পর্যটক টানার ই-ভিসা চালুর প্রস্তাবই আটকে আছে
শরিফুল হাসান
২০১৬ সালকে পর্যটন বর্ষ ঘোষণা করেছে সরকার। এর মাধ্যমে ১০ লাখ বিদেশি পর্যটককে আকৃষ্ট করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। কিন্তু বিদেশি পর্যটক টানতে ইলেকট্রনিক ভিসা (ই-ভিসা) চালুর প্রস্তাবই এখনো আটকে আছে।
প্রতিবেশী দেশ ভারত গত বছর থেকে এ সুবিধা চালু করেছে। বিদেশি পর্যটক টানতে চায়, এমন সব দেশ আগেই এ সুবিধা চালু করেছে। কারণ, ভিসার বিষয়টি নিশ্চিত না থাকলে অনেক পর্যটকই আসতে আগ্রহী হন না।
পর্যটন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, পর্যটন-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা অনেক দিন ধরেই বিদেশিদের জন্য ভিসার প্রক্রিয়া সহজ করার দাবি জানাচ্ছেন। সর্বশেষ গত মার্চ মাসে জাতীয় পর্যটন পরিষদের তৃতীয় সভায় পর্যটন খাতকে এগিয়ে নিতে ই-ভিসা, অন অ্যারাইভাল ভিসা সহজীকরণ এবং মাল্টিপল ভিসার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন। ওই সভায় এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেওয়া হয়। তবে এ বিষয়ে এখনো অগ্রগতি নেই।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ পর্যটন বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আখতারুজ্জামান খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরাও চাই বিদেশিরা খুব সহজে বাংলাদেশে আসুক। ভিসা-সংক্রান্ত কোনো জটিলতা না থাকুক। আমরা গত বছরের শেষে এবং এ বছর দুবার ই-ভিসা চালু করার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি।’
স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান প্রথম আলোকে বলেন, ওই প্রস্তাবের সর্বশেষ অবস্থা তাঁর জানা নেই। তিনি এ বিষয়ে খোঁজ নেবেন।
পর্যটন খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, ভিসার ব্যাপারে নিশ্চিত না হয়ে অনেক পর্যটকই আসতে চান না। সে কারণেই ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, ফিনল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, নিউজিল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমার, ভিয়েতনাম, বাহরাইন ও লাওস এ সুবিধা চালু করেছে। এ সুবিধা চালু হলে একজন বিদেশি পর্যটক অনলাইনে প্রয়োজনীয় ফি দিয়ে তাঁর ছবি ও পাসপোর্ট আপলোড করে ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন। আবেদনের ২৪ থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে তাঁর ই-মেইলে পৌঁছে যাবে ‘ইলেকট্রনিক ট্রাভেল অথরাইজেশন’ (ইটিএ) কিংবা ই-ভিসা। এ ছাড়া মাল্টিপল ভিসা-সুবিধা থাকলে একজন পর্যটক ভারত, নেপাল ঘুরে বাংলাদেশ হয়ে যাওয়া-আসা করতে পারবেন।
টুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টোয়াব) পরিচালক মাসুদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আজকাল বিদেশিরা কোনো দেশে যাওয়ার আগেই সেখানকার ভিসার বিষয়টি নিশ্চিত হতে চান। বাংলাদেশে পশ্চিমা দেশসহ অনেক দেশের জন্য অন অ্যারাইভাল ভিসা-সুবিধা থাকলেও অতীতে ভিসা পায়নি, এমন ঘটনাও আছে। আবার দূতাবাসগুলোও অনেক সময় এভাবে যেতে উৎসাহিত করে না। কাজেই ই-ভিসার ব্যবস্থা থাকলে বিশাল সুবিধা। আমরা অনেক দিন ধরেই বিষয়টি নিয়ে কথা বলছি। ২০১৬ সালকে পর্যটন বর্ষ ঘোষণা করা হয়েছে, এর আগেই বিদেশিদের জন্য এ সুবিধা চালু করা দরকার। আমরা সেই সুবিধা দিয়ে সারা বিশ্বে একটা প্রচারণাও চালাতে পারি।’
বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১১ সালে ৫ লাখ ৯৩ হাজার ৬৬৭ জন এবং পরের বছর ৫ লাখ ৮৮ হাজার ১৯৩ জন বিদেশি পর্যটক এসেছে। তবে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে গত দুই বছরে এই সংখ্যা তিন লাখের নিচে নেমে এসেছে। সরকার পর্যটন খাতে গতি আনতে আগামী বছরকে পর্যটনবর্ষ ঘোষণা দিয়ে ১০ লাখ বিদেশিকে আকৃষ্ট করার পরিকল্পনা নিয়েছে।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব খোরশেদ আলম চৌধুরী বলেন, বিদেশি পর্যটক টানতে মাল্টিপল ও ই-ভিসা খুবই সুবিধা দেবে। এর সঙ্গে বিমানের ব্যবসাও জড়িত। কারণ, একজন বিদেশি তখন বিমানে বাংলাদেশ হয়ে নেপালে যেমন যেতে পারবেন, তেমনি আবার নেপাল থেকে ফেরার পথেও বাংলাদেশ হয়ে ফিরতে পারবেন। পর্যটনের স্বার্থেই দ্রুত এ সুবিধা চালু করা উচিত। তাহলে আগামী বছর ১০ লাখ বিদেশি পর্যটক আনা সহজ হবে।