শরিফুল হাসান
পর্যটন সক্ষমতা বা প্রতিযোগিতার (টিটিসিআই) দিক থেকে ১৪৪টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ১১৮। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে দেশে পর্যটনের প্রতি মানুষের আগ্রহ বেড়েছে। তবে অবকাঠামোগত সমস্যা, নীতিনির্ধারকদের আন্তরিকতার, পেশাদারিত্ব, দক্ষতা ও প্রচারের অভাবের কারণে সম্ভাবনাময় এ খাতটি পিছিয়ে আছে। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী পর্যটকের সংখ্যা প্রায় ৯০ কোটি, ধরা হচ্ছে ২০২০ সাল নাগাদ এ সংখ্যা দাঁড়াবে ১৬০ কোটি। পর্যটন বিশেষজ্ঞদের মতে, এ বিপুলসংখ্যক পর্যটকের প্রায় ৭৩ শতাংশ ভ্রমণ করবে এশিয়ার দেশগুলো। বাংলাদেশ যদি বিশাল এ বাজার ধরতে পারে, তা হলে পর্যটনের হাত ধরেই বদলে যেতে পারে দেশের অর্থনীতি। পর্যটন করপোরেশনের তথ্য অনুযায়ী, এখন প্রতিবছর গড়ে দেড় লাখ বিদেশি পর্যটক আসে। এই বাস্তবতার মধ্যে আজ বৃহস্পতিবার সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে বিশ্ব পর্যটন দিবস। চলতি বছরও ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম ‘ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম কম্পিটিটিভনেস ইনডেক্স (টিটিসিআই)’ শীর্ষক তালিকা প্রকাশ করেছে, তাতেই বাংলাদেশের অবস্থান ১১৮তম। জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনায় পর্যটনশিল্পকে অগ্রাধিকার দেওয়া, ভিসা-প্রক্রিয়া সহজ করা, অবকাঠামো ও নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করা, পরিকল্পিত প্রচারণা চালানো ও দেশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠা করা গেলে সারা দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা দর্শনীয় স্থানগুলো দেশি-বিদেশী আরও মানুষকে আকৃষ্ট করবে। াবহেলায় পর্যটন খাত নিয়ে সরকার বাস্তবমুখী কী করছে, জানতে চাইলে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব খোরশেদ আলম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি। জাতীয় পর্যটন বোর্ড গঠন করা হয়েছে। দেশি পর্যটকেরা যেন কম খরচে আমাদের পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে গিয়ে ভালো পরিবেশে থাকতে পারে, সেই উদ্যোগ নিয়েছি। বিদেশি পর্যটকেরা যেন বাংলাদেশে আসতে পারে, সে জন্য দূতাবাসগুলোকে আরও সক্রিয় করা এবং অন-অ্যারাইভাল ভিসার সুবিধা বাড়ানো হয়েছে।’ বিদেশে প্রচার নেই: বিশ্বের ৭০টি দেশের নাগরিকদের জন্য বাংলাদেশে আসতে ‘অন-অ্যারাইভাল ভিসা’ সুবিধা আছে। কিন্তু তার পরও এসব দেশের নাগরিকদের বাংলাদেশে বেড়াতে আসার জন্য উৎসাহিত করতে পারছে না দূতাবাসগুলো।জাতীয় পর্যটন বোর্ডের সদস্য এবং আটাবের সহসভাপতি এ কে এম বারী মনে করেন, নিরাপত্তা, অবকাঠামো, অনুন্নত যোগাযোগব্যবস্থা প্রধান সমস্যা নয়। তার মতে, দেশের পর্যটনকেন্দ্রগুলোকে বিশ্বব্যাপী পর্যটকদের কাছে ঠিকমতো তুলে ধরতে ব্যর্থ হচ্ছে দূতাবাসগুলো, এটাই প্রধান সমস্যা।কেবলই নীতিমালা: ১৯৯২ সালে করা প্রথম জাতীয় পর্যটন নীতিমালায় বলা হয়েছিল, বিদেশি পর্যটকদের আধুনিক ও চিত্তবিনোদনের সব সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করা হবে। কক্সবাজার ও সুন্দরবনের জন্য নেওয়া হবে মহাপরিকল্পনা। পর্যটন খাত বিকাশে বাৎসরিক ও পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে।তবে পর্যটনশিল্পের বিকাশ ও উন্নয়নের জন্য নেওয়া এই পরিকল্পনাগুলো কাগজে-কলমেই থেকে গেছে। প্রথম পরিকল্পনার ১৮ বছর পর জাতীয় পর্যটন নীতিমালাটি হালনাগাদ করে জাতীয় পর্যটন নীতিমালা-২০১০ করেছে সরকার। আগের নীতিমালায় যা করার কথা ছিল, তার সবই স্থান পেয়েছে নতুন নীতিমালায়ও। পর্যটন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘ সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার আর অনন্য ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনসহ অপার সৌন্দর্যের অসংখ্য স্থান থাকার পরও পর্যটন খাতকে এগিয়ে নিতে পারছে না সরকার। এর অন্যতম কারণ, নীতিনির্ধারকদের অবহেলা। পর্যটন খাতে দক্ষ জনবলের অভাবের কথা উল্লেখ করে জাতীয় পর্যটন বোর্ডের সদস্য এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের চেয়ারম্যান মুবিনা খোন্দকার বলেন, ‘আমাদের সব নীতিমালা কাগজে-কলমে। এগুলো কবে বাস্তবায়ন হবে, কারা বাস্তবায়ন করবে সে ব্যাপারে সরকারের কোনো উদ্যোগ নেই।’মহাপরিকল্পনা আছে, বাস্তবায়ন নেই: জাতীয় পর্যটন নীতিমালায় সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার, সাগরকন্যা কুয়াকাটা, টেকনাফ সমুদ্রসৈকত, সেন্ট মার্টিন, সোনাদিয়া দ্বীপসহ অন্যান্য সমুদ্রসৈকত ও দ্বীপগুলোকে কেন্দ্র করে আদর্শ অবকাশ পর্যটন গন্তব্য সৃষ্টি, সৈকতভিত্তিক ক্লাব ও আন্তর্জাতিক মানের রিসোর্টসহ প্রয়োজনীয় সুবিধাদি সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে।সিলেটের জাফলং, মাধবকুণ্ড, শ্রীমঙ্গল, লাউয়াছড়া, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড, সুনামগঞ্জ-সিলেটের হাওর, নেত্রকোনার বিরিসিরি, পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা তীরবর্তী আকর্ষণীয় স্পট ও পার্বত্য চট্টগ্রামে পর্যটনের জন্য নানা উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলা আছে। কিন্তু বাস্তবে উল্লেখযোগ্য কোনো পদক্ষেপ নেই।



