শরিফুল হাসান
কুয়েতের কারাগারে ১২ জন নারীকর্মীসহ ২৯০ জন বাংলাদেশি মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। তাঁদের কখন কীভাবে দেশে ফেরত পাঠানো হবে, তা এখনো নিশ্চিত নয়। ভিসার মেয়াদ না থাকায় পুলিশ তাঁদের গ্রেপ্তার করেছে। এই কর্মীদের অনেকেই ছয়-সাত বছর ধরে জেলে আছেন।গত ২০ জানুয়ারি কুয়েতের পার্লামেন্টে এসব তথ্য জানিয়েছেন সেদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ জাবের আল খালেদ আল-সাবাহ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ জাবের পার্লামেন্টে বলেন, কুয়েতের বিভিন্ন কারাগারে ৩৫০ জন নারী, ২৬ শিশুসহ এক হাজার ১৮১ জন বিভিন্ন দেশের নাগরিককে বহিষ্কারের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশির সংখ্যা বেশি। তিনি পরিসংখ্যান দিয়ে বলেন, বাংলাদেশের ১২ জন নারীসহ ২৯০ জন, ভারতের ২৪১ জন পুরুষ ও ৫৭ জন নারী, শ্রীলঙ্কার ৮৮ জন নারীসহ ১১৫ জন, মিসরের দুজন নারীসহ ১০৬ জন, পাকিস্তানের ৭৯ জন পুরুষ এবং ফিলিপাইনের ৬৮ জন নারী ও ছয়জন পুরুষ রয়েছেন।কুয়েতের একজন প্রবাসী বাংলাদেশি সাংবাদিক কামরুল হাসান প্রথম আলোকে জানান, সঠিক তথ্য জানা না গেলেও ধারণা করা হচ্ছে, কুয়েতের বিভিন্ন জেলে হাজারখানেক বাংলাদেশি আছেন। তাঁদের মধ্যে অনেকে বিভিন্ন অপরাধের কারণে সাজা ভোগ করছেন, অনেকে বিচারাধীন। সেখানে আটক নারীদের অবস্থা অবর্ণনীয়। অভিবাসন বিভাগের মাধ্যমে তাঁদের দেশে পাঠানো হতে পারে। তবে তাঁদের অনেকেই কুয়েতে থেকে যাওয়ার পক্ষে। তাঁরা তাঁদের মুক্তির জন্য দূতাবাসের সহযোগিতা কামনা করেছেন। দূতাবাস আইনি সহযোগিতা দিলে বহু বাংলাদেশি নাগরিক নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে কুয়েতে থেকে যেতে পারবেন।এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুয়েতের বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সচিব (শ্রম) কে এম আলী রেজা প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশের ১২ জন নারীসহ ২৯০ জন বন্দী কুয়েতের বিভিন্ন জেলে রয়েছেন বলে তাঁদের কাছেও সুনির্দিষ্ট তথ্য আছে। তাঁদের মুক্তির জন্য দূতাবাস আন্তরিক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।সরকারি হিসাব অনুযায়ী, কুয়েতে বর্তমানে চার লাখ ৭৯ হাজার বাংলাদেশি আছেন। ২০০৬ সালের অক্টোবর থেকে দেশটিতে বাংলাদেশি লোক পাঠানো বন্ধ রয়েছে। কাজের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় অনেকেই সেখানে ভিসা নবায়ন করতে পারছেন না। অনেক শ্রমিকের বেতনও বন্ধ। এর মধ্যে আল-আরবাজ নামের একটি ক্লিনিং কোম্পানিতেই রয়েছেন এ ধরনের প্রায় ১২ হাজার বাংলাদেশি শ্রমিক।কুয়েত সরকার গত ১৪ ডিসেম্বর অবৈধ বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে। ঘোষণা অনুযায়ী, অবৈধভাবে যাঁরা জেলে আছেন, তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হবে। অবৈধভাবে থাকার জন্য যে জরিমানা হয়েছে, তাও লাগবে না। এ ছাড়া তিন মাসের মধ্যে অবৈধ শ্রমিকেরা যদি ভালো কোনো চাকরি পান, তাহলে জরিমানা ছাড়াই তাঁরা তা করতে পারবেন। কিন্তু তিন মাসের মধ্যে যাঁরা চাকরি পাবেন না তাঁদের দেশে ফিরতে হবে। কুয়েত তিন মাস পর অবৈধ শ্রমিকদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তার অভিযান শুরুরও ঘোষণা দিয়েছে।



