ইরাকের শ্রমবাজার ঘিরে অসাধু তৎপরতা, ভুয়া চাহিদাপত্র

Spread the love

শরিফুল হাসান

মালয়েশিয়ার মতো এবার ইরাকের শ্রমবাজার ঘিরে অসাধু তৎপরতা শুরু হয়েছে। সম্প্রতি প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে ইরাক থেকে এক হাজার ১৩০ জন কর্মী নিয়োগের চাহিদাপত্র এসেছে। কিন্তু মন্ত্রণালয় সেখানে খোঁজ নিয়ে এই চাহিদাপত্রের কোনো সত্যতা পায়নি।মন্ত্রণালয় মনে করছে, এই চাহিদাপত্র ভুয়া। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। তবে যে প্রতিষ্ঠান এই চাহিদাপত্র এনেছে, তারা দাবি করছে, ইরাকের বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে এটি স্বাক্ষর করে আনা হয়েছে। কিন্তু ইরাকে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত বলেছেন, তিনি এমন কোনো চাহিদাপত্রে স্বাক্ষর করেননি।মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গত মাসে (মে) ইরাকের দুটি কোম্পানিতে এক হাজার ১৩০ জন কর্মী নিয়োগের দুটি চাহিদাপত্র মন্ত্রণালয়ে আসে। চাহিদাপত্র দুটি এনেছে সাত্তার ওভারসিজ অ্যান্ড বিজনেস ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড নামের জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান।এ ব্যাপারে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব জাফর আহমেদ খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইরাক থেকে ওই চাহিদাপত্র আসার পরই আমরা দূতাবাসের শ্রম কাউন্সেলরের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি আমাদের জানান, ওই সময় তিনি ইরাকে ছিলেন না। এমন কোনো চাহিদাপত্রে তিনি সই করেননি। এমনকি বিষয়টি তাঁর জানাও নেই।’সচিব বলেন, ‘ভুয়া ওই চাহিদাপত্রে ইরাকে নিযুক্ত বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূতের নামের আদ্যক্ষর (ইনিশিয়াল) থাকলেও সিল নেই। আমরা রাষ্ট্রদূতের কাছেও বিষয়টি জানতে চেয়েছি।’এ বিষয়ে ইরাকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত কামাল উদ্দিন মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাধারণত শ্রমিক নিয়োগের চাহিদাপত্রে দূতাবাস কখনো সই করে না। তবে কর্মীদের নামে ভিসা বের হলে দূতাবাস তখন তাদের কর্মস্থল ঠিক আছে কি না, এসব খোঁজখবর নিয়ে অনুমতি দেয়। তখন শ্রম কাউন্সিলর তাতে সই করেন। তবে ওই চাহিদাপত্রে আমি বা শ্রম কাউন্সিলর কেউ সই করিনি।’চাহিদাপত্রে থাকা আদ্যক্ষর প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘এখানে দূতাবাস খোলার আগেই অনেক বাংলাদেশি চলে এসেছে। তাদের মধ্যে অনেক দালালও আছে। একটি চক্রের কাছে দূতাবাসের ভুয়া সিল-স্বাক্ষর আছে। তারা এ কাজ করতে পারে। কারণ ওই চাহিদাপত্রে যে সিল ছিল, সেটি আসল নয়।’সাত্তার ওভারসিজের বিরুদ্ধে অভিযোগ: কয়েকজন ব্যক্তি প্রথম আলোর কাছে অভিযোগ করেন, ইরাকে কর্মী পাঠানোর নামে সাত্তার ওভারসিজ লোকজনের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছে। বিষয়টি যাচাই করতে ইরাকে যেতে ইচ্ছুক পরিচয়ে মুঠোফোনে সাত্তার ওভারসিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুস সাত্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, তাঁরা ইরাকে লোক পাঠাচ্ছেন। এক সপ্তাহ পর তিনি তাঁর অফিসে যোগাযোগ করতে বলেন।এরপর সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে ভুয়া চাহিদাপত্রের বিষয়ে জানতে চাইলে আবদুস সাত্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আপনাকে কে বলেছে ওই চাহিদাপত্র ভুয়া? তাঁর নাম বলেন। আমার লোকজন ইরাকে গিয়ে খোঁজখবর নিয়ে ওই চাহিদাপত্র এনেছে। রাষ্ট্রদূত সেগুলোতে সই করেছেন। এর পরই আমরা মন্ত্রণালয়ে দুটি চাহিদাপত্র জমা দিয়েছি। এখন মন্ত্রণালয় যদি ছাড়পত্র দেয়, তাহলেই আমরা লোক পাঠাতে পারব।’এই এক হাজার ১৩০ জনের চাহিদাপত্রের বিষয়ে কথা হয় ইরাকে বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম কাউন্সিলর জিয়াদুর রহমানের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বসরায় একটি কোম্পানিতে নিয়োগের জন্য ৩০০ লোকের চাহিদাপত্র নেওয়া হয়েছে। আমি ওই কোম্পানির মালিকের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি বলেছেন, একজনের কাছে তিনি ৫০ জন লোক চেয়েছেন। কিন্তু ৩০০ লোকের চাহিদাপত্র সম্পর্কে তিনি কিছু জানেন না। আর যে কোম্পানিতে নিয়োগের জন্য ৮৩০ জনের চাহিদাপত্র আনা হয়েছে, সেই নামে কোনো কোম্পানি এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি। কাজেই পুরো বিষয়টিকে জালিয়াতি বললে ভুল হবে না।’প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ১৯৯০ সালে উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় ইরাকে বাংলাদেশি জনশক্তি রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়। ২০০৯ সালের শেষ দিকে আনুষ্ঠানিকভাবে ইরাকে আবার লোক পাঠানো শুরু হয়। ২০১০ সালে দুই হাজার ২৮৮ জন লোক ইরাকে গেলেও এরপর দুই বছর ধরে সেখানে লোক পাঠানো বন্ধ বললেই চলে। গত দেড় বছরে মাত্র ২৫০ জন ইরাকে গেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.