আফ্রিকায় নতুন শ্রমবাজার, নয়টি দেশে লোক পাঠানোর প্রক্রিয়া

Spread the love

শরিফুল হাসান

বাংলাদেশের নতুন শ্রমবাজার হতে যাচ্ছে আফ্রিকা। জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আফ্রিকায় বাংলাদেশের দক্ষ ও অদক্ষ উভয় ধরনের শ্রমিকদের চাহিদা বাড়ছে। এ কারণে সরকার আফ্রিকার নতুন বাজার ধরতে জোর কূটনৈতিক তত্পরতা শুরু করেছে।আফ্রিকার দেশগুলোর মধ্যে লিবিয়া ও মরিশাসের বাজার পুরোনো। এই দুটি দেশ ছাড়াও সরকার দক্ষিণ আফ্রিকা, আলজেরিয়া, সুদান, বতসোয়ানা, অ্যাঙ্গোলা, জিম্বাবুয়ে, মালি, উগান্ডা ও তানজানিয়ায় লোক পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এই দেশগুলো যেমন শ্রমিক নিতে চায়, তেমনি পেশাদার চিকিত্সক, নার্স, প্রকৌশলী ও স্থপতি নেওয়ার ব্যাপারেও আগ্রহ প্রকাশ করেছে।পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (সেন্ট্রাল এশিয়া ও আফ্রিকা) এম ওয়াহিদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানি মূলত মধ্যপ্রাচ্যকেন্দ্রিক। নতুন বাজার আর বাড়েনি। এ কারণে সরকার আফ্রিকায় নতুন বাজার খুঁজছে। আফ্রিকার দেশগুলো বাংলাদেশ থেকে দক্ষ ও অদক্ষ দুই ধরনের শ্রমিক নেওয়ার ব্যাপারেই আগ্রহ প্রকাশ করেছে।তিনি জানান, আফ্রিকার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশকে প্রথম স্বীকৃতি দেয় মরিশাস। দেশটির স্বাধীনতার নায়ক ও জনক স্যার এস রামগোলাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বন্ধু ছিলেন। তাঁর ছেলে নবীনচন্দ্র রামগোলাম বর্তমানে সে দেশের প্রধানমন্ত্রী। কাজেই এই দেশটির সঙ্গে সরকার নতুন করে কূটনেতিক সম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহী। দেশটি বাংলাদেশ থেকে চিকিত্সক, প্রকৌশলী ও স্থপতি নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এ ছাড়া আলজেরিয়ায় বাংলাদেশের সাড়ে তিন হাজার শ্রমিক পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। বতসোয়ানায় গেছেন বাংলাদেশের ৮০ জন চিকিত্সক। সেখানে আরও চিকিত্সক পাঠানোর পরিকল্পনা আছে। সুদান, জিম্বাবুয়ে, মালি, উগান্ডা ও তানজানিয়ায় লোক পাঠানোর প্রক্রিয়াও চলছে। এম ওয়াহিদুর রহমান কিছুটা হেসে বলেন, ‘একসময় আমাজান জঙ্গলেও পাওয়া যাবে বাংলাদেশের দক্ষ শ্রমিক, সেটাই আমরা চাই।’সরকারি হিসাব অনুযায়ী, আফ্রিকার অন্য দেশ লিবিয়ায় ১৯৭৬ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত ৫৯ হাজার ৯৮০ জন লোক পাঠানো হয়েছে। লিবিয়ার বাংলাদেশের শ্রম কাউন্সিলর আকবর হোসাইন জানান, বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার কারণে যেখানে বেশির ভাগ দেশেই লোক পাঠানো যাচ্ছে না, সেখানে গত নয় মাসে ১২ হাজার লোক লিবিয়া এসেছেন। বাংলাদেশের কিছু অসাধু জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের কারণে এখানে বেশ কিছু সমস্যা হচ্ছে। এগুলো কাটিয়ে উঠতে পারলে ভবিষ্যতে এই দেশটি আরও সম্ভাবনাময় হয়ে উঠবে।বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) যুগ্ম মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী বলেন, আফ্রিকার বাজার ধরতে চাইলে দক্ষিণ আফ্রিকা, মরিশাস বা সহজে যেসব দেশের সঙ্গে যোগযোগ করা যায়—এমন কয়েকটি দেশে বাংলাদেশের দূতাবাস দরকার। দূতাবাস থাকলে বাজার ধরতে সুবিধা হয়।জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ বুর্যোর (বিএমইটি) মহাপরিচালক খোরশেদ আলম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, আফ্রিকার দেশগুলো বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানির জন্য বিশাল সম্ভাবনা হতে পারে। কিন্তু এখানে বাংলাদেশের দূতাবাস বা শ্রম কাউন্সিলর নেই। তাই নতুন বাজার খোঁজা কঠিন। তিনি বলেন, এমনিতেই লিবিয়া ও মরিশাসে প্রচুর লোক আছে। আলজেরিয়াসহ কয়েকটি নতুন দেশে লোক পাঠানো আরম্ভ হয়েছে। এই বাজারগুলোর পাশাপাশি বারকিনাফাসোর পাশে এটি বিশাল কৃষিশিল্প গড়ে উঠেছে। সেখানেও লোক পাঠানো সম্ভব। দক্ষিণ আফ্রিকাতেও একটি সম্ভাবনা হতে পারে।বায়রার সভাপতি গোলাম মোস্তফা প্রথম আলোকে বলেন, আফ্রিকার দেশগুলোয় বাংলাদেশের ভাবমূর্তি খুবই ভালো। দেশগুলো প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ। ফলে আফ্রিকা বিশাল বাজার হতে পারে। মরিশাস, সুদান, আলজেরিয়া, লিবিয়াসহ অনেক দেশই বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি নিতে আগ্রহী। নিয়মিত এই যোগাযোগ করা গেলে জনশক্তি খাত আরও সমৃদ্ধ হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.