শরিফুল হাসান
রেলমন্ত্রীর আত্মীয়রা বিনা টিকিটে ট্রেনে চড়েন এটাই তো বিরাট অপরাধ! সেই আত্মীয়দের জরিমানা করার কারণে একজন পরিদর্শকের বরখাস্ত হওয়া তার চেয়ে বড় অপরাধ। ঘটনাগুলো অস্বীকার করা আরেক ধরনের অপরাধ। এই ঘটনাগুলো যে কোন সভ্য দেশে ঘটলে রেলমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হতো! আফসোস দেশটা বাংলাদেশ! তাই মন্ত্রীর আত্মীয়দের টিকিট ছাড়াই ট্রেনে ওঠার পরামর্শ দেন কর্মকর্তারা! তাদের সম্মান দেখিয়ে আবার এসি কামরায় বসানো হয়। গোল বাঁধায় কোথাকার কোন টিটিই! বেচারা মন্ত্রীর শ্যালকদের জরিমানা করেন! ক্ষুব্ধ হন রেলমন্ত্রীর স্ত্রী। বরখাস্ত হন টিকেট পরিদর্শক!এই এক ঘটনায় আমাদের রেলের নীতি নির্ধারকদের চরিত্র ফুটিয়ে তোলে। এই ঘটনায় রেলমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্য আমাকে ভীষণ বিস্মিত করেছে। রেলমন্ত্রী বলেছেন, ওই তিন যাত্রী তাঁর আত্মীয় নন। অথচ এখন পরিস্কার বোঝা যাচ্ছে তিনি সত্য বলেননি। অথচ রেলমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে বলতে পারতেন দেখেন আমার আত্মীয়রাও কিন্তু ট্রেনের টিকিট পান না। কিন্তু তিনি সেটা না করে সত্য লুকালেন। সংবাদ সম্মেলনে রেলমন্ত্রী উল্টো বললেন, ওই টিটিই বিনা টিকিটের যাত্রীদের সঙ্গে অত্যন্ত খারাপ আচরণ করেছেন। ফলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে”। এই কথাগুলো অমাকে ভীষণ বিস্মিত করেছে। যাত্রীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করলে ব্যবস্থা নেওয়া হয়? তাও ঈদের সরকারি ছুটির মধ্যে বরখাস্ত? রেল তাহলে যাত্রীদের কল্যাণের কথা চিন্তা করে? আচ্ছা তাহলে এই যে ঈদের সময় লাখ লাখ মানুষ টিকিটির জন্য কষ্ট পেলেন, স্টেশনে দুর্ভোগ পোহালেন, অনলাইনে টিকিট কাটতে গিয়ে নানা ভোগান্তি পোহালেন, ওয়েবসাইটেও ঢুকতে পারলেন না এসব ঘটনায় কার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে?বাস্তবতা হলো, এই দেশের সাধারণ মানুষের যতো দুর্ভোগ যন্ত্রণাই হোক না কেন আমাদের নীতি নির্ধারকদের কিছু যায় আসে না? কিন্তু তারা যদি হয় অসাধারণ কেউ মানে মন্ত্রীর আত্মীয় এমনকি দূরের কোন শ্যালক শালিকাও তাহলে কিন্তু খবর আছে। একইভাবে এই দেশের কোন সরকারি কমর্কতারা যদি সিস্টেমের বাইরে যেতে চান তাহলে খবর আছে। হাজার কোটি টাকা দুর্নীতি করেন, অনিয়ম করেন কোন সমস্যা নেই, কিন্তু একবার যদি অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করার সামান্যতম চেষ্টাও করেন আপনার কিন্তু খবর আছে। এমনকি ফেসবুকে কোন সরকারি কর্মকর্তা যদি নিরীহ স্ট্যাটাসও দেন তাহলে তাঁর খবর আছে। আপনারা নিশ্চয়ই আলোচিত ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলমের অবস্থা দেখেছেন। পদোন্নতি না পাওয়ার পর ফেসবুকে তিনি শুধু লিখেছিলেন, চাকরিজীবনে যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী অন্যায়-অনিয়মের বিরুদ্ধে লড়েছেন, তাদের বেশিরভাগই চাকরিজীবনে পদে পদে বঞ্চিত ও নিগৃহীত হয়েছেন। এ দেশে অন্যায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়াটাই অন্যায়!শুধুমাত্র এই সত্য কথাগুলো লেখার কারণে আমাদের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় তাঁকে দণ্ড হিসেবে তিরস্কার করেছে। জনপ্রশাসন বলছে, একজন সরকারি কর্মচারী হয়ে সরকার ও কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করায় জনপ্রশাসনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে! আমার ভীষণ অবাক লাগে! এই দেশে প্রশাসনের ভাবমুর্তি যদি এতোটুকুও টিকে থাকে, কেউ যদি প্রশাসনের ভাবমুর্তি উজ্জ্বল করে থাকে তাহলে সেটা সারোয়ার আলমের মতো সৎ কর্মকর্তারা করে থাকেন। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রলালয়ে সারাক্ষণ মানুষটা মানুষের সেবা করছেন। দিন নেই রাত নেই সারাক্সণ কাজ করেন। অথচ তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়। আর যারা ঘুষ খান, অনিয়ম করেন তাদের বিরুদ্ধে বেশিরভাগ সময় কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। তখন জনপ্রশাসনের ভাবমুর্তিও যায় না! ভীষণ আফসোস লাগে! গতবছর আমি ডেইলি স্টারে একটা কলাম লিখেছিলাম। তাতে লিখেছিলাম, ২৭তম ব্যাচের প্রশাসনের যে কয়েকজন কর্মকর্তা সততা ও কাজ দিয়ে দেশবাসীর ভালোবাসা পেয়েছিলেন, সারোয়ার আলম নিশ্চয়ই তাদের শীর্ষে থাকবেন। অথচ ব্যাচের ২৪০ জন পদোন্নতি পেলেও দেশবাসীর কাছে দারুণ সৎ বলে পরিচিত সারোয়ার আলমের পদোন্নতি হয়নি। এর মাধ্যমে যারা আসলেই সৎভাবে কাজ করতে চায়, কী বার্তা পায় তারা? শুধু কি সারোয়ার আলম? প্রশাসনের অধিকাংশ সৎ কর্মকর্তাকে বোধহয় একই ধরনের যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এই যেমন অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মাদ মুনীর চৌধুরী। এই দেশের প্রশাসনের অসাধারণ কিছু সৎ কর্মকর্তার নাম জানতে চাইলে বলতে হবে মুনীর চৌধুরীর নাম। যখন যেখানে গিয়েছেন, দারুণ সাহসের সঙ্গে দেশসেবা করেছেন। চট্টগ্রাম বন্দর, পরিবেশ অধিদপ্তর, সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তর, মিল্ক ভিটা ও ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরণ কর্তৃপক্ষে দায়িত্ব পালনের সময় তার দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে প্রায় চার হাজার কোটি টাকার ভূমি সম্পদ উদ্ধার ও রাজস্ব আদায় সম্ভব হয়। ডিপিডিসির স্পেশাল টাস্কফোর্স প্রধান হিসেবে রাজধানী ও নারায়ণগঞ্জে দুই কোটি ইউনিট বিদ্যুৎ চুরি ধরেন তিনি। আদায় করেন প্রায় ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছেলে কোকোর মালিকানাধীন লঞ্চকে তিনি বিএনপি আমলেই জরিমানা করেন। বাদ পড়েনি যুদ্ধাপরাধী সাকা চৌধুরীর জাহাজও। বর্তমান সরকারের অনেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যের প্রতিষ্ঠান ও জাহাজকেও তিনি জরিমানা করেছেন। তার একক ভূমিকায় চট্টগ্রাম বন্দরে ভূমি ব্যবস্থাপনা ও জাহাজ চলাচলে বেপরোয়া দুর্নীতি ও বিশৃঙ্খলা কমে আসে। তার নেতৃত্বে পরিবেশ দূষণ-বিরোধী অভিযানে ৭০ শতাংশ দূষণকারী শিল্প-কারখানায় ইটিপি স্থাপিত হয়, উদ্ধার হয় ৭০০ একর কৃষিজমি ও উপকূলীয় বনভূমি। পরিবেশ অপরাধীদের কাছ থেকে আদায় করা হয় ১২৩ কোটি টাকা জরিমানা।২০১৬ সালে তাকে যখন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মহাপরিচালক ও সংস্থাটির এনফোর্সমেন্ট ইউনিটের প্রধান করা হয়, অনেকেই দারুণ আশাবাদী হয়েছিলেন। কিন্তু সেখান থেকে পরে তাকে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এই বদলির পরে দুদক বিটে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন রিপোর্টার্স অ্যাগেইনস্ট করাপশন (র্যাক) এক বিবৃতিতে বলেছিল, দুদকে যোগ দিয়ে ঘুষ নেওয়ার সময় হাতেনাতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে গ্রেপ্তার, সরকারের ভূমি উদ্ধার, প্রভাবশালীদের কাছ থেকে সরকারি গাড়ি উদ্ধারসহ বেশ কিছু কাজ করে ব্যাপক সাড়া ফেলেছিলেন তিনি। দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করতে নিভৃতেই তিনি দুর্নীতিবিরোধী কাজ করছিলেন। এই বদলির ফলে দুদকের সৎ ও নিষ্ঠাবান কর্মকর্তাদের মনোবল ভেঙে যেতে পারে।দুদকের আরেক কর্মকর্তা উপসহকারী পরিচালক (ডিএডি) শরীফ উদ্দিনের ঘটনা নিশ্চয়ই আপনারা ভুলে যাননি। প্রায় সাড়ে ৩ বছর দুদকের চট্টগ্রাম সমন্বিত কার্যালয়ে কর্মরত থাকাকালে এনআইডি সার্ভার ব্যবহার করে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশি ভোটার করার অভিযোগে ২০২১ সালের জুনে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) একজন পরিচালক, ৬ কর্মীসহ আরও ১০ জনের বিরুদ্ধে তিনি মামলা করেছিলেন। শরীফ তার মেয়াদকালে বিভিন্ন খাতে অনিয়মের খবর প্রকাশের জন্য আলোচিত হন। সে সময় তিনি ইসি কর্মকর্তা, কর্মচারী, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (সিসিসি) ওয়ার্ড কাউন্সিলর, ইয়াবা চোরাকারবারি, রোহিঙ্গা, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেডের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ১ ডজনেরও বেশি মামলা করেন।এসবের পুরস্কার? প্রথমে চট্টগ্রাম থেকে পটুয়াখালীতে বদলি, এরপর চাকুরি থেকে বরখাস্ত! মুনীর চৌধুরীর আরেক ব্যাচমেট মাহবুব কবির মিলনের অবস্থাটা দেখুন? কর্মজীবনে অত্যন্ত সৎ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত মিলন। বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে ভেজাল ও নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়ে দেশব্যাপী আলোচিত হয়েছিলেন তিনি। রেলওয়েতে যোগ দিয়ে দুর্নীতি বন্ধ এবং ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি ঠেকাতে বেশকিছু উদ্যোগ ও পরিকল্পনা নিয়েছিলেন। বিশেষ করে ‘জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়া ট্রেনের টিকিট কাটা যাবে না’ এবং ‘টিকিট যার, ভ্রমণ তার’-এ নিয়ম প্রবর্তন করেন তিনি। রেলওয়ের নিয়োগে দুর্নীতি বন্ধেও নিজে ভূমিকা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন আলোচিত এই অতিরিক্ত সচিব।সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতেন মাহবুব কবির। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব থাকাকালে একটি গণমাধ্যমের সঙ্গে কথায় কথায় বলেছিলেন, ১০ জন সৎ কর্মকর্তা নিয়ে একটি উইং গঠন করে তিন মাসের মধ্যে দেশের সব খাতের দুর্নীতি দূর করতে চান।মাহবুব কবির বলেছিলেন, ‘আমি যদি প্রধানমন্ত্রীকে পেতাম তবে বলতাম, স্যার আমাকে ১০ জন অফিসার দিন। মানুষের চোখের পানি দূর করার জন্য সব মন্ত্রণালয়, সব দপ্তর, সব অধিদপ্তরের বিষয়গুলো অ্যাড্রেস করব আমরা এই ১০ জন। কেউ যদি বলে আমরা দুর্নীতি দূর করতে পারব না, কেউ যদি বলে সিন্ডিকেট ভাঙা যায় না, আমি ওটারই চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি- আমার তিন মাস সময়ই যথেষ্ট, যেকোনো ডিপার্টমেন্টের সিন্ডিকেট ভাঙার জন্য।’রাষ্ট্রের উচিত ছিল তাকে এই চ্যালেঞ্জ নিতে সহায়তা করা। ব্যর্থ হলে হয়তো ব্যবস্থা নেওয়া যেত! তিনটা মাসই তো! কিন্তু তার ইচ্ছা তো পূরণ হয়নি, এই কথা বলার পর এক সপ্তাহের ব্যবধানে তাকে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এরপর তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়। সেই মামলায় দণ্ড হিসাবে তাকে ‘তিরস্কার’ করে ১ মার্চ প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। সেই তিরস্কার নিয়েই অবসরে যান তিনি। এসব ঘটনায় অসলে কী বার্তা যায়? আপনি ঘুষ খান-দুর্নীতি করেন, তাতে পার পেয়ে যেতে পারেন কিন্তু দুর্নীতির বিরুদ্ধে বললেই জুটবে তিরস্কার। সিন্ডিকেট ভাঙতে চান, পদে পদে বিপদে পড়বেন। ভিন্ন একটা অভিজ্ঞতার কথা বলি। বছর ছয়েক আগে সরকারের এক মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিষ্ঠানে প্রশাসন ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা গুরুত্বপূর্ণ এক দায়িত্বে ছিলেন। সেসময়ের ওই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর ছত্রছায়ায় একটি চক্র দুর্নীতির রাজত্ব কায়েম করেছিল। সাংবাদিক হিসেবে এ নিয়ে আমি অনুসন্ধান করি। অমাকে উল্টো বিরাট অংকের ঘুষের প্রস্তোব দেওয়া হয়। আমি সেটা প্রত্যাখান করি অনেক চ্যালেঞ্জ নিয়ে ওই সিন্ডিকিটের বিরুদ্ধে নিউজ করেছিলাম। বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, যে সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এই দুর্নীতির নেতৃত্ব দানের অভিযোগ ছিল, পরে দেখি যথাসময়ে তিনি পদোন্নতি পান। অথচ যখন যেখানে তিনি কাজ করতে গিয়েছেন, সেখানেই বিতর্কিত ভূমিকার জন্য সমালোচিত হয়েছিলেন। দুদকে তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ ছিল। অথচ তিনি বার বার পুরস্কার পেয়েছেন। সরকাররে সবচয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটা মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আছেন তিনি। আর আর ওই দুর্নীতি বন্ধের বিরুদ্ধে যারা সোচ্চার ছিলেন, তাদের অনেকেরই পদোন্নতি হয়নি। উল্টোদিকে অনিয়মের অভিযোগে শুধু পুরস্কার জুটেছে তাই নয়, ক্ষমতাশালী এমন একজন কর্মকর্তাকে শুদ্ধাচার পুরস্কারও পেতে দেখেছি।মাঝে মাঝে অবাক লাগে, কষ্টও। যে দেশ থেকে হাজার কোটি টাকা পাচার হয়, যেখানে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে সেভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হয় না, সুযোগ পেলেই সাধারণ মানুষকে জিম্মি করা হয়, অধিকাংশ যেখানে স্রোতে গা ভাসান, ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে নানাভাবে নিজের ঘনিষ্ঠতা প্রমাণের চেষ্টা করেন, সেখানে কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী যখন অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করেন সাহসের সঙ্গে, বিনিময়ে কখনো জোটে তিরস্কার, কখনো পদোন্নতি বঞ্চিত হতে হয় আবার কখনো হতে হয় তাৎক্ষনিক বরখাস্ত। এসবের মধ্য দিয়ে আসলে কী বার্তা যায়? একজন কর্মকর্তা দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে চাইলে কেন তাকে তিরস্কৃত হতে হবে? কেন সততার সঙ্গে কাজ করার পরেও পদোন্নতি হবে না? এভাবে চললে ভবিষ্যতে কোন পথে যাবে বাংলাদেশ? রাষ্ট্র ও নীতি নির্ধারকদের কাছে অনুরোধ, সৎ ও যোগ্য সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পুরস্কৃত করুন। মূল্যায়ন করুন। তাদের কাজের সুযোগ দিন। ভালো কাজের মূল্যায়ন না হলে ভবিষ্যতে ভালো কাজ করার আগ্রহ হারানে কর্মকর্তারা। তখন এই প্রশ্নই উঠবে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়াটাই কি অন্যায়?