শরিফুল হাসান
ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটির ঘোষিত ৪ এপ্রিলের হরতালে প্রধান দুই বিরোধী দল বিএনপি বা জামায়াতে ইসলামী কেউই সমর্থন দেবে না। এমনকি অনেক ইসলামি দলও এই হরতালের বিপক্ষে। তবে ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটি বলছে, বিএনপি বা জামায়াতের সমর্থন না পেলেও তারা হরতাল করার ব্যাপারে অনড়।বিষয়টি নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করতেও রাজি নয় তারা।গত ৭ মার্চ মন্ত্রিসভায় জাতীয় নারী উন্নয়ননীতি ২০১১ অনুমোদিত হওয়ার পরদিন উত্তরাধিকার সম্পদে নারীকে পুরুষের সমান অধিকার দেওয়া হয়েছে—এ দাবি করে হরতাল ডাকে ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটি। তারা প্রস্তাবিত নারী উন্নয়ন নীতিমালা, ফতোয়াবিরোধী হাইকোর্টের রায় এবং শিক্ষানীতি বাতিলের দাবি করছে।তবে হরতাল আহ্বানের পর তিন সপ্তাহ চলে গেলেও বিএনপি বা জামায়াতের কেউই এতে সমর্থন দেয়নি।গতকাল শুক্রবার দুপুরে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত যৌথসভার পর এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এটা ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটির দলীয় কর্মসূচি। এ কর্মসূচিতে দলীয়ভাবে সমর্থন দেওয়ার কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বিএনপি এ বিষয়ে কোনো কথা বলেনি, বলবেও না।জামায়াত এ হরতালে সমর্থন দেবে কি না জানতে চাইলে দলটির ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলাম সম্প্রতি প্রথম আলোকে বলেন, নারী উন্নয়ন নীতিমালা নিয়ে তারা সরকারের কাছ থেকে ‘পরিষ্কার ও আনুষ্ঠানিক’ বক্তব্য শুনতে চান। এর পরই সিদ্ধান্ত নেবেন। ফজলুল হক আমিনীর ডাকা হরতালে জামায়াতের সমর্থন আছে কি না জানতে চাইলে গতকাল তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাদের কোনো মন্তব্য নেই।’বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলনের ঢাকা মহানগর আমীর এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এ টি এম হেমায়েত উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘নারীনীতি নিয়ে আলেম-ওলামার অবস্থান একই। কিন্তু ৪ এপ্রিলের হরতালের পক্ষে আমাদের কোনো সমর্থন নেই।’বিএনপি ও জামায়াতের সমর্থন ছাড়া হরতাল পালন হবে কি না প্রশ্ন করা হলে ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটির চেয়ারম্যান ফজলুল হক আমিনী প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিএনপি বা জামায়াতকে সমর্থন দিল কি দিল না তাতে কিছু যায় আসে না। দল দুটি রাজনৈতিক নানা কারণেই হয়তো হরতালের ব্যাপারে তাদের সমর্থন দিচ্ছে না। তবে আমরা এই হরতাল পালন করবই। এটা আমাদের দায়িত্ব।’ হরতাল প্রত্যাহারের কোনো চিন্তা আছে কি না জানতে চাইলে আমিনী নেতিবাচক জবাব দেন। তিনি বলেন, ‘সরকারের অনেক লোকই আলোচনা করতে চায়। কিন্তু এই নীতিমালা বাতিল বা স্থগিত না হওয়া পর্যন্ত সরকারের সঙ্গে কোনো আলোচনাও হবে না। হরতাল প্রত্যাহারের তো কোনো প্রশ্নই আসে না।’ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটির দাবি, প্রস্তাবিত নারীনীতি সম্পত্তির উত্তরাধিকার সম্পর্কিত ধারা মুসলিম উত্তরাধিকার আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। কিন্তু সরকার তা অস্বীকার করেছে। মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী শিরীন শারমিন চৌধুরী ৯ মার্চ এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেন, এই নীতিতে উত্তরাধিকার সূত্রের সম্পত্তিতে নারীকে সমানাধিকার দেওয়া নিয়ে কোনো কথা উল্লেখ করা হয়নি। মুসলিম উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী সম্পত্তি যেভাবে বণ্টন হওয়ার কথা সেভাবেই হবে।সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে উপার্জন, উত্তরাধিকার, ঋণ, ভূমি এবং বাজার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে নারী যে সম্পদ অর্জন করবে তার ওপর তার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের অধিকার দেওয়ার কথাই কেবল বলা হয়েছে এ নীতিতে।



