মধুপুর

Spread the love

শরিফুল হাসান

কখনো যদি মাইলের পর মাইল সবুজ দেখতে চান চলে আসতে পারেন মধুপুরে। টাঙ্গাইল জেলার সবুজে পূর্ণ এক উপজেলা এই মধুপুর। এই বাংলাদেশের যেসব এলাকা প্রাকৃতিকভাবে লাখো বছর আগে গড়ে উঠেছে মধুপুর হচ্ছে সেই এলাকা।

গুগলের তথ্য বলছে, লালচে বাদামি অবক্ষেপ দ্বারা প্রায় দশ লাখ বছর আগে গঠিত গঠিত হয়েছে এই মধুপুর। মধুপুর একটি কৃষিপ্রধান অঞ্চল। এই উপজেলার কথা এলেই আসে মধুপুর গড় আর আনারসের কথা মাথায় আসে। দেশের সবচেয়ে বড় পাইকারি আনারসের বাজার বসে মধুপুরে। বাংলাদেশে পরীক্ষামূলকভাবে প্রথম রাবার চাষের সূচনা হয় মধুপুর ও চট্টগ্রাম থেকে। মধুপুরের নামকরণের ইতিহাস সম্পর্কে বেশ কিছু জনশ্রুতি আছে। অঞ্চলটি অতীতকাল থেকে ঘন জঙ্গল ছিল।

জঙ্গলে মৌমাছির চাক থেকে মৌয়ালরা মধু সংগ্রহ করে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করত। বেশি মধু পাওয়া যেতে বিধায় পরবর্তীতে এ অঞ্চলকে মধুপুর নামকরণ করা হয়। প্রাচীনকাল থেকে মধুপুর অঞ্চলটি রাজা ও জমিদাররা শাসন করতেন। ৮৯৮ সালে মধুপুরে থানা প্রতিষ্ঠা করা হয়। ব্রিটিশ শাসনামলে এ এলাকাটি জমিদারগণ শাসন করতেন। ব্রিটিশ শাসনের অবসানের পর ১৯৫০ সালে জমিদারি উচ্ছেদ ও প্রজাস্বত্ব আইন পাশ হয়।

এ আইন অনুসারে ১৯৫১ সালে জমিদারি প্রথা উচ্ছেদ হওয়ার পর মধুপুর স্থানীয় সরকারের অধীনস্থ হয়। ভারত ভাগের পর ১৯৫৫ সালে পূর্ব পাকিস্তান সরকার মধুপুর বনাঞ্চলকে সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা করে এবং ১৯৬০ সালে এখানে মধুপুর উদ্যান গঠন করে। বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৮৩ সালে মধুপুর থানাকে উপজেলায় উন্নীত করা হয়। মধুপুর গড় এলাকার আশেপাশে গারো সম্প্রদায় বসবাস করে।

পারস্পরিক সংঘাত জটিলতা এড়িয়ে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নীতিতে বিশ্বাসী এখানকার মানুষ। ব্রিটিশ শাসনামলে ফকির-সন্ন্যাসী বিদ্রোহের সময় মধুপুর জঙ্গল বিদ্রোহীদের অন্যতম আস্তানা ছিল। ১৭৮২ এ অঞ্চলের পুখুরিয়া নামক স্থানে বিদ্রোহীদের সাথে ব্রিটিশ বাহিনী সংঘর্ষ হয়। পরবর্তীতে মজনু শাহর নেতৃত্বে বিদ্রোহীরা জঙ্গলে আশ্রয় গ্রহণ করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ১৯৭১ সালের ১৩ এপ্রিল পাকিস্তান সেনাবাহিনী এলাকাটি দখল করে। ১৪ এপ্রিল থেকে মুক্তিবাহিনীর সাথে সংঘর্ষ শুরু হয়।

মধুপুরের যুদ্ধে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একজন ক্যাপ্টেনসহ ৫ সেনা নিহত হন। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ের পর ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর মধুপুরকে মুক্তাঞ্চল ঘোষণা করা হয়। ১৯৮৩ সালে মধুপুর থানাকে উপজেলায় উন্নীত করা হয়। শুরুতেই বলেছি আপনার কখনো মাইলের পর মাইল সবুজ দেখতে ইচ্ছে করলে মধুপুর চলে আসবেন।

১৯৮২ সালে মধুপুর বনাঞ্চলকে জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করা হয়। ৪,২৪৪ বর্গ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে অবস্থিত মধুপুর গড় বা শালবনে ঘুরতে এলে দেখবেন শত শত প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণি। আমার অবশ্য সাংবাদিকতার সূত্রে সারাদেশ দেখা হয়েছে। এখন কাজের সূত্রে আবার রিভিশন দেই। আপনারা চাইলে এখানে ঘুরে যেতে পারেন।

বিশেষত এই মে জুন মাসে যখন কী না শালবাগান নতুন পাতায় সজ্জিত হয়। এই সময় বনের ইটের বিছানার রাস্তায় হাঁটলে, রাস্তার দুপাশে সবুজ বনের দৃশ্য আপনাকে মুগ্ধ করবে। শব্দহীন নিঃশব্দ নিথর জঙ্গলে তখন হারিয়ে যেতে মন চাইবে। বৃষ্টিস্নাত এই দিনে মধুপুর থেকে সবাইকে শুভ সকাল।

Leave a Reply

Your email address will not be published.