে যাওয়ার জন্য নাম নিবন্ধন করতে পারেন। বাংলাদেশ থেকে কোন দেশে যেতে কতো খরচ হবে সে বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত কোন নীতিমালা করেনি সরকার। বিষয়টি নিয়ে কাজ চলছে। তবে মালয়েশিয়ায় ৮৪ হাজার টাকা অর লিবিয়ায় ৩৯ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিলো যদিও বিষয়টি দেখভালের কোনো সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে একটি সহজ উপায় হলো, যতো বেশি মধ্যসত্ত্বভোগীদের এড়িয়ে চলতে পারবেন ততোই খরচ কমবে। সরাসরি যদি কোনো রিক্রটিং এজেন্সির সঙ্গে যোগাযোগ করা যায় কিংবা বোয়েসেলের মাধ্যমে যোগাযোগ করা যায় তাহলে খরচ কম পড়বে। তবে খরচ কতো পড়বে তার চেয়েও বেশি জরুরি আপনি কতো টাকা বেতনে যাচ্ছেন। একটি বিষয় মাথায় রাখুন যতো টাকা খরচ করে যাচ্ছেন সে অনুযায়ী বেতন পাবেন কিনা। কতো দিনে সেই খরচ উঠবে। আর একটি বিষয় মনে রাখবেন, টাকা লেনদেন অবশ্যই ব্যাংকে বা রশিদের মাধ্যমে করবেন। পারলে সাক্ষী রাখবেন। রশিদ না রাখতে পারলে যতো টাকাই দিন না কেন তার কোনো বৈধতা থাকে না।প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকবিদেশগামীদের অনেককেই বিদেশে যাওয়ার জন্য জমিজমা বিক্রি করতে হয়। অনেককে চড়া সুদে ঋণ নিতে হয়। তবে এই সমস্যার সমাধানের জন্য গত বছর থেকে সরকার প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক চালু করেচে। ব্যাংকটির ব্যাবস্থাপনা পরিচালক সি এম কয়েস সামি জানিয়েছেন, মাত্র শতকার ৯ ভাগ সুদে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে বিদেশগামীরা ঋণ নিতে পারবেন। এজন্য তাকে বিদেশে চাকুরির নিয়োগপত্র দেখালেই চলবে। ইউরোপে যাওয়ার পথইউরোপে চাকুরি দেওয়ার নামে প্রতারণার ঘটনা ঘটে প্রায়ই। মনে রাখবেন, বিদেশে যাওয়ার যে নিয়ম ইউরোপে চাকুরি নিয়ে যাওয়ার নিয়মও তাই। ইউরোপের মধ্যে গ্রিস, ইতালি, রুমানিয়া, ব্রিটেন এই দেশগুলোতে অনেকেই চাকুরি নিয়ে যান। ইতালিতে বৈধভাবে কর্মসংস্থান শুরু হয়েছে ২০০২ সালে। বিএমইটির তথ্য অনুযায়ী, গত দশ বছরে ৪২ হাজার ৭৪৫ জন কর্মী ইতালি গেছেন। বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে অনেকেই যাচ্ছেন রুমানিয়ায়। তবে এক্ষেত্রে বেশির ভাগ সময়েই দালালরা আপনাকে অবৈধপথে ইউরোপে ঢোকানোর চেষ্টা করবে। ভুলেও এই ফাঁদে পা দেবেন না।নারী অভিবাসনবাংলাদেশ থেকে ১৯৯০ সাল থেকে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও বিদেশে চাকুরি নিয়ে যাচ্ছেন। তবে ভালোভাবে তথ্য না জানার কারণে অনেকে বিপদেও পড়ছেন। একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ১৮ বছরের নিচে কোনো নারী চাকুরি নিয়ে বিদেশে যেতে পারবেন না। তবে গৃহকর্মী ও পোষাক শ্রমিকদের ক্ষেত্রে বয়স কমপক্ষে ২৫ হতে হবে। মেয়েদের ক্ষেত্রে বিদেশে যাওয়ার জন্য সার্বিক সহায়তা দেয় সরকারি জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান বোয়েসেল। আর মাত্র দশটি রিক্রটিং এজেন্সির বিদেশে নারীদের পাঠানোর অনুমতি আছে। কাজেই এই রিক্রটিং এজেন্সির বাইরে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান বা দালাল এড়িয়ে চলুন।চাকরির চুক্তি ও ওয়ার্ক পারমিটবিদেশি কোনো কোম্পানির সঙ্গে চাকরির শর্তাবলিসংক্রান্ত যে চুক্তি হয় সেই চুক্তিপত্রকেই চাকরির চুক্তি বা জব কন্ট্রাক্ট বলে। চুক্তির শর্তে বেতন-ভাতা, বাসস্থাপন, আহার-ছুটি, চিকিৎসাসহ কোম্পানির সব সুযোগ-সুবধাি ও শর্তের কথা উল্লেখ থাকে। বিদেশে যে কোম্পানি আপনাকে নেবে কিংবা যে নিয়োগকর্তা তিনি এই চুক্তি করেন। বিদেশে যাওয়ার আগে ভালোভাবে চুক্তি এবং চুক্তির শর্ত জেনে যান। চুক্তি ছাড়াও আপনার ওয়ার্ক পারমিটটি ভালো করে দেখুন। ওয়ার্ক পারমিট বা কাজের অনুমতিপত্র মানে আপনি যেই দেশে যাচ্ছেন সেই দেশে নির্দিষ্ট একটি সময় পর্যন্ত কাজ করার অনুমতি। এটি সংশ্লিষ্ট দেশের শ্রম অধিদপ্তর থেকে দেওয়া হয়। মনে রাখবেন বিমানবনদরে কোনো ওয়ার্ক পারমিট দেওয়া হয় না। আরেকটি বিষয় মনে রাখবেন, সৌদি আরবে খাদ্যসহ দক্ষ ও আধাদক্ষ শ্রমিকদের বেতন খাবারসহ ৬০০ রিয়াল ও খাবারছাড়া ৭৫০ রিয়াল, সংযুক্ত আরব অমিরাতে খাদ্যসহ দক্ষ ও আধাদক্ষ শ্রমিকদের বেতন খাবারসহ ৬০০ দিরঅহাম ও খাবারছাড়া ৭৫০ দিরহাম, কুয়েতে খাবারসহ ৪৭ কুয়েতি দিনার, খাবারছাড়া ৬০ কুয়েতি দিনার। মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে নুন্যতম বেতন ২০০ মার্কিন ডলার। এই বেতনের কমে কোথাও চাকুরি করতে যাবেন না।ভিসাভিসা হচ্ছে শ্রম গ্রহণকারী দেশের ইমিগ্রেশন থেকে সেদেশে যাওয়ার অনুমতি। ভিসা ছাড়া কোনো দেশে বৈধভাবে প্রবেশ করা যায় না। চাকুরি নিয়ে বিদেশে যেতে চাইলে পাসপোর্টে অবশ্যই ‘এমপ্লয়মেন্ট ভিসা’ থাকতে হবে। ভিসা ছাড়া কেউ বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা করলে বিমানবন্দরেই আটক হতে পারেন। রিক্রটিং এজেন্সি ও আত্মীয় স্বজন যার মাধ্যমেই ভিসা সংগ্রহ করুন না কেন তা বৈধ কিনা যাচাই করে দেখুন। ভিসা যাচাইয়ের জন্য অভিবাসনে ইচ্ছুক ব্যাক্তি বাংলাদেশে অবস্থতি সে দেশের দূতাবাস কিংবা বিএমইটিতে খোঁজ নিতে পারেন।বিএমইটির ডাটাবেজ নাম লেখানো: বিদেশগামী প্রত্যেক কর্মীকে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) ডাটাবেজে নাম লেখাতে হয়। এজন্য নির্ধারত আবেদনপত্র, দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি এবং পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ বা সিটি করপারেশেন থেকে দেওয়া নাগরিক সদনপত্র লাগে। ডাটাবেজে নাম লেখানোর পর ঢাকা জেলার জনশক্তি কার্যালয়ে গিয়ে আঙ্গুলের ছাপ বা ফিঙ্গার প্রিন্ট দিয়ে স্মার্ট কার্ড নিতে হবে। এখন স্মার্ট কার্ড ছাড়া বিদেশে যাওয়া যায় না।মেডিকেল সনদ: বিদেশে যাওয়ার আগে শ্রমিক গ্রহণকারী দেশগুলোর চাহিদা অনুযায়ী মেডিকেলের সনদ নিতে হয়। দূতাবাস নির্ধারিত ক্লিনিকের মাধ্যমে তা করতে হয়। সাধারণ শারিরীরক যোগ্যতা, রক্ত পরীক্ষা এসব বিষয় দেখা হয় স্বাস্থ্য পরীক্ষায়।বিমানের টিকিটবিদেশে যাওয়ার জন্য কেনা টিকিটে প্লেন ছাড়ার সময় ও এয়ারপোর্টে পৌছানোর সময় লেখা থাকে। এই সময়সূচি ঠিকভাবে বুঝে নিন। পথে কোথাও যাত্রাবিরতি বা ট্রানজিট আছে কিনা সেটিও ভালোভালে জেনে নেওয়া জরুরি।ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা: বিদেশে যাবার সব বিষয় চূড়ান্ত হয়ে গেলে বাড়ির কাছে সুবিধাজনক কোনো বাণিজ্যিক ব্যাংকে দুটি হিসাব খুলুন। একটি নিজের নামে এবং অন্যটি পরিবারের কারও নামে। একটি অ্যাকাউন্টে পরিবারের বা সংসারের খরচের অর্থ পাঠান। আর নিজের অ্যাকাউন্টে বিদেশ থেকেই বাকি টাকা জমাতে পারেন।যাওয়ার কয়েক দিন আগে: বিদেশে যাত্রার কয়েক দিন আগে ভিসা সিলসহ পাসপোর্ট, মেডিকেল সনদ, বিএমইটির বহির্গমন ছাড়পত্র, স্মার্ট কার্ড, চাকরির চুক্তি, যে দেশে যাবেন সেই দেশের বাংলাদেশ দূতাবাসের ঠিকানা—এগুলো যত্ন করে রাখুন।প্রবাসে থাকা অবস্থায়: বিদেশে থাকা অবস্থায় একটি বড় সমস্যা রেমিট্যান্স পাঠানো। মনে রাখবেন, শুধু সরকার অনুমোদিত ব্যাংক, প্রতিষ্ঠান বা মানি একচেঞ্জের মাধ্যমেই টাকা পাঠানো বৈধ। কখনোই হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠাবেন না। কারণ, অবৈধভাবে টাকা পাঠালে ছয় মাস থেকে সাত বছর পর্যন্ত জেলে যেতে হতে পারে। আর বিদেশে থাকা অবস্থায় অবশ্যই সে দেশের প্রচলিত আইনকানুন মেনে চলতে হবে। বিশেষ করে সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে আইন ভাঙলে কঠিন শাস্তির বিধান রয়েছে। কাজেই যে দেশে আছেন, সে দেশের নিয়মকানুন মেনে চলুন। সে দেশের বাংলাদেশ দূতাবাসের নম্বর রাখুন। কোনো প্রয়োজন হলে দূতাবাসে যোগাযোগ করুন।প্রয়োজনীয় কিছু নম্বর ও ঠিকানাজনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি): ৮৯/২, কাকরাইল ঢাকা, টেলিফোন, ৯৩৫৭৯৭২। www. bmet.org.bdবোয়েসেল: ৭১-৭২ এলিফ্যান্ট রোড, ইস্কাটন গার্ডের ঢাকা। ৯৩৬১৫১৫,৯৩৩৬৫৫১ www. boesl.org.bd বায়রা: বায়রা ভবন, ১৩০ নিউ ইস্কাটন রোড, ঢাকা। টেলিফোন: ৮৩৫৯৮৪২, ৯৩৪৫৫৮৭ www.hrexport-baira.orgরামরু: অভিবাসন বিষয়ক বেসরকারি সংস্থা রামরুতে গিয়েও যে কোনো তথ্য পেতে পারেন। ঠিকানা: রামরু,৩/৩-ই, বিজয়নগর, টেলিফোন: ৯৩৬০৩৮, ওয়েবসাইট: www. rmmru.net

Leave a Reply

Your email address will not be published.