গাছের জন্য পথসভা

Spread the love

শরিফুল হাসান

এই ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় একটি পুরোনো স্কুটার নিয়ে ঘুরে বেড়ান তিনি। স্কুটারটির সামনের গ্লাসে লেখা ‘পথসভা’। পেছনে একটি মাইক; আর একটি ব্যাগ থেকে বেরিয়ে আছে বেশ কয়েকটি গাছের চারা। স্কুটারের সামনে-পেছনে দুই দিকেই ফল আর ঔষধি গাছ নিয়ে নানা ধরনের লেখা।
দেখে বেশ কৌতূহল হলো। পিছু নিয়ে দেখা গেল কারওয়ান বাজারেই থেমেছেন। এরপর গাছ নিয়ে মাইকে নানা ধরনের কথা বলতে শুরু করলেন তিনি। কৌতূহলী লোকজনও ভিড় শুরু করলেন।
তিনি নিজের পরিচয় দিলেন ছাদেকুর রহমান। জানালেন তিনি মুক্তিযোদ্ধা। নরসিংদী বাড়ি। ১৬ বছর বয়সে এসএসসি পরীক্ষার্থী থাকা অবস্থায় মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। দেশ স্বাধীন করেছেন। কিন্তু সবুজ শ্যামল যে বাংলাদেশ তিনি চেয়েছিলেন, সেটি হয়নি। চারপাশে ক্রমেই সবুজ কমছে। তাই দুই বছর ধরে ঢাকায় স্কুটার নিয়ে ঘুরে বেড়ান আর গাছ লাগানোর জন্য এভাবে পথসভা করেন।
তবে সব গাছ নয়, শুধু ফল আর ঔষধি গাছ লাগানোর পক্ষেই তাঁর প্রচারণা। কারণ হিসেবে বলেন, ‘দেশের রাস্তাঘাট, শহর-বন্দর সর্বত্র কড়ই, মেহগনি, ইউক্যালিপটাসসহ নানা ধরনের কাঠগাছ। কিন্তু কাঠের গাছ না লাগিয়ে যদি লোকজন ফল আর ঔষধি গাছ লাগাত, তাহলে রাস্তাঘাটসহ দেশের পুরো চেহারাই বদলে যেত। মানুষও ফল পেত।’
ছাদেকুর রহমান পথসভায় কথা বলেন কবিতার মতো। ‘আর লাগাবেন না কাঠগাছ—লাগাবেন শুধু ফুল আর ঔষধি গাছ’, ‘আম জাম কাঁঠাল নিম জলপাই—এসব থেকে কাঠ ফল আর ঔষধ সবই পাই—তবে কেন কড়ই মেহগনি আর ইউক্যালিপটাস লাগাই’? ‘কাঠগাছ থাকবে বনজঙ্গলে—ফল গাছ থাকবে রাজপথ, রেলপথ, সড়কপথ, জনপথ আর বাড়ির অঙ্গনে’। এ রকম ছন্দে ছন্দে তিনি তাল, খেজুর, আম, জাম, কাঁঠালসহ নানা ফলের গুণও বর্ণনা করেন।
গাছ লাগানোর পক্ষে প্রচারণার কারণ সম্পর্কে ছাদেকুর রহমান বলেন, একদম কিশোর বয়স থেকেই তিনি গাছ লাগাতেন। মুক্তিযুদ্ধ করে দেশে ফিরে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেন। যখনই সুযোগ পেতেন ফল আর ঔষধি গাছ লাগাতেন। চাকরি থেকে অবসরের পর তাঁর মনে হলো, মানুষকে ফল আর ঔষধি সম্পর্কে জানাবেন। তাই স্কুটার নিয়ে নেমে পড়েছেন।
ফল আর ঔষধি গাছই কেন লাগাতে বলছেন—জানতে চাইলে ছাদেকুর রহমান বলেন, ‘আমাদের দেশে রাস্তার দুই ধারে সড়কে যেসব গাছ লাগানো হয়, এগুলোর বেশির ভাগই কাঠগাছ। কাঠ ছাড়া এগুলোর কোনো উপকারিতা নেই। কিন্তু গত ৪৫ বছরে যদি রাস্তার দুই ধারে ফলের গাছ লাগানো হতো, দেশের চেহারাই বদলে যেত। মানুষেরও ফলের অভাব হতো না। মানুষকেও ফরমালিন দেওয়া ফল খেতে হতো না।’
ব্যক্তিজীবনে বিবাহিত ছাদেকুর রহমানের তিন মেয়ে ও এক ছেলে। ছেলে বিবিএ পাস করে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন। এক মেয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। বাকি দুজন লেখাপড়া করছে। পরিবারের সবাইকেও তিনি গাছ লাগাতে উৎসাহিত করেছেন।
ছাদেকুর রহমান বলেন, ‘আমি এমন একটা দেশের স্বপ্ন দেখি, যেখানে হাজার হাজার লাখ লাখ ফলের গাছ থাকবে। বাচ্চা থেকে শুরু করে বুড়োরা সবাই যে যার ইচ্ছা ফল খাবে। মানুষজন শুধু গাছ লাগাবে। পুরো দেশটা হবে সবুজ।’

Leave a Reply

Your email address will not be published.