বিশেষ বিসিএস হচ্ছে, নিয়োগ হবে কেবল কারিগরি ক্যাডারে
শরিফুল হাসান
মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও পোষ্যসহ বিভিন্ন কোটার জন্য একটি বিশেষ বিসিএস নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তবে বিশেষ এই বিসিএসের মাধ্যমে কেবল টেকনিক্যাল ক্যাডারেই লোক নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি)। বিষয়টি নিয়ে আপত্তি তুলেছেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানেরা।আওয়ামী লীগ সরকারের গত আমলের শেষে ২৩তম বিসিএসের মাধ্যমে সর্বশেষ মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য একটি বিশেষ বিসিএস নেওয়া হয়। এরপর আটটি বিসিএস হলেও মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য কোনো বিশেষ বিসিএস নেওয়া হয়নি। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর আবার মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের সন্তানদের পক্ষ থেকে বিশেষ একটি বিসিএস দেওয়ার দাবি ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সরকার মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, পোষ্য, উপজাতি ও অন্যান্য সব কোটায় একটি বিশেষ বিসিএস নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এর মাধ্যমে হাজার দেড়েক পদে লোক নিয়োগ দেওয়া হবে। পিএসসি সূত্র জানিয়েছে, ইতিমধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে বিশেষ ওই বিসিএস নেওয়ার জন্য তাঁদের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় সব ক্যাডারে লোক নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। তবে পিএসসি মন্ত্রণালয়কে বলেছে, বিশেষ এই বিসিএসে সব ক্যাডারে লোক নেওয়া সম্ভব নয়। তাই কেবল কারিগরি (টেকনিক্যাল) ক্যাডারেই লোক নেওয়া যেতে পারে। এর ফলে চিকির্যাসক, কৃষিবিদ ইত্যাদি ধরনের পদেই নিয়োগ হবে।এ বিষয়ে জানতে চাইলে পিএসসির চেয়ারম্যান সা’দত হুসাইন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে একটা নির্দেশনা পেয়েছি। তাতে পিএসসিকে কোটার জন্য একটি বিশেষ বিসিএস নিতে বলা হয়েছে। আমরা এই বিশেষ বিসিএস নেওয়ার জন্য প্রস্তুতি শুরু করেছি।’পিএসসির চেয়ারম্যান বলেন, ‘সরকার হয়তো সব ক্যাডারেই লোক নিয়োগ দিতে চায়। কিন্তু সেটি সম্ভব নয়। আমরা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি, সাধারণ ক্যাডারে লোক নেওয়া যাবে না।’ এর কারণ হিসেবে পিএসসির চেয়ারম্যান বলেন, ‘সব ক্যাডারে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বা কোটায় লোক পাওয়া যায় না। আমাদের অতীতে এ ধরনের অভিজ্ঞতা আছে। ২৩তম বিসিএস ছিল কেবল মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য। ৭০০ পদের জন্য সেবার বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমরা মাত্র ৭১ জন লোক পেয়েছিলাম।’বিশেষ বিসিএসে সাধারণ পদ রাখারও কোনো সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেন চেয়ারম্যান। মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের সংগঠন ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান’ বিশেষ বিসিএস নেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছিল। সংগঠনটির সভাপতি সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘শুধু যদি টেকনিক্যাল ক্যাডারে লোক নেওয়া হয়, তাহলে সেটি পরিহাস ছাড়া আর কিছু নয়। এ দেশে মুক্তিযোদ্ধারা যেমন বঞ্চিত, তেমনি মুক্তিযোদ্ধার সন্তানেরাও বঞ্চিত। মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকায় এই বঞ্চনা আরও বেড়েছে।’সাধারণ ক্যাডারে লোক নিতে না চাওয়াকে ‘ষড়যন্ত্র’ বলে আখ্যা দেন সাজ্জাদ হোসেন। মুক্তিযোদ্ধা কোটায় লোক পাওয়া যায় না—পিএসসির এ যুক্তির জবাবে সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘এটি ডাহা মিথ্যা। মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৩০ শতাংশ কোটা থাকলেও ষড়যন্ত্র করে দেখানো হয় লোক পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু এ দেশের লাখ লাখ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বেকার। আমাদের সংগঠনেরই শত শত ছেলে আছে যারা বেকার। কাজেই আমরা সরকারের কাছে সাধারণ ক্যাডারসহ সব পদে লোক নেওয়ার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। অন্যথায় আমরা আন্দোলনে যাব।’বিশেষ এই বিসিএস সম্পর্কে জানতে চাইলে পিএসসির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (ক্যাডার) আ ই ম নেছারউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় আমাদের চিঠির জবাব দিয়েছে। সিদ্ধান্ত হয়েছে শুধু কারিগরি পদেই নিয়োগের জন্য এই বিসিএসের প্রজ্ঞাপন দেওয়া হবে। এর মাধ্যমে কারিগরি বিভিন্ন পদে কোটায় যেসব পদ খালি আছে সেখানে নিয়োগ দেওয়া হবে।’ পিএসসির চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, জানুয়ারির মধ্যে বিশেষ এই বিসিএসের প্রজ্ঞাপন জারি করা গেলে এটিই হবে ৩২তম বিসিএস। কিন্তু জানুয়ারির মধ্যে তা করা না গেলে সাধারণ বিসিএসই আগে নেওয়া হবে। কারণ সাধারণ বিসিএসের জন্যও শূন্যপদের আবেদন চেয়ে সব মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। যদি সাধারণ বিসিএসের প্রজ্ঞাপন আগে জারি করা হয় তাহলে সেটি হবে ৩২তম বিসিএস। বিশেষ বিসিএস তখন হয়ে যাবে ৩৩তম বিসিএস।